ছেলে প্রসন্নের চায়ের ব্যবসা ভাল চলছে না, দাবি বাবার। ছবি— সংগৃহীত।
এসএসসি নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন ছেলে প্রসন্ন। তদন্তে প্রকাশ, ভুয়ো নিয়োগের ক্ষেত্রে ‘মিডলম্যানে’র কাজ করতেন ধৃত প্রসন্ন। এই করে অল্প দিনেই বহু অর্থ উপার্জন করেন তিনি। কেনেন একাধিক সম্পত্তি। কিন্তু ছেলে রাজ্যে তোলপাড় ফেলে দেওয়া দুর্নীতির ঘটনায় জড়িত, তা মানতে পারছেন না প্রসন্নের বাবা কৃষ্ণকান্ত রায়।
নারকেলডাঙা মেন রোডের পাশে টালির চালের বাড়িতে ছেলেমেয়েদের মানুষ করেছেন কৃষ্ণকান্ত। নিজে শিক্ষকতা থেকে অবসর নেওয়ার পর গৃহশিক্ষকের সন্ধান দেওয়ার ব্যবসা করতেন। রায় পরিবারের প্রায় সবাই কোনও না কোনও ভাবে শিক্ষাক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত। সে ভাবেই ছেলেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক করিয়েছেন। প্রসন্ন পড়া শেষ করে বিভিন্ন ব্যবসা করেছেন। বাবার বিশ্বাস, সেই করেই নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন ছেলে। তার পর নারকেলডাঙার টালির চালের বাড়ি ছেড়ে সপরিবার গিয়ে উঠেছেন নিউটাউনে।
বর্তমানে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত কৃষ্ণকান্ত বলছেন, ‘‘ছেলে গাড়ি আর হোটেলের ব্যবসা করেছে। সম্প্রতি চায়ের ব্যবসাও শুরু করেছিল। কিন্তু শুনেছি, চায়ের ব্যবসা খুব একটা ভাল চলছিল না।’’ কিন্তু গাড়ির ব্যবসা করে কি নিউটাউনে পেল্লায় ভিলা কেনা যায়? কৃষ্ণকান্তের কথায়, ‘‘প্রসন্ন কষ্ট করে গাড়ির ব্যবসা দাঁড় করিয়েছে। সেখান থেকে উপার্জন করা টাকায় বাড়ি কিনেছে।’’
উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন পর্যটন ক্ষেত্রে প্রসন্নের হোটেল আছে। ২০০২ থেকে গাড়ির ব্যবসা শুরু। সিবিআইয়ের দাবি, মূলত ‘মিডলম্যানে’র কাজ করতেন প্রসন্ন। সম্ভবত, গাড়ি ব্যবসার সূত্রেই প্রসন্ন জড়িয়ে প়ড়েন ভুয়ো নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে। যদিও তদন্তকারীদের এই দাবির সঙ্গে একমত নন প্রসন্নের বাবা। কৃষ্ণকান্ত বলছেন, ‘‘আমি পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে চিনি না। ছেলে এ সবে জড়িত তা ভাবতেও পারছি না। ওর তো গাড়ি, হোটেলের ব্যবসা আছে।’’
ঠিক যেমন প্রসন্নর পরিণতি মানতে কষ্ট হচ্ছে তাঁর পুরনো পাড়ার বাসিন্দাদের। নারকেলডাঙা মেন রোডে এক সময় থাকতেন প্রসন্নরা। সেখানেও প্রসন্নর গ্রেফতার হওয়ার খবর শুনে হতবাক সকলে। টালির চালের ঘর থেকে নিউটাউনের বিলাসবহুল ভিলা। সোজা পথে ব্যবসা করে এত অল্প সময়ে এমন চোখ ধাঁধানো উত্থান দেখে তাক লেগে যাওয়ার অবস্থা। তদন্তকারীরা বলছেন, প্রসন্নর এ হেন রকেটগতির উত্থান খতিয়ে দেখলেই স্পষ্ট হবে, ঠিক কোন জাদুকাঠির ছোঁয়ায় এ সব সম্ভব হল। যদিও তা মানতে নারাজ প্রসন্নের বাবা কৃষ্ণকান্ত।