ময়না তদন্তের রিপোর্ট বিধায়কের আত্মহত্যার দিকেই ইঙ্গিত করছে। —নিজস্ব চিত্র।
আত্মহত্যা করেছেন হেমতাবাদের বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টও আত্মহত্যার দিকেই ইঙ্গিত করল। রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন নবান্নে ওই ময়নাতদন্তের রিপোর্ট উদ্ধৃত করে বলেন, ‘‘ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেখে রাজ্য পুলিশ মনে করছে ঘটনাটি একটি সম্ভাব্য আত্মহত্যার ঘটনা।’’ সোমবার রাতে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজে ময়নাতদন্ত হয় ৬৫ বছরের বিধায়কের। ময়নাতদন্ত করেন সেখানকার ফরেনসিক সায়েন্স বিভাগের চিকিৎসক জয়দীপ খান।
ময়নাতদন্তের পর তিনি যে প্রাথমিক লিখিত মতামত জানিয়েছেন, সেখানে বলা হয়েছে, গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলেই মৃত্যু হয়েছে দেবেন্দ্রনাথের। চিকিৎসার পরিভাষায় ‘অ্যান্টি মর্টেম’ অর্থাৎ জীবিত অবস্থায় গলায় ফাঁস লাগানো হয়।
ফলে ময়না তদন্তের রিপোর্ট পরিষ্কার ভাবেই দেবেন্দ্রনাথকে মেরে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে, এই অভিযোগ খারিজ করে দিল। ময়নাতদন্তের আগেই যদিও রাজ্য পুলিশ সোমবার দুপুরেই দাবি করেছিল যে দেবেন্দ্রনাথের পকেট থেকে মিলেছে সুইসাইড নোট যেখানে তিনি দু’জনকে দায়ী করে গিয়েছেন মৃত্যুর জন্য। রাজ্য পুলিশের সেই দাবিকেই সিলমোহর দিল ময়নাতদন্তের রিপোর্ট। রায়গঞ্জ পুলিশ জেলার সুপার সুমিত কুমার বলেন, ‘‘ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেয়েছি। তা থেকে বোঝা যাচ্ছে এটি একটি আত্মহত্যার ঘটনা। পরবর্তী তদন্ত চলছে।’’
আরও পড়ুন: বিজেপির বন্ধে মিশ্র সাড়া উত্তরবঙ্গে, উত্তপ্ত কোচবিহার
রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিধায়কের শরীরে কোথাও কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই। গলায় ১৫ ইঞ্চি লম্বা এবং আধ ইঞ্চি চওড়া ‘লিগেচার মার্ক’ অর্থাৎ ফাঁসের দাগ পাওয়া গিয়েছে। চিকিৎসকরা মতামত দিয়েছেন, সেই ফাঁসের দাগ টানা নয়। চিকিৎসার পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘নন কন্টিনিউয়াস’।
সাধারণ ভাবে আত্মহত্যার ক্ষেত্রেই এ রকম ‘নন কন্টিনিউয়াস’ লিগেচার মার্ক পাওয়া স্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক সায়েন্স বিভাগের এক চিকিৎসক।
বিধায়কের পকেটে পাওয়া একটি চিরকূটের প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন,‘‘ মৃতের পকেটে একটি কাগজের টুকরো পাওয়া গিয়েছে। সেখানে দুই ব্যাক্তির নাম, ছবি এবং মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে। তাঁদের সম্পর্কে কিছু কথাও বলা হয়েছে।”
স্বরাষ্ট্রসচিব জানিয়েছেন ওই ব্যাক্তিরা প্যারা ব্যাঙ্কিং অর্থাৎ সমান্তরাল ব্যাঙ্কিং, ধার দেওয়া এবং মিনি ব্যাঙ্কিংয়ের সঙ্গে যুক্ত। আলাপনবাবু এ দিন বলেন,‘‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার স্পষ্টভাবে বলতে চায়, এই ঘটনার আনুপুর্বিক এবং যথাবিহিত তদন্ত হবে।” তিনি আরও বলেন,‘‘কোনও রাজনৈতিক বা বাইরের ফ্যাক্টর তদন্ত প্রভাবিত করবে না।” তবে দেবেন্দ্রনাথের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা রুজু করেছে কি না, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি স্বরাষ্ট্রসচিব। তিনি বলেন,‘‘রাজ্য সরকার সকল অস্বাভাবিক মৃত্যুর পূর্নাঙ্গ তদন্তে বিশ্বাসী।”