মাটি খুঁড়ে বধূর দেহ তুলল পুলিশ

অযোধ্যা পাহাড়ের জঙ্গলের কাছে মাটি খুঁড়ে এক বধূর দেহ উদ্ধার করল পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার বিকেলে পাহাড়ের হাতিনাদা গ্রামের অদূরে বাড়ুয়াজারা জঙ্গলের কাছাকাছি চাষের জমির মাটি খুঁড়ে গৌরী মান্ডি (৩০) নামে এক মহিলার দেহ উদ্ধার করা হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঘমুণ্ডি শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৬ ০১:২২
Share:

নিহত গৌরী মান্ডি।—নিজস্ব চিত্র

অযোধ্যা পাহাড়ের জঙ্গলের কাছে মাটি খুঁড়ে এক বধূর দেহ উদ্ধার করল পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার বিকেলে পাহাড়ের হাতিনাদা গ্রামের অদূরে বাড়ুয়াজারা জঙ্গলের কাছাকাছি চাষের জমির মাটি খুঁড়ে গৌরী মান্ডি (৩০) নামে এক মহিলার দেহ উদ্ধার করা হয়। জেলা পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, ‘‘ওই বধূকে খুন করে প্রমাণ লোপাটের জন্য মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল। খুনের অভিযোগে বধূটির স্বামী-সহ মোট তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে।’’

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা থানা সত্যপুর গ্রামের বাসিন্দা গৌরীর কয়েক বছর আগে বিয়ে হয় বাঘমুণ্ডি থানা এলাকার হাতিনাদা গ্রামের ধীরেন মান্ডির সঙ্গে। হাতিনাদা গ্রামটির অবস্থান অযোধ্যা পাহাড়ের উপরে। ওই গ্রামে বসতি কম বলে তাঁদের মধ্যে নিয়মিত দেখা হয়। কিন্তু কয়েকদিন ধরে গৌরীকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছিল না। তা স্থানীয় বাসিন্দাদের নজরে আসে। তাঁরা ভেবেছিলেন ওই বধূ বুঝি কোথাও গিয়েছেন। কিন্তু তাঁর শ্বশুরবাড়ির কয়েকজনের আচরণ অস্বাভাবিক মনে হওয়ায়, তাঁদের মনে সন্দেহ চেপে বসে। শুক্রবার গ্রামেরই কয়েকজন বধূটির শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে জিজ্ঞেস করেন, গৌরী কোথায়? তাঁরা উত্তর দিতে আমতা আমতা করায় গ্রামের লোকজনের সন্দেহ আরও বাড়ে। তাঁরা তখন বধূর স্বামীকে চেপে ধরেন। অভিযোগ, গ্রামের লোকজনের চাপের মুখে বধূটির শ্বশুরবাড়ির লোকজন স্বীকার করেন যে গৌরীকে তাঁরা মেরে ফেলেছেন। এরপরেই গ্রামের লোকজন পুলিশে খবর দেন।

খবর পেয়ে পুলিশ গৌরীর স্বামী ধীরেন ও তাঁর বাড়ির অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। পুলিশের দাবি, জেরায় তাদের কাছে ভেঙে পড়ে ওরা স্বীকার করেন গৌরীকে মেরে ফেলেছেন। তারপরে জঙ্গলের অদূরে চাষের জমিতে দেহটি পুঁতে দেওয়া হয়েছে। তারপরেই ধীরেন-সহ অন্যদের নিয়ে পুলিশ বাড়ুয়াজারা জঙ্গলের কাছে চাষের জমিতে মাটি খুঁড়তে শুরু করে। পুলিশের দাবি, ধীরেনের বাড়ির লোকজনেরাই দেখিয়ে দেন কোথায় গৌরীর দেহ পোঁতা রয়েছে। তারপর জমি থেকে প্রায় ফুট তিনেক মাটি খুঁড়তেই গৌরীর দেহ উদ্ধার হয়। দেহটি মাটির নীচে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় শোয়ানো ছিল।

Advertisement

বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, গত ৩ জুলাই থেকে গৌরীকে আর তাঁরা দেখেননি। পুলিশ জানিয়েছে, বেশ কয়েকদিন মাটির নীচে থাকার ফলে দেহে পচন ধরে গিয়েছিল। দেহের সুরতহাল করেন বাঘমুণ্ডির বিডিও অভিষেক বিশ্বাস। তারপর দেহ তুলে ময়নাতদন্তে পাঠায় পুলিশ। শনিবার পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে বধূটির দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়।

জেলা পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, ‘‘স্থানীয় এক ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বধূর স্বামী ধীরেন মান্ডি ও তাঁর দুই ভাই সুভাষ মান্ডি ও সুশান্ত মান্ডিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার তাদের আদালতে তোলা হলে ধৃতদের তিনদিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’’ পুলিশের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে তারা মনে করছে গৌরীকে তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন শ্বাসরোধ করে খুন করেছে। কিন্তু কী কারণে খুন করা হয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে ওই বধূর সঙ্গে শ্বশুরবাড়ির লোকেদের অশান্তি চলছিল বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।

গৌরীর মা মৌলি কিস্কুও মেয়ের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানের দাবি তুলেছেন। শনিবার পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে তিনি বলেন, ‘‘গত শনিবার মেয়ের সঙ্গে আমার শেষবার ফোনে কথা হয়েছিল। সে জানিয়েছিল কিছুদিন পরেই আমার কাছে আসবে। কিন্তু কবে আসবে তা নিশ্চিত করে কিছু জানায়নি। কিন্তু এরই মধ্যে যে কী হয়ে গেল বুঝতে পারছি না।’’ তিনি জানান, শুক্রবার ডেবরা থানা থেকে তাঁদের খবর দেওয়া হয়। কিন্তু কী ঘটেছে তা জানানো হয়নি। এ দিন পুরুলিয়ায় এসে তিনি দুঃসংবাদ শোনেন। তিনি বলেন, ‘‘কেন আমার মেয়েকে খুন করা হল, তা জানতে চাই। সেই সঙ্গেই দোষীদের কঠোর শাস্তি চাইছি।’’ যদিও এ দিন পুরুলিয়ার আদালত চত্বরে ধৃত ধীরেনের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement