Potato-Onion Problem

কেন্দ্রের চালেই আলু ও পেঁয়াজে ‘অসহায়’ রাজ্য

কৃষি বিপণন কর্তারা জানাচ্ছেন, বুধবার খুচরো বাজারে জ্যোতি আলুর দাম ছিল ৩৬-৩৭ টাকা কেজি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২০ ০৪:০৬
Share:

ছবি পিটিআই।

অতীতে সরকারি আদেশনামা জারি করে আলু-পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছিল রাজ্য। কিন্তু কেন্দ্র সম্প্রতি নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর তালিকা থেকে আলু-পেঁয়াজকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আইনি অস্ত্র রাজ্যের হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে বলে কৃষিকর্তাদের অভিমত। তাই সরকার নিজের মজুত থেকে বাজারে আলু ছাড়তে শুরু করার পরেও খুচরো বাজারে তার দাম কমছে না। হিমঘর থেকে পাইকারি বাজারে আলুর দামে বিশেষ কিছু তারতম্য হচ্ছে না। কিন্তু খুচরো বাজারে পৌঁছে গিয়েই সেই আলুর দামই প্রতি কেজিতে ৬-৭ টাকা দাম বেড়ে যাচ্ছে। শত চেষ্টাতেও তা রোখা যাচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন কৃষি বিপণন কর্তারা।

Advertisement

আলুর মতো আকাশছোঁয়া দাম পেঁয়াজেরও। বঙ্গে পেঁয়াজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা তেমন পোক্ত নয়। এ ক্ষেত্রে রাজ্যের কিছু প্রচেষ্টা লকডাউনের কারণে থমকে গিয়েছে। ফলে মহারাষ্ট্র থেকে আসা পেঁয়াজই ভরসা। কৃষি দফতরের হিসেব অনুযায়ী রাজ্যে রোজ পেঁয়াজ লাগে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টন। তার প্রায় পুরোটাই বাইরে থেকে আনতে হয়। দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় বঙ্গে তার প্রভাব পড়ছে।

‘‘আমরা এখন অসহায়। কেন্দ্র নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের তালিকা থেকে আলু-পেঁয়াজ বাদ দেওয়ায় আইন প্রয়োগ করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার আমাদের নেই। ২০১৪ সালেও আলুর দাম বেড়ে গিয়েছিল। সে-বার ৪ জুলাই এবং ৭ সেপ্টেম্বর দু’টি আদেশনামার জোরে আলুকে অত্যাবশ্যক পণ্য ঘোষণা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। এ বার আমরা তা করতে অক্ষম,’’ বলেন কৃষি অধিকর্তা প্রদীপ মজুমদার।

Advertisement

আরও পডুন: মতুয়াদের জন্য পৃথক পর্ষদ, পাট্টা উদ্বাস্তুদের

আরও পডুন: রাজ্যে এক দিনে রেকর্ড সুস্থ, ৯ শতাংশের নীচে সংক্রমণের হার​

সরকারি সূত্রের খবর, ডিসেম্বরে নতুন পেঁয়াজ উঠবে। তার আগে দাম কমার সম্ভাবনা কম। কেন্দ্র নভেম্বরে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তা আসবে ডিসেম্বরে। আমদানি যখন করতেই হচ্ছে, সেটা অগস্টে করলে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকত বলে মনে করছেন কৃষি বিপণন বিশেষজ্ঞেরা।

একই ভাবে খুচরো বাজারে আলুর চড়া দাম ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে কর্তাদের ধারণা। চড়া দামের দরুন মাথাপিছু আলুর কেনার পরিমাণ কমছে। কর্তাদের আশঙ্কা, বছর শেষে হিমঘর থেকে যখন সব আলু বার করে দিতে হবে, তখন চাষি বা ব্যবসায়ীরা দাম পাবেন না সরকারি সূত্রের হিসেব, এখনও রাজ্যের হিমঘরগুলিতে ১৫ লক্ষ মেট্রিক টন আলু আছে। আগামী দু’মাসে খুব বেশি হলে ১১-১২ লক্ষ মেট্রিক টন আলু লাগবে। সরকার নিজেরাই ৪২ হাজার টন আলু হিমঘরে রেখেছিল। উৎসবের মরসুমে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে চতুর্থীর দিন থেকে তা বাজারে ছাড়তে শুরু করে রাজ্য। এ-পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার টন আলু কলকাতা ও জেলাগুলিতে পাঠানো হয়েছে। তার পরেও দাম কমার লক্ষণ নেই।

কৃষি বিপণন কর্তারা জানাচ্ছেন, বুধবার খুচরো বাজারে জ্যোতি আলুর দাম ছিল ৩৬-৩৭ টাকা কেজি। এ দিন হিমঘর থেকে বেরোনো আলুর দাম ছিল ২৬-২৭ টাকা কেজি। পাইকারি বাজারে তা বিক্রি হয়েছে ৩০-৩১ টাকায়। কৃষি বিপণন কর্তাদের বক্তব্য, পাইকারি বাজারের চেয়ে খুচরো বাজারে প্রতি কেজিতে ২-৩ টাকা ফারাক হওয়ার কথা। কিন্তু কলকাতার বাজারে পার্থক্য হয়ে যাচ্ছে প্রায় ৬-৭ টাকার। কোনও ভাবেই এতটা ফারাক হওয়ার কথা নয়।

পরিস্থিতি এমন হল কেন? ‘‘খুচরো বিক্রেতারা কোনও মতেই দাম কমাতে রাজি নন। বাজারে চড়া দাম রেখেই আলু বিক্রির একটি চক্র কাজ করছে। লকডাউনে পরিবহণ-সমস্যা সামান্য হলেও ছিল। কিন্তু এখন তা নেই। তার পরেও দাম কমছে না। তাই ক্রেতারা প্রশ্ন না-তুললে বাজারে চাপ তৈরির সম্ভাবনা নেই,’’ বলেন সরকারের এক শীর্ষ কর্তা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement