ফাইল চিত্র।
হাত কাটার পরে, রেণু খাতুনকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছিল তাঁর স্বামীই, চার্জশিটে এমনটাই দাবি পুলিশের।
নার্সিংয়ের সরকারি চাকরির জন্য মনোনীত হওয়া পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের রেণুর হাত কাটার এই মামলায় ঘটনার ২৫ দিনের মাথায় আদালতে চার্জশিট দিল পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, রেণুর স্বামী শের মহম্মদ, শ্বশুর সিরাজ শেখ, শাশুড়ি মেহেরনিকা বিবি-সহ ছ’জনের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতন, খুনের চেষ্টা-সহ ছ’টি ধারায় এসিজেএম-এর কাছে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়। ৩০ জুন আদালতে জমা দেওয়া ৪১৮ পাতার চার্জশিটে প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ, চিকিৎসক, স্থানীয় বাসিন্দা-সহ ২৪ জনকে সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছে। ফরেন্সিক ল্যাবরেটরি এবং সিআইডি-র হস্তছাপ বিশেষজ্ঞদের কাছে রিপোর্ট পাওয়ার পরে আদালতে ‘সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট’ দেওয়া হবে বলে জানায় পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বর্ধমান গ্রামীণ) ধ্রুব দাসের দাবি, “যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ-সহ আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। বৈজ্ঞানিক তথ্যপ্রমাণের রিপোর্ট আসার পরে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা দেওয়া হবে।’’ রেণুর শ্বশুর ও শাশুড়ি বুধবার জামিন পান।
চার্জশিটে পুলিশের দাবি, রেণু চাকরির জন্য মনোনীত হওয়ার পরে থেকেই সংসারে অশান্তি শুরু হয়। তাঁকে স্বামী সন্দেহ করছিল। কী করে সরকারি চাকরি করেন, তা দেখে নেওয়ার হুমকিও দেয়। বিচারকের কাছে জবানবন্দিতেও রেণু একই দাবি করেছেন বলে চার্জশিটে জানানো হয়েছে। পুলিশের দাবি, মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের তালগ্রামের এক তুতোভাই ও তার দুই সঙ্গীকে নিয়ে সেখানে রেণুর হাত কাটার পরিকল্পনা করে শের মহম্মদ। সে অনুযায়ী, ৪ জুন রাতে একটি স্কুটারে শের-সহ চার জন কেতুগ্রামের কোজলসার বাড়িতে পৌঁছয়। রাত ১০টা নাগাদ ঘুমন্ত রেণুর মুখ বালিশ দিয়ে চেপে ধরে শের মহম্মদ। পা চেপে ধরে তার তুতো ভাই। বাকি দু’জনে টিন কাটার কাঁচি দিয়ে রেণুর ডান হাত কাটারির কোপে কব্জি কেটে নেয়। রেণুকে কাটোয়া হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরে, ‘কাটা হাত’ নিয়ে আসার নাম করে বেপাত্তা হয়ে যায় শের মহম্মদ।
জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের দাবি, “অভিযুক্তদের জামায় লেগে থাকা রক্তের দাগ ও ঘটনাস্থলে পাওয়া হাতের ছাপ পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে। ঘটনার আগে-পরে চার জনকে ওই বাড়িতে ঢুকতে-বেরোতে দেখা কয়েক জনের বয়ান নেওয়া হয়েছে।’’ রেণুর স্বামী-সহ চার জন এখনও জেলে। অভিযুক্তদের আইনজীবী ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “পুলিশ চার্জশিট জমা দিয়েছে। রেণুর শ্বশুর-শাশুড়িকে আটকে রেখে বিচার প্রক্রিয়া চালানোর মতো তথ্য ছিল না। তাই বিচারক জামিন দিয়েছেন।’’
সম্প্রতি পূর্ব বর্ধমান জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতরে কাজে যোগ দিয়েছেন রেণু। কয়েক দিন আগে বর্ধমান সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে আশ্বাস দিয়ে যান। এ দিন রেণু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন। পুলিশের উপরে ভরসা রয়েছে।’’