পোড়া বাড়িতে রয়ে গিয়েছে পায়রা। বৃহস্পতিবার রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
মৃতদের ফুসফুসে কার্বনের উপস্থিতি ছিল কি না, তা জানা গেলেই বোঝা যাবে, রামপুরহাটের বগটুইয়ে আদতে কী ঘটেছিল। ওই ঘটনায় ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, খুন করার পরেই কি মৃতদেহগুলি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল? না কি জীবন্ত অবস্থায় তাঁদের পুড়িয়ে মারা হয়েছে? এ শহরের ময়না-তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের অধিকাংশই অবশ্য জানাচ্ছেন, যদি কাউকে কোথাও আটকে পুড়িয়ে মারা হয়, তা হলে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তাঁর শ্বাস নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে কার্বনের প্রবেশ ঘটবে। মৃত্যুর পরেও সেই কার্বনের উপস্থিতি মিলবে ফুসফুসে। কিন্তু খুনের পরে দেহ জ্বালিয়ে দেওয়া হলে ফুসফুসে কার্বনের উপস্থিতি মিলবে না।
গত কয়েক মাসে এ রাজ্যে একাধিক মৃত্যুর ঘটনা সামনে এসেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। একই রকম ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে রামপুরহাটের বগটুইয়ে আটটি দেহ উদ্ধারের ঘটনায়। ওই ঘটনায় আগুনে পুড়ে পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে, মৃতদেহগুলি শনাক্ত করাও কঠিন ছিল। যদিও মৃতদের এক আত্মীয়ের সাহায্যে দেহগুলিকে শনাক্ত করা হয়। কিন্তু মৃতদেহ শনাক্ত করা গেলেও এখনও পর্যন্ত ওই আট জনের মৃত্যু কী ভাবে হয়েছে, সেই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। কারও মতে, খুন করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারও মতে, দরজা বন্ধ অবস্থাতেই আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয়েছে সকলের।
শহরের একটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজের ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক জানাচ্ছেন, যদি জীবিত অবস্থায় কাউকে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে আগুনের জন্য ঘরের ভিতরে তৈরি হওয়া কালো ছাই, ধোঁয়া মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তাঁর শ্বাসবায়ুর মধ্যে দিয়ে ফুসফুসে প্রবেশ করবে। ফলে মৃতদেহের ময়না-তদন্তের সময়ে ফুসফুস পরীক্ষা করলে তার ভিতরেও মিলবে কালো কার্বনের নমুনা। কিন্তু আগুন লাগার আগেই যদি কারও মৃত্যু হয়ে থাকে, তা হলে আগুন লাগার সময়ে মৃতের শরীরে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার প্রশ্ন থাকবে না। ফলে তাঁর ফুসফুসেও কোনও
রকম কার্বন বা ছাইয়ের উপস্থিতি মিলবে না। স্বাভাবিক ভাবেই রামপুরহাটের এই মৃত্যুর ক্ষেত্রেও বোঝা সম্ভব, জীবন্ত অবস্থায় পুড়িয়ে মারা হয়েছে, না কি মৃত্যুর পরে আগুন লাগানো হয়েছে।
এ ছাড়া, মৃতদেহের রক্তে কার্বন মনোক্সাইডের পরিমাণ দেখেও এই ধোঁয়াশা কাটতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। শহরের আর একটি মেডিক্যাল কলেজের ফরেন্সিক মেডিসিনের চিকিৎসক বললেন, ‘‘রক্তে সাধারণত কার্বন মনোক্সাইডের পরিমাণ থাকে পাঁচ শতাংশের আশপাশে। কিন্তু ময়না-তদন্তের সময়ে যদি দেখা যায় এই পরিমাণ খুব বেশি, তা হলে ধরে নেওয়া যায়, জীবিত অবস্থাতেই ওই ব্যক্তির শরীরে আগুন সংক্রান্ত একাধিক গ্যাস, কার্বন ঢুকেছিল। কিন্তু মৃত্যুর পরে যদি তাঁকে পুড়িয়ে দেওয়া হয়, তা হলে রক্তে কার্বন মনোক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে না। ফলে ময়না-তদন্তের রিপোর্টে রক্তে কার্বন মনোক্সাইডের পরিমাণ দেখলেও এই ধোঁয়াশা কাটতে পারে।’’
রাজ্য পুলিশ সূত্রের অবশ্য দাবি, ময়না-তদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট আসার পরেই বিষয়টি বোঝা যাবে। আপাতত নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পাশাপাশি সব ক’টি দেহের ময়না-তদন্ত করা হয়েছে। তবে মৃত্যুর এতটা সময় পরেও কেন এই প্রশ্নের উত্তর মিলল না, সেটা নিয়েও রয়ে গিয়েছে ধন্দ।