বাঁ দিকে, ছবি নিয়ে দাঁড়িয়ে বুদ্ধদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবার ও ডান দিকে, ছবি হাতে বসে সুমন রায়ের মা। নিজস্ব চিত্র
গাড়ি মালিকের পরিবারকে নিয়ে গত ৭ জানুয়ারি তারাপীঠে গিয়েছিলেন পশ্চিম বর্ধমানের কুলটির যুবক বুদ্ধদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে পৌঁছনোর পরেই হোটেল থেকে তিনি রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হয়ে যান। বীরভূমের রামপুরহাট থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেছেন গাড়ি মালিক। ঘটনার আট দিন পরেও ছেলের কোনও খবর না পেয়ে চিন্তায় পড়েছেন মা ছায়া বন্দ্যোপাধ্যায়।
অন্য দিকে, গত শুক্রবার বাড়ি থেকে কাজে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান সুমন রায় নামে আসানসোলের ইসমাইলের বাসিন্দা এক বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার কর্মী। চারদিন কেটে গেলেও তাঁর খোঁজ মেলেনি। ছেলের খোঁজ না পেয়ে মা ভারতী রায় হিরাপুর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেছেন। দু’টি ঘটনারই তদন্ত শুরু হয়েছে বলে রামপুরহাট ও হিরাপুর থানার পুলিশ জানিয়েছে।
রামপুরহাট থানার পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৭ জানুয়ারি বরাকর থেকে তারাপীঠে সপরিবারে পুজো দিতে গিয়েছিলেন বিসিসিএলের খনি কর্মী কুন্দনকুমার ঝাঁ। তাঁর গাড়িটি চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কুলটির দক্ষিণ রানিতলার বাসিন্দা বুদ্ধদেব বন্দ্যোপাধ্যায় নামের এক চালককে ভাড়া করেছিলেন। কুন্দনবাবু পুলিশকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন, ওই দিন সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ তাঁরা তারাপীঠের একটি হোটেলে নিজেদের জন্য ও গাড়ি চালকের জন্য দু’টি ঘর ভাড়া করেন। ৮ জানুয়ারি ভোরে তাঁরা মন্দিরে পুজো দিয়ে হোটেলে ফিরে বুদ্ধদেবকে আর দেখতে পাননি। কুন্দনবাবুর দাবি, ‘‘আমরা প্রায় তিন ঘণ্টা খোঁজাখুঁজি করি। কোথাও তাঁর খোঁজ না পেয়ে রামপুরহাট থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করে বাড়ি ফিরে আসি।’’
এ দিকে, কুন্দনবাবুর মুখ থেকে ছেলে নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়ে ভেঙে পড়েছেন মা ছায়াদেবী। সোমবার সকালে তিনি বলেন, ‘‘আমার স্বামী নেই। ছোট ছেলে শারীরিক ভাবে অক্ষম। বড় ছেলে বুদ্ধদেবের রোজগারেই সংসার চলে। আটদিন পরেও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। তার খোঁজ না পেলে আমরা অথৈ জলে পড়ব।’’
পুলিশ জানায়, রামপুরহাট থানায় ১৩ জানুয়ারি ওই যুবকের পরিবার নিখোঁজ ডায়েরি করে। সোমবার রামপুরহাটের পুলিশ তারাপীঠের লজ থেকে সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করার পাশাপাশি লজ মালিক শিবপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, ৭ জানুয়ারি রাতে তারাপীঠের লজে একসঙ্গে থাকলেও পরের দিন সকালে তারাপীঠে পুজো দিতে যাওয়ার সময় কুন্দনকুমার ঝা বুদ্ধদেবে ঘরে বারবার ধাক্কা দিয়ে সাড়া পাননি। এরপর দুপুরে কুন্দনবাবু বুদ্ধদেব বন্দ্যোপাধ্যায়কে একা লজে রেখে পরিবার নিয়ে পুজো দিতে চলে যান। সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গিয়েছে, লজ থেকে বুদ্ধদেবকে মারধর করে বের করে দেওয়া হয়। তারপর থেকেই ওই যুবক নিখোঁজ। কেন তাঁকে বের করে দেওয়া হল? লজ মালিক শিবপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘ওই যুবকের অসংলগ্ন আচরণের জন্য লজের অন্য বোর্ডাররা বের করে দিয়েছিলেন। তবে লজের কর্মীরা কেউ মারধর করেননি।’’
অন্য দিকে, আসানসোলের ইসমাইলের বাসিন্দা ভারতী রায় পুলিশের কাছে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন, একমাত্র ছেলে সুমন গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ কাজে যাওয়ার নাম বাড়ি থেকে বের হন। বিকেলেই ছেলে ফিরে আসেন। কিন্তু ওই দিন সন্ধ্যা হয়ে গেলেও ছেলে ফেরেনি দেখে মা ভারতীদেবী তাঁকে বার বার ফোন করেন। তিনি বলেন, ‘‘ছেলের মোবাইল বন্ধ পেয়ে আত্মীয়পরিজন ও প্রতিবেশীদের খবর দিই। সোমবার পর্যন্তও ছেলের খবর পাইনি।’’
আসানসোলের মহিশীলা এলাকার একটি বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থায় সাতদিন আগে কাজে যোগ দিয়েছিলেন সুমন। এর আগেও অবশ্য তিনি সেখানকারই অন্য একটি নিরাপত্তা সংস্থায় রক্ষীর কাজ করতেন। ওই চাকরি ছেড়ে নতুন চাকরিতে ঢুকেছিলেন। শুক্রবার তাঁর আপকার গার্ডেন এলাকায় একটি বহুতল আবাসনে ডিউটি পড়েছিল বলে পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে। সোমবার নিজের বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে মা ভারতীদেবী বলেন, ‘‘আমার স্বামী নেই। ছেলের ভরসাতেই বেঁচে রয়েছি।’’