বেশি নজর দু’চাকায়, কলকাতায় ছাড় পায় মদ্যপ চার চাকা

এত দিন জানা ছিল রাস্তা কারও একার নয়। বুধবার গায়ক অভিজিতের নতুন সংযোজনে বিষয়টা দাঁড়াল, রাস্তা সকলেরই, কেবল গরিবের বাপের নয়। বুধবার দুপুর থেকেই ‘দয়ালু’ সলমন খানের সাজা ঘোষণার খবর তুফান তুলেছিল পাড়ার চা দোকান থেকে শুরু করে কলেজ ক্যান্টিন, অফিসের ব্যস্ত ডেস্ক, এমনকী মেট্রোর ভিড়ে স্বল্প আলাপী দুই যাত্রীর মধ্যেও।

Advertisement

মধুরিমা দত্ত

শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৫ ১৭:১৮
Share:

শুনশান পার্ক স্ট্রিটে গাড়ি চলাচল।

এত দিন জানা ছিল রাস্তা কারও একার নয়। বুধবার গায়ক অভিজিতের নতুন সংযোজনে বিষয়টা দাঁড়াল, রাস্তা সকলেরই, কেবল গরিবের বাপের নয়। বুধবার দুপুর থেকেই ‘দয়ালু’ সলমন খানের সাজা ঘোষণার খবর তুফান তুলেছিল পাড়ার চা দোকান থেকে শুরু করে কলেজ ক্যান্টিন, অফিসের ব্যস্ত ডেস্ক, এমনকী মেট্রোর ভিড়ে স্বল্প আলাপী দুই যাত্রীর মধ্যেও। এ যেন খানিক বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড়, ১৩ বছর পর মুম্বইয়ের বিখ্যাত সেলিব্রেটির সাজা ঘোষণার চেয়েও বড় হয়ে দাঁড়াল গায়ক অভিজিতের মন্তব্য। গরিব কেন সেই মোটরের তলায় চাপা পড়বে, এই প্রশ্নের উত্তরে কী বলছে শহরের বিশেষ এক শ্রেণির মানুষ? কেমনই বা অবস্থা এই শহরের ফুটপাথবাসীদের?

Advertisement

মল্লিকবাজার, ৪ নম্বর ব্রিজ, পার্ক স্ট্রিটের একটা বড় অংশ জুড়েই গৃহহীনদের ঠিকানা এবং এই রাস্তাগুলোই শহরের বিভিন্ন নাইট ক্লাব থেকে ইএম বাইপাস, রাজারহাট এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে বেরনোর পথও। মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে ফুটপাথবাসীদের চাপা দেওয়ার ঘটনা এ শহরে যে নেই তা নয়। সপ্তাহের শেষ দিনগুলোতে, শনি-রবিবার পার্ক স্ট্রিট, ক্যামাক স্ট্রিট, থিয়েটার রোডের চেক পয়েন্টগুলোতে রাত ১০টার পর পুলিশি পাহারা বেড়ে যায়। এই অ়়ঞ্চলগুলোতেই শহরের বিখ্যাত নাইট ক্লাবগুলো ছড়িয়ে আছে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নাইট ক্লাব থেকে বেরনো চার চাকাগুলোকে ছেড়ে পুলিশি তল্লাশি জোরদার হয় দু’চাকার মোটরবাইক, বা অন্যান্য গাড়ির উপর। নাইট ক্লাব থেকে মদ্যপ অবস্থায় চার চাকা নিয়ে বেরনো লোকজন ফলত খুব সহজেই নজর এড়িয়ে যাচ্ছে পুলিশের।

বছর তেইশের রোহিত প্রায় প্রতি শনি-রবিবারই বন্ধুদের সঙ্গে নাইট ক্লাবে যায়। রোহিতের কথায়: “১৫ বছর বয়স থেকে ড্রাইভিং করছি। তখন লাইসেন্সও ছিল না। কিন্তু আমার ড্রাইভার সবসময়েই আমার সঙ্গে থাকতেন। এত কম বয়স থেকে গাড়ি চালাচ্ছি বলেই এখন একটু-আধটু মদ খেয়ে গাড়ি চালালেও কোনও অসুবিধা হয় না। মদ খেয়েও গাড়ি চালিয়ে বন্ধুদেরকে বাড়িতে আমিই ছেড়ে আসি।” রোহিতের বন্ধু সায়নের মতে, কলকাতায় এ ভাবে গাড়ি চালানোটা অনেক সহজ। এ রকম মদ খেয়ে গাড়ি চালিয়ে আমিও অনেক বার এসেছি, কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও দিন পুলিশ তল্লাশি করেনি। কোনও দিন যদি মনে হয় সমস্যায় পড়তে পারি, তখন রিস্ক নেব না। কিন্তু তার জন্য আগে থেকে ভেবে রাতের হুল্লোড়টা মাটি করা যায় না।

Advertisement


নাইট ক্লাবে হুল্লোড়

মদ খেয়ে নিরাপদে গাড়ি চালানো এবং নিজের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখায় অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী এই জেনারেশন ওয়াই আসলে মানতেই চায় না, কোনও দিন কোনও ভাবে তাদের আইনি ঝামেলায় পড়তে হতে পারে। কলকাতার চিত্রটা যতটা সহজ, অন্যান্য মহানগরীতে একেবারেই নয়। দিল্লি, মুম্বই এবং বেঙ্গালুরুর পুলিশি সচেতনতা এ বিষয়ে প্রবল। শনি-রবিবার করে, বিশেষত, শহরের মূল জায়গাগুলোতে রাত সাড়ে ৯টা থেকেই টহলদারি শুরু হয়ে যায় এবং ধরা পড়লে জরিমানাও বেশ বড় অর্থের। লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৫টি ট্রাফিক গার্ডে ২৫০ জনেরও বেশি পুলিশ মোতায়েন রয়েছে বিশেষ তল্লাশির জন্য। দক্ষিণ কলকাতায়, যেখানে নাইট ক্লাবগুলোর সংখ্যা সব থেকে বেশি, সেখানে একটি ট্রাফিক গার্ডে শ্বাসপরীক্ষা যন্ত্রের সংখ্যা মাত্র দুই। পুলিশ সূত্রের খবর, এই ট্রাফিক গার্ডে এক মাসে পাঁচ জন ব্যক্তি মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে ধরা পড়েছে। অন্য দিকে, ইএম বাইপাসে এই ধৃতের সংখ্যাটা সাত। এক বছরে আড়াই হাজার মদ্যপ গাড়িচালক ধরা পড়েছে কলকাতায়। বেঙ্গালুরুতে সংখ্যাটা ৬৬৫৩।

পুলিশেরই একাংশ বলছে, পুলিশ এবং বিচারবিভাগ সক্রিয় না হলে ফুটপাথবাসীদের জন্য এই ভোগান্তির কোনও শেষ দেখা যাচ্ছে না এই মুহূর্তে।

কলকাতা আনুমানিক ২৫০০ (লালবাজার সূত্রে)

দিল্লি ৬৬৫৩

মুন্বই ১৫০০০

২০০০ টাকা (প্রথম বার ধরা পড়ায়)

৫০০০ টাকা (একই অপরাধে ফের ধরা পড়লে)

২০০০-৫০০০ টাকা (প্রথম বার ধরা পড়ায়)

১০০০০ টাকা (একই অপরাধে ফের ধরা পড়লে)

২০০০-৫০০০ টাকা (প্রথম বার ধরা পড়ায়)

১০০০০ টাকা (একই অপরাধে ফের ধরা পড়লে)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement