Police

যুবকের মৃত্যুতে তদন্তের রিপোর্ট দেবে পুলিশ

বাড়িতে লালের পাঁচটি ছোট ছেলেমেয়ে, বৃদ্ধা মা এবং বোন আছেন।

Advertisement

নুরুল আবসার

সাঁকরাইল শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২০ ০৫:০৫
Share:

লালচাঁদ স্বামী। ছবি: সংগৃহীত।

এলাকাবাসী আগেই অভিযোগ তুলেছিলেন। হাওড়ার সাঁকরাইলের রাজগঞ্জের যুবক লালচাঁদ স্বামীর অপমৃত্যুতে পুলিশের বিরুদ্ধে লাঠিপেটার অভিযোগ তুললেন তাঁর স্ত্রীও।

Advertisement

বৃহস্পতিবার নিহতের স্ত্রী বলেন, ‘‘বুধবার রাতে ও ছেলের জন্য দুধ কিনতে গিয়েছিল। হাঁফাতে হাঁফাতে বাড়ি ঢুকে বলে, লাঠি দিয়ে পুলিশ মেরেছে। তার পরেই মাটিতে পড়ে জ্ঞান হারায়। পুলিশের জন্যই ওর মৃত্যু হল।’’ লালের কোনও অসুখ ছিল না বলেও দাবি করেছেন স্ত্রী। তবে, এই মৃত্যু নিয়ে থানায় কোনও লিখিত অভিযোগ জানায়নি মৃতের পরিবার।

লাঠিপেটা করার কথা পুলিশ প্রথম থেকেই মানেনি। পুলিশের পাল্টা দাবি ছিল, পুলিশ দেখে ভয়ে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ওই যুবকের। পুলিশের আরও দাবি, তাঁর ডায়েরিয়াও ছিল। হাওড়া সিটি পুলিশ কমিশনার কুণাল আগরওয়ালও দাবি করেছিলেন, বাড়ির শৌচাগারে পড়ে গিয়ে ওই যুবকের মৃত্যু হয়। এ দিন ঘটনার তদন্তের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘‘ডিসি সাউথকে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।’’ ময়না-তদন্তের জন্য এ দিন যুবকটির দেহ নিয়ে যাওয়া হয় হাওড়া জেলা হাসপাতালে।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, করোনা-পরিস্থিতিতে লকডাউনের জেরে সব রকম জটলা-জমায়েত নিষিদ্ধ। তা সত্ত্বেও বুধবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ রাজগঞ্জে রাস্তার ধারে বেশ ভিড় হয়। সেখানে লালও ছিলেন। সিভিক ভলান্টিয়ারদের সঙ্গে নিয়ে সাঁকরাইল থানার পুলিশ ভিড় হটাতে গিয়ে লাঠি চালায় বলে অভিযোগ। তার পরেই এলাকা ফাঁকা হয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ‘‘কয়েক জন সিভিক ভলান্টিয়ার অবুঝের মতো লাঠি চালান। সেই লাঠিই লাগে লালের পিঠে ও মাথায়।’’

বাড়ি ঢুকে লাল জ্ঞান হারাতেই পড়শি এবং পরিবারের লোকেরা তাঁকে হাজি এসটি মল্লিক হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এর পরেই রাজগঞ্জে গোলমাল শুরু হয়ে যায়। পুলিশের বিরুদ্ধে লাঠিপেটার অভিযোগ তুলে স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষোভ শুরু করেন। অবরোধ হয়। তদন্তেরও দাবি ওঠে।

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ ছিল, হাসপাতাল থেকেই পুলিশ লালের দেহ তাঁর স্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু এলাকাবাসীর চাপে পুলিশ দেহটির ময়নাতদন্ত করাতে রাজি হয়। পুলিশের পাল্টা দাবি, মৃতের স্ত্রী স্বেচ্ছায় ময়নাতদন্ত না করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু এই মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় পুলিশ নিজেই ময়নাতদন্ত করানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

বাড়িতে লালের পাঁচটি ছোট ছেলেমেয়ে, বৃদ্ধা মা এবং বোন আছেন। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে মানুষটির অকালমৃত্যুতে বিপাকে পড়েছেন সকলে। লালের স্ত্রী বলেন, ‘‘ও জড়িবুটির ব্যবসা করা ছাড়াও একটি ছোট হোটেলে কাজ করত। এখন কী করে সংসার চলবে বুঝতে পারছি না।’’

লালের মৃত্যু প্রসঙ্গে সাঁকরাইলের বিধায়ক শীতল সর্দার বলেন, ‘‘শুনেছি পুলিশের তাড়া খেয়ে লাল পালাতে গিয়ে পড়ে যান। তার পরেই হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন। তবে অন্য কিছু হলে ময়নাতদন্তের রিপোর্টেই বোঝা যাবে।’’ একই সঙ্গে বিধায়ক বলেন, ‘‘পুলিশকে বলেছি, লাঠি না চালাতে। মানুষকে বুঝিয়ে প্রয়োজন হলে তাড়া করে ঘরে ঢোকাতে হবে।’’

সিটি পুলিশ কমিশনারেটের কর্তারা দাবি করেছেন, লকডাউন‌ ঘোষণা হওয়ার পর থেকে তাড়া করেই ভিড় হঠানো হচ্ছে। লাঠি চালানো হয় না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement