গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি। কটাক্ষ করে বলেছিলেন, ‘‘পুলিশ তো পুরো মেডেল পাওয়ার মতো কাজ করেছে!’’ সেই ‘ধমক’-এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ম্যাজিকের মতো কাজ হল। একটি খুনের মামলায় গত ছ’মাস ধরে যা হয়নি, তা এক দিনেরও কম সময়ে করে দেখাল পুলিশ।
এক ব্যক্তিকে ছাদ থেকে ফেলে তার পর পিটিয়ে খুনের অভিযোগ ছ’মাস ধরে পড়েছিল ব্যারাকপুরের পুলিশের কাছে। পুলিশ সেই মামলায় কাউকে গ্রেফতার করা তো দূর, খুনের ধারাই যোগ করেনি। অবশেষে বুধবার সেই মামলা কলকাতা হাই কোর্টে ওঠে। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনারকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক।
বিচারপতি বলেন, ‘‘এক জনকে ছাদ থেকে ধাক্কা মেরে নীচে ফেলে দেওয়া হল, তার পর ফের তাকে নীচে এসে পেটানো হল। এর পরেও পুলিশ খুনের ধারা যুক্ত করার মতো অপরাধ খুঁজেই পেল না! এই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার অবস্থা!’’ বিচারপতি বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রসিদির ডিভিশন বেঞ্চ পর্যবেক্ষণে এ-ও জানায় যে ‘‘এই ঘটনায় সবাইকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু পুলিশ তা করতে পারেনি। এই মামলায় তা হলে এ বার সিবিআই তদন্ত হওয়া উচিত।’’ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ ওই মন্তব্য করেছিল কলকাতা হাই কোর্ট। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নেওয়া হল পদক্ষেপ। বৃহস্পতিবার সকালেই কলকাতা হাই কোর্টে রিপোর্ট দিয়ে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট জানিয়ে দেয়, আদালত যা নির্দেশ দিয়েছিল তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে পুলিশ। পুলিশ ওই মামলায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছে। মামলায় যে খুনের ধারা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল আদালত, সেই খুনের ধারাও যুক্ত করা হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুন মাসে। বাড়িভাড়া চাওয়াকে কেন্দ্র করে খুন হন টিটাগড়ের বাসিন্দা গোবিন্দ যাদব। ভাড়াটে-সহ অন্যদের বিরুদ্ধে তাঁকে ছাদ থেকে ফেলে, তার পরে পিটিয়ে মারার অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনায় পুলিশ সরাসরি খুনের ধারা যুক্ত না করে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের করেছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। গত বছর অর্থাৎ জুন মাসে হওয়া এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত শুরু করে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশ। কিন্তু এ যাবৎ কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। অবশেষে ছ’মাস পর ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ওই গোবিন্দ যাদবের তিন আত্মীয়কে গ্রেফতার করল ব্যারাকপুর পুলিশ। ব্যারাকপুর কমিশনারেট বৃহস্পতিবার সকালে রিপোর্ট দিয়ে এই তথ্যই দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্টে।