দফায় দফায় বিক্ষোভে বিরোধীরা
R G Medical College And Hospital

মৃতার বাবাকে আশ্বাস মুখ্যমন্ত্রীর, সিবিআই তদন্ত চান শুভেন্দু

আর জি করের ভিতরে ডাক্তারির ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে, এমন অভিযোগ ঘিরে বিতর্ক শুরু হওয়ার পরে শুক্রবার তাঁর বাবাকে ফোন করে যথাযথ তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২৪ ০৬:৪৮
Share:

শহবাহী গাড়ি আটকে বিক্ষোভে মীনাক্ষী। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডাক্তারির ছাত্রীর দেহ উদ্ধারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শোরগোল শুরু হল রাজ্য রাজনীতিতে। আর জি করের ভিতরে ডাক্তারির ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে, এমন অভিযোগ ঘিরে বিতর্ক শুরু হওয়ার পরে শুক্রবার তাঁর বাবাকে ফোন করে যথাযথ তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ঘটনার সিবিআই তদন্ত চেয়েছেন। সরব হয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম-সহ অন্যেরাও। হাসপাতালে এ দিন দফায়-দফায় বিক্ষোভ দেখিয়েছে বিজেপি, সিপিএম, এসএইউসি-র বিভিন্ন সংগঠন।

Advertisement

ছাত্রীর বাবার বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী ফোন করেছিলেন। বলেছেন, যথাসাধ্য তদন্ত করা হবে।” সূত্রের খবর, ঘটনাটি ‘অত্যন্ত বেদনাদায়ক’ বলে জানিয়ে ছাত্রীর মা-বাবাকে মমতার আশ্বাস, দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। পরে ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানিয়েছেন মমতা। পাশাপাশি, তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী এই বিষয়টিকে সামনে রেখে আর জি করের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ইউনিট নিয়ে বৈঠক করেছেন।

ছাত্রীর পরিবারের মতোই ঘটনাটিকে খুন ও নির্যাতন বলে অভিযোগ করে রাজ্যের নারী নিরাপত্তা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরা। ছাত্র-সমাজ ও পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু এ দিন বাঁকুড়ার রানিবাঁধে বলেছেন, “শারীরিক নির্যাতন করে নৃশংস খুন। সিবিআই তদন্ত দাবি করছি। রাজ্যের ছাত্র সমাজকে বলছি মাঠে নামুন, প্রয়োজনে পতাকা ছাড়া নামুন। রাজ্যের উচিত সিবিআইকে তদন্ত হস্তান্তর করা। তা না হলে, পরিবারকে বলব, আপনারা আদালতের দ্বারস্থ হন।” এক্স হ্যান্ড্‌লে সরব হয়েছেন বিজেপির রাজ্যের সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয়ও। তিনি লিখেছেন, ‘ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।’

Advertisement

ঘটনার প্রতিবাদে পুর-প্রতিনিধি সজল ঘোষ, অর্চনা মজুমদারের নেতৃত্বে এ দিন হাসপাতালে বিজেপি বিক্ষোভ দেখিয়েছে। পরে ছাত্রীর দেহ হাসপাতাল থেকে বার করার সময়ে বিচার চেয়ে শববাহী গাড়ির সামনে বসে পড়েন বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালেরা। পুলিশের দিকে জুতোও উড়ে আসে। শববাহী গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখান মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সিপিএমের যুব নেতা-কর্মীরা। বিকেলে হাসপাতালের মূল গেটে বিক্ষোভ ও মিছিল করেছে এসইউসি-এর ছাত্র, যুব এবং মহিলা ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। দোষীদের গ্রেফতার, শাস্তি এবং হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উপযুক্ত নিরাপত্তা-সহ নানা দাবিতে টালা থানায় দাবিপত্রও দিয়েছে তারা। এসইউসি-র রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য, দলের নেতা তরুণকান্তি নস্করের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁরা আজ, শনিবার রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ দিবসেরও ডাক দিয়েছেন।

ছাত্রী মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও। আলিমুদ্দিনে তিনি বলেছেন, “পুলিশ, সরকার মিলে চেষ্টা করছে খুনের ঘটনা ধামাচাপা দিতে। পুলিশ ওখানে গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর সাজিয়ে দেওয়া বয়ান প্রতিষ্ঠা করতে।” সেই সঙ্গে আর জি করের অধ্যক্ষকে সরানোর দাবি জানিয়েছেন তিনি। এই ঘটনার সূত্র ধরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রদেশ কংগ্রেস মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায়ের বক্তব্য, “অপরাধীরা মনে করে, এটা তাদের সরকার। পুলিশ ঘটনা ঘটার পরে লোক দেখানো তদন্ত করছে। বাংলায় মহিলা-নির্যাতনের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে।”

ঘটনাটিকে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক আখ্যা দিয়েও তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র শান্তনু সেনের বক্তব্য, “সত্য উদ্‌ঘাটিত হোক। প্রশাসন নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্ত করবে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে কেউ যুক্ত থাকলে, কেউ রেহাই পাবে না।” রাতে আর জি করে পৌঁছে দমদমের তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ও বলেছেন, ‘‘হাসপাতালের মধ্যে এই ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। দোষী দ্রুত ধরা পড়ুক, এটাই চাই। মেয়েটি আমার লোকসভা এলাকার বাসিন্দা। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। উনিও এই বিষয়ে উদ্বিগ্ন। আমি দিল্লি থেকে নেমে হাসপাতালে এলাম। সুপারের সঙ্গে কথা বলব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement