বাঁ দিকে, স্কুল-কলেজ খোলার ঘোষণার পর এসএফআইয়ের উচ্ছাস। ডান দিকে, বিকাশ ভবন অভিযানে পুলিশের লাঠি চালনার পরে ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি। নিজস্ব চিত্র।
ফের স্কুল-কলেজ খোলার ঘোষণার দিনেও জারি থাকল রাজনৈতিক বিতর্ক এবং চাপানউতোর। ‘বিচারাধীন বিষয়’ বলে এই ব্যাপারে আলোচনা সম্ভব নয়, এই যুক্তি দেখিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে চিঠি পাঠাল শিক্ষা দফতর। ‘বিচারাধীন বিষয়’ হলে আদালতে না জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কী ভাবে প্রকাশ্যে স্কুল-কলেজে পঠনপাঠন শুরুর ঘোষণা করলেন, সেই প্রশ্ন তুলে পাল্টা সরব হলেন বিরোধী দলনেতা। আবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার স্কুল, কলেজ খোলার দিনক্ষণ ঘোষণা করার আগেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে বাম ও কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনের আন্দোলনে পুলিশের লাঠি চালানোর অভিযোগ উঠল।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে আলোচনার জন্য গত সপ্তাহে উচ্চ শিক্ষা দফতরের সচিব মণীশ জৈনের সময় চেয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। কিন্তু ব্যস্ত থাকায় সচিব সময় দেননি। বিকাশ ভবনের সামনে বিজেপির জনাতিনেক বিধায়ক-সহ শুভেন্দুকে আটকে দেয় পুলিশ। বিরোধী নেতার কাছে বিকাশ ভবন থেকে চিঠি পাঠিয়ে সাক্ষাতের কারণও জানতে চাওয়া হয়। স্কুল-কলেজ খোলা নিয়ে আলোচনা চান, এই কথা বিরোধী নেতার তরফে জানানোর পরে এ দিন তাঁকে ফের চিঠি দিয়েছে বিকাশ ভবন। সেখানে বলা হয়েছে, ওই বিষয়টি আদালতের ‘বিচারাধীন’। তাই এই বিষয়ে আলোচনা সমীচীন নয়। যার প্রেক্ষিতে শুভেন্দুর প্রশ্ন, ‘‘বিরোধী দলনেতা আলোচনা চাইলে তখন বিচারাধীন। মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়ে ঘোষণা করলে তখন আর বিচারাধীন থাকে না? বিচারাধীন হলে রাজ্য সরকারের তো আদালতের কাছেই সিদ্ধান্ত জানাতে হত!’’
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে এ দিন রাজ্য জুড়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিল এসএফআই। বিকাশ ভবন অভিযানের কর্মসূচি ছিল ছাত্র পরিষদের। বিধাননগরে পুলিশ ছাত্র পরিষদের কর্মী-সমর্থকদের উপরে লাঠি চালিয়েছে বলে সংগঠনের অভিযোগ। মারধরের জেরে জামাকাপড় ছিঁড়েছে ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি সৌরভ প্রসাদের, আহত হয়েছেন ১৩ জন। দফায় দফায় গ্রেফতার করা হয় প্রায় দু’শো জনকে। এয়ারপোর্ট ১ নম্বর, উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত, বাদুড়িয়া-সহ রাজ্যের একাধিক জায়গায় এসএফআইয়ের বিক্ষোভ ও অবরোধে পুলিশের লাঠি চলেছে। গ্রেফতার হয়েছেন সংগঠনের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে কলেজ স্ট্রিটে বিক্ষোভ মিছিলকেই ‘বিজয় মিছিলে’ বদলে নেয় এসএফআই। দুই সংগঠনেরই দাবি, লাগাতার ছাত্র আন্দোলনের চাপেই রাজ্য সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। একই সুর ডিএসও-র রাজ্য সম্পাদক মণিশঙ্কর পট্টনায়কেরও। তবে সিপিএম, কংগ্রেস, এসইউসি-সহ বিভিন্ন দল ও তাদের শাখা সংগঠনের দাবি, শুধু অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির জন্য স্কুল এবং বাকিদের জন্য ‘পাড়ায় শিক্ষালয়’ বলে আলাদা বন্দোবস্ত না রেখে প্রাথমিক স্তরেও দ্রুত স্কুল চালুর ব্যবস্থা হোক।