বিজেপি কর্মীকে আটকে রেখে মারধর, ব্লেড দিয়ে গা চিরে দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে। পাল্টা কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল।
শুক্রবার ঘটনাস্থল ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের ভাটপাড়া এবং কয়েক কিলোমিটার দূরে নৈহাটি। দুপুর থেকে সন্ধে পর্যন্ত যখন এত সব কাণ্ড ঘটছে সেখানে, সে সময়েই তৃণমূলের পরিষদীয় দলের নেতারা অশান্ত ভাটপাড়ার পরিস্থিতি দেখতে হাজির এলাকায়। পুলিশের সঙ্গে শান্তি ফেরানোর দাবিতে কথাও বলেন তাঁরা।
শুক্রবারের ঘটনায় দু’পক্ষই অভিযোগ জানিয়েছে থানায়। বাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের অভিযোগে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা বিজেপি সমর্থক বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। তবে বিজেপি কর্মীর উপরে হামলার ঘটনায় কেউ ধরা পড়েনি। তৃণমূলের কিছু ঘরছাড়া কর্মী এই ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগ আক্রান্ত বিজেপি কর্মীর পরিবারের লোকজনের। তাদের নাম অবশ্য জানাতে পারেননি আক্রান্ত ব্যক্তি। পুলিশ পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বিজেপি কর্মী বাপি পোদ্দার টোটো চালান। বাড়ি নৈহাটি পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের আম্রপল্লিতে। এই এলাকাও লোকসভা ভোটের পর থেকে উত্তপ্ত হয়েছে বার বার। বিজেপির সন্ত্রাসে তৃণমূলের কয়েক জন কর্মী-সমর্থক এলাকা ছাড়া বলে অভিযোগ ঘাসফুল শিবিরের।
বাপির ভাইপো ঋত্ত্বিক পোদ্দারের দাবি, শুক্রবার দুপুরে ভাটপাড়ার কাছে যাত্রী নামিয়ে টোটো নিয়ে ফিরছিলেন কাকা। সে সময়ে তৃণমূলের ঘর ছাড়া দুই কর্মী পথ আটকান। টোটোয় উঠতে চান। আপত্তি জানিয়েছিলেন বাপি। কিন্তু এক রকম জোর করেই ওই দু’জন উঠে পড়ে টোটোয়। কিছুটা দূরে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারে টোটো নিয়ে যেতে বাধ্য করে বাপিকে।
অভিযোগ, সেখানে বাপিকে জোর করে টোটো থেকে নামিয়ে একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে যায় ওই দু’জন। শুরু হয় মারধর। মুখে জোর করে দেশি মদ ঢেলে দেওয়া হয়। সন্ধে পর্যন্ত আটকে রেখে দফায় দফায় অত্যাচার চলে বলে অভিযোগ। এক সময়ে ব্লেড বের করে বাপির হাতে চিরে দেয় হামলাকারীরা। সেখানে নুন-লঙ্কাও ছিটিয়ে দেয়।
অচৈতন্য হয়ে পড়েন বাপি। পিঠটান দেয় হামলাকারীরা। রাতের দিকে রক্তাক্ত অবস্থায় বাপি ফেরেন পাড়ায়। স্থানীয় লোকজন তাঁকে ভর্তি করেন নৈহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। ঘটনাস্থল ভাটপাড়া হওয়ায় রাতের দিকে সেখানেই লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বাড়ির লোকজন।
ঘটনা জানাজানি হতেই আম্রপল্লি এলাকায় চার তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে চড়াও হয় কিছু লোক। অভিযোগ, তারা বিজেপির কর্মী-সমর্থক।
একটি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। ভাঙচুর, লুটপাট চলে বাকি তিনটি বাড়িতে। তৃণমূলের দাবি, যে বাড়িগুলিতে হামলা হয়েছে, সেই বাড়ির গৃহকর্তারা বিজেপির সন্ত্রাসের জেরে অনেক দিন হল এলাকা ছাড়া।
নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিকের কথায়, ‘‘যাঁরা নিজেরাই বাড়ি ছাড়া, তাঁরা কী ভাবে অন্য কারও উপরে হামলা চালাবেন, তা বোঝা যাচ্ছে না। আসলে ভাঙচুর, লুটপাট করে এলাকা সন্ত্রস্ত করবে বলে বিজেপির লোকজন আক্রমণের সাজানো গল্প ফেঁদেছে। পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখুক।’’
অন্য দিকে, বিজেপির সাংসদ অর্জুন সিংহের বক্তব্য, ‘‘কেন গোলমাল হল, তা দলীয় ভাবে দেখা হচ্ছে। তবে তৃণমূল নিজেদের রাজনৈতিক জমি উদ্ধারের জন্য এখন অনেক কাণ্ডই করছে।’’