বিপ্লব রায়চৌধুরী। ফাইল চিত্র।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বার বারই জয় এবং হার পর্যায়ক্রমে এসেছে তাঁর কাছে। কিন্তু অদম্য মনোভাব নিয়ে লড়াইয়ের ময়দানে টিকে থাকার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন বিপ্লব রায়চৌধুরী। বুধবার বিকেলে মন্ত্রী পদে শপথ নিয়ে রাজনীতির নতুন ধাপে পা রাখলেন তৃণমূল এই বিধায়ক।
১৯৯১ সাল থেকে টানা সাত বার পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া পূর্ব কেন্দ্র থেকে ভোটে লড়েছেন তিনি । দু’বার কংগ্রেসের, পাঁচ বার তৃণমূলের টিকিটে। জিতেছেন চার বার। এক বার কংগ্রেস এবং তিন বার তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে। এ বার সেই হার না মানা লড়াইয়ের স্বীকৃতি পেলেন কোলাঘাটের বিপ্লব। মৎস্য দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হল তাঁর।
তৃণমূলনেত্রীর বিশ্বাসভাজন বিপ্লব বুধবার রাজ্যের মন্ত্রিসভার রদবদলে সম্প্রসারণে প্রথম বার মন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন। তবে একই সঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার আর এক মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দলের সাংগঠনিক কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে। তা নিয়ে ইতিমধ্যেই জেলায় শুরু হয়েছে জল্পনা। তৃণমূলের একাংশ মনে করছেন, বিপ্লবকে মন্ত্রিত্বে এনে শুধু তাঁর অদম্য রাজনৈতিক লড়াইকে স্বীকৃতি দিয়েছেন দলনেত্রী। পাশাপাশি, শাসকদলের অন্দরে নবীনদের উত্থানে যখন প্রবীণদের অনেকেই পিছনের সারিতে চলে গিয়েছেন, সেই সময় বিপ্লবের মতো এক জনকে মন্ত্রী করে দলের পুরনো সৈনিকদেরও বার্তা দিতে চেয়েছেন মমতা।
বিপ্লবের রাজনৈতিক সংগ্রাম যে যথেষ্ট নজরকাড়া তা কিন্তু একবাক্যেই স্বীকার করছেন শাসক থেকে বিরোধী সকলেই। উলুবেড়িয়া কলেজের ছাত্র বিপ্লব সত্তরের দশকে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সীর প্রভাবে ছাত্র পরিষদে নাম লিখিয়েছিলেন। নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় অবিভক্ত মেদিনীপুরের রাজনীতিতে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন তিনি। যে পাঁশকুড়া পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্র ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত পর পর ৮টি বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে ৬টিতে বামেদের দখলে ছিল (মাঝে ১৯৭৭ এবং ৮২ সালে জনতা দল ও পরে নির্দলের হাতে যায় সেই আসনেই কংগ্রেসের প্রতীকে ১৯৯৬ সালে প্রথম বার জয়লাভ করেন বিপ্লব। তার আগে ১৯৮২ সালে কংগ্রেস(এস) এবং ১৯৯১তে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে লড়ে হেরেছিলেন তিনি।
পরের বার ২০০১-এর নির্বাচনে প্রথম বার তিনি তৃণমূলের প্রতীকে জেতেন এই আসন থেকে। তবে ২০০৬ সালে বামে প্রার্থীর কাছে হেরে যান। কিন্তু রাজ্যে পালাবদলের সময় ২০১১ সালে আবারও এই আসনে জয়লাভ করেন বিপ্লব। ২০১৬-য় হারলেও ফের জয় মেলে ২০২১-এ। বিপ্লব অনুগামীদের অভিযোগ, শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে ‘দূরত্ব’ তৈরি হওয়ায় ২০১৬-য় ষড়যন্ত্র করেই তাঁকে হারিয়ে দিয়েছিল ‘দাদার অনুগামীদের’ একাংশ।
নীলবাড়ির লড়াইয়ের আগে শুভেন্দু অধিকারী দল বদলে পদ্ম-শিবিরে যোগ দেওয়ায় আবার ‘স্বমহিমায়’ ফিরে আসেন বিপ্লব। সেই সময় জেলা জুড়ে দলবদলের ‘হাওয়া’ বইলেও দলনেত্রীর উপরেই আস্থা রেখেছিলেন তিনি। বুধবার রাজভবনে মমতা মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ অনুষ্ঠানে ‘আস্থার’ সেই বৃত্তটাই সম্পূর্ণ হল।