আলোচনায় প্রচেত গুপ্ত ও শমীক ঘোষ
প্রচেত গুপ্ত। নামটা শুনলেই যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে কিশোর সাহিত্যের প্রতিচ্ছবি। এক রাশ রংবেরঙের দুনিয়া। যাঁর লেখার মোহে আটকে গিয়েছে বহু বাঙালির কিশোর কাল। সেই প্রচেত গুপ্তের সঙ্গেই অনলাইনে একটি ভার্চুয়াল সেশন - আখরের আয়োজন করেছিল প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশন এবং পূর্ব-পশ্চিম নাট্যদল। সেশনটি আয়োজনের নেপথ্যে মূল উদ্য়োক্তা শ্রী সিমেন্ট লিমিটেড এবং ডিজিটাল মিডিয়া পার্টনার আনন্দবাজার ডিজিটাল।
সেশনটির সূচনা করেন প্রবীণ নাট্য ব্যক্তিত্ব সৌমিত্র মিত্র। এর পরেই লেখকের সঙ্গে আলাপচারিতায় ছিলেন আরও এক প্রখ্যাত লেখক শমীক ঘোষ। ঠিক কেমন ভাবে কেটেছিল প্রচেত গুপ্তের শৈশব, কী ভাবে তৈরি হল সাহিত্যের প্রতি আকর্ষণ, তার কলমে ফুটে ওঠা গল্প ইত্যাদি সমস্ত না জানা গল্প উঠে হল আলোচনায়। অনেকেই জানতেন না প্রচেত গুপ্তের যমজ ভাই রয়েছে। আর একটি মজার বিষয় বললেন তিনি, যা শুনে রিতীমতো চমকে গেলেন অনেকেই। তা হল পড়াশুনার প্রতি অনীহার কারণেই সাহিত্য, লেখালেখির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন প্রচেত গুপ্ত। সেই ছোট থেকেই বাইরের বিভিন্ন খেলাধুলার সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন তিনি। বলা যেতে পারে, ক্রিকেট বা ফুটবল খেলতেন দারুন। কিন্তু লেখালেখির মধ্যেই তিনি তাঁর আসল ভালবাসাকে খুঁজে পেয়েছিলেন।
তবে লেখালেখির এই পথ ততটাও সহজ ছিল। আলোচনায় উঠে এল তাঁর হাজারো চড়াই উৎরাইয়ের গল্পও। বহু বার প্রত্যাখ্যানের মুখোমুখি হয়েছেন। এক বার এক বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থার সম্পাদক তাঁর লেখা সরিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি প্রচেত গুপ্তকে বলেছিলেন যে কোনও পূজাবার্ষিকীতে লিখতে গেলে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে আমন্ত্রণ পত্র থাকা জরুরি। প্রচেত বাবু কোনও দিন হতাশ হননি। ওই একই গল্প তিনি আনন্দবাজার পত্রিকার কাছে নিয়ে আসেন। তাঁর প্রথম গল্প ঠাঁই পায় আনন্দবাজার পূজাবার্ষিকীর পাতায়।
সেই যখন থেকে তিনি কলম ধরে ছিলেন, তিনি কিন্তু ভালবেসেই লিখে গিয়েছেন। সবটুকুই নিজের জন্য। তিনি বরাবরই প্রচার বিমূখ ছিলেন। সমাজে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন লেখকদের তিনি বার বার বলেছেন, ভালবেসে লিখতে। লেখার সময় অন্য কোনও কথা না ভেবে লিখতে। সেই কারণেই তাঁর প্রতিটি গল্পে এমন একটি চরিত্র থাকে, যাঁর সঙ্গে তাঁর নিজের মিল রয়েছে। তিনি আসলে আগামী গোটা একটা প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণা।
আলোচনা শেষে প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশনের এক্সিকিউটিভ ট্রাস্টি অনিন্দিতা চট্টোপাধ্যায় বলেন, “প্রচেত গুপ্তর মতো খ্যাতনামা সাহিত্যিককে প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশন ও পূর্ব পশ্চিমের আখর অনুষ্ঠানে পেয়ে আমরা আপ্লুত। ওনার জীবনের নানান জানা-অজানা ঘটনা ও অভিজ্ঞতার কাহিনীগুলি শুনে খুব ভাল লাগল। আগামী দিনগুলিতেএইরকম আরও খ্যাতনামা সাহিত্য ব্যক্তিত্বের সঙ্গে অনুষ্ঠান করার অনুপ্রেরণা পেলাম আমরা।”
একই প্রসঙ্গে আরেক লেখিকা কাকলি সেনগুপ্ত বলেন, “ফেসবুকে একটি ঘোষণা শুনে খুব কৌতূহলী হয়েছিলাম। প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশন ও পূর্ব পশ্চিমের আখর অনুষ্ঠানে এই সময়কার জনপ্রিয় ও শক্তিশালী লেখক প্রচেত গুপ্তর সঙ্গে আলাপচারিতায় থাকছেন আর এক লেখক শমীক ঘোষ। প্রচেতর লেখা আমি পড়েই থাকি এবং এসময়ের লেখকদের মধ্যে যথেষ্ট শক্তিশালী লেখক শমীকের দু'টি বই আমি পড়েছি। কিন্ত একটা দোটানায় ছিলাম, দু'জন লেখক মুখোমুখি হবেন, তাহলে কি তাত্ত্বিক কচকচি হবে? কিন্ত যখন অনুষ্ঠান শুরু হল, তখন এত সাদাসিধে আটপৌরে একটা জায়গা থেকে শুরু করে সমস্ত ব্যাপারটা একটা অদ্ভুত উচ্চতায় চলে গেল। প্রচেত একজন জাদুকরের মতো চরিত্রগুলির মুখে আলো ফেলেন। যাঁরা লেখক হতে চান, তাঁর প্রতিটি কথা ভীষণ রকম বাসনা তৈরি করে ভাল কিছু লেখার।”
বাংলার আরেক কবি, অনুবাদক, গল্পকার তন্ময় চক্রবর্তী জানান, “ভারতীয় সাহিত্যের প্রসারে প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশান এবং আখরের উদ্যোগে এবং পূর্ব পশ্চিম নাট্যদলের সহযোগীতায় এই সময়ের অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য ও জনপ্রিয় গল্পকার ও সাহিত্যিক প্রচেত গুপ্তর কথা আমরা শুনলাম। আলাপচারিতায় ছিলেন আর এক তরুণ গল্পকার শমীক ঘোষ। চমৎকার একটি প্রাককথন করেছেন সৌমিত্র মিত্র। সন্ধ্যেবেলার সত্যি কথায় গল্পকার প্রচেত গুপ্ত জানিয়েছেন প্রথাগত পড়াশোনা থেকে মুক্তি পেতেই তার লেখালেখিতে আসা। ছোটবেলায় বাড়িতে গল্পের বইয়ের আলমারি আসার গল্প থেকে শুরু শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রথম ছাপা গল্পের আশ্চর্য কাহিনী এবং দুই সম্পাদকের গল্পও শুনিয়েছেন তিনি। গোটা আলাপপর্বে তিনটি সরল বার্তা তিনি জানিয়েছেন। প্রথমটি হল, লেখককে হতাশ হলে চলবে না। দ্বিতীয়টি হল, জনপ্রিয়তা এবং লেখালেখির মধ্যে কোনও সম্পর্ক নেই এবং শেষ সূত্রে তিনি বলেছেন তার প্রায় প্রতিটি গল্পের কোনও না কোনও এক চরিত্রের মধ্যে লুকিয়ে থাকেন প্রচেত গুপ্ত।”