অভিযুক্ত রাঘিব পারভেজ। —নিজস্ব চিত্র।
বড় ছেলেকে বাঁচাতে পারভেজ পরিবার প্রথমে ছোট ছেলেকে কেন পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিল, সেই রহস্য এখনও ভেদ করা যায়নি। আর সেই ভাই-ভাই রহস্যের মধ্যেই বন্ধুর অপরাধ প্রমাণ করতে এ বার তাঁর এক বন্ধুকে অস্ত্র করতে চাইছে পুলিশ।
শেক্সপিয়র সরণি ও লাউডন স্ট্রিটের মোড়ে ১৬ অগস্টের জাগুয়ার দুর্ঘটনায় ধৃত রাঘিব পারভেজের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করতে তাঁর সে-রাতের সহযাত্রী এবং দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বন্ধুর সাহায্য নিচ্ছেন তদন্তকারীরা। লন্ডনে পড়াশোনা করা এবং পেশায় বস্ত্র ব্যবসায়ী ওই যুবককে গ্রেফতার নয়, দুর্ঘটনার প্রধান সাক্ষী করতে চাইছেন লালবাজারের কর্তারা। তাঁর উপস্থিতিতে শুক্রবার রাঘিবকে জেরা করা হয়। ওই বন্ধুর গোপন জবানবন্দি নথিভুক্ত করার জন্য আগামী সপ্তাহে আদালতে আবেদন জানানো হবে বলে লালবাজারের এক কর্তা জানান।
রাঘিবের ব্যবসায়ী বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে দুর্ঘটনার পুনর্গঠনও করা হয়েছে। এজেসি বোস রোডে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অধ্যক্ষের ছেলের জন্মদিনের পার্টি থেকে বেরিয়ে যে-সব রাস্তা দিয়ে তাঁরা দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিলেন বলে রাঘিব জেরায় জানিয়েছেন, সল্টলেকের ওই বন্ধুও সেই সব রাস্তার উল্লেখ করেন কি না, পুনর্গঠনের সময় তা খুঁটিয়ে দেখা হয়েছে। বন্ধু জানান, পার্টি থেকে বেরিয়ে বেশির ভাগ সময় রাঘিব ১০০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। ওই বন্ধু বলেছেন, দুর্ঘটনার আকস্মিকতায় তিনি এতটাই ভয় পেয়ে যান যে, কোনও ভাবে অ্যাপ-ক্যাব ধরে বাড়ি ফিরে নিজের মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখেন।
তদন্তকারীরা জানান, ওই দুর্ঘটনায় রাঘিবের বন্ধু বুকে, কাঁধে, হাঁটুতে ও কোমরে চোট পান। জাগুয়ার দুর্ঘটনার জেরে গাড়িতে থাকা ‘এয়ারব্যাগ’ খুলে রাঘিবের বন্ধুরও মুখ ঢেকে দেয়। তার জেরে ‘সিলিকন বাইট’ লেগে যায় বন্ধুর মুখে। সেই সব চিহ্নের কথাও ওই বন্ধুর শারীরিক পরীক্ষার রিপোর্টে নথিভুক্ত করা হয়েছে।
লালবাজার সূত্রের খবর, দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে আরসালান-রাঘিবের বাবা পারভেজ আখতার এবং তাঁর শ্যালক মহম্মদ হামজার মধ্যে বিরোধ বাধে। পুলিশের কাছে পারভেজের দাবি, রাঘিবের বিদেশ যাওয়ার কথা তিনি জানতেন না। তাঁকে বলা হয়েছিল, রাঘিবকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পারভেজ পুলিশের কাছে হাজির হতে চাইলে হামজা তাতে বাধা দেন। উল্টে ছোট ভাগ্নে আরসালানকে সঙ্গে নিয়ে হামজা চলে যান শেক্সপিয়র সরণি থানায় এবং দাবি করেন, তাঁর ওই ভাগ্নেই জাগুয়ার গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। পুলিশ তখনই আরসালানকে গ্রেফতার করে।