Arjun Singh

অর্জুনের বাড়িতে তল্লাশি, নোটিসও

ভাটপাড়া-নৈহাটি সমবায় ব্যাঙ্কের বহু কোটি টাকা তছরুপের মামলায় এর আগেও দু’বার অর্জুনের বর্তমান বাসভবন মজদুর ভবনে তল্লাশিতে গিয়েছিল পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২০ ১২:০০
Share:

অর্জুন সিংহের বাড়িতে তল্লাশি পুলিশের। নিজস্ব চিত্র।

ব্যাঙ্ক-জালিয়াতি মামলায় নাম জড়িয়েছিল তাঁর ভাইপোর। সেই মামলায় ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহকে নোটিস ধরাল পুলিশ। বুধবার দিনভর তল্লাশির পরে অর্জুনের বাড়ি থেকে কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করল ব্যারাকপুর কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগ। অর্জুন বিষয়টিকে তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূলের রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত লড়াই বলে অভিযোগ করলেও পুলিশ তা উড়িয়ে দিয়েছে। পুলিশের বক্তব্য, তাদের নথিই আদালতে কথা বলবে। এই মামলা দ্রুত গুটিয়ে ফেলা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্তারা। মূল অভিযুক্ত, অর্জুনের ভাইপো সঞ্জিত (পাপ্পু) সিংহের নাগাল এ দিনও পাননি গোয়েন্দা অফিসারেরা। তাঁর নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা চেয়ে আদালতে যাচ্ছে পুলিশ।

Advertisement

ভাটপাড়া-নৈহাটি সমবায় ব্যাঙ্কের বহু কোটি টাকা তছরুপের মামলায় এর আগেও দু’বার অর্জুনের বর্তমান বাসভবন মজদুর ভবনে তল্লাশিতে গিয়েছিল পুলিশ। দু’বারই অর্জুনের পুত্র বিধায়ক পবন সিংহ পুলিশকে ঢুকতে বাধা দেন। তিনি জানিয়েছিলেন, সার্চ ওয়ারেন্ট ছাড়া তাঁরা পুলিশকে বাড়িতে ঢুকতে দেবেন না। গোয়েন্দা বিভাগ ব্যারাকপুর আদালতে সার্চ ওয়ারেন্টের জন্য আবেদন করে। মঙ্গলবার আদালত তা মঞ্জুর করে।

অর্জুন সকাল থেকেই বাড়িতেই ছিলেন। দুপুরে গোয়েন্দা বিভাগের একটি দল মজদুর ভবনে যায়। প্রায় আট ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চলে। অর্জুনের শোওয়ার ঘর ছাড়া বাকি সব ঘরেই তল্লাশি চলে। সাংসদের অফিস থেকে কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়। কিন্তু যার খোঁজে পুলিশ হানা দিল, সেই পাপ্পুর নাগাল এ দিন পায়নি পুলিশ। মজদুর ভবন লাগোয়া বাড়িটি পাপ্পুর। সেই ঘর তালা বন্ধ ছিল। পুলিশ তালা ভেঙে সেখানে ঢোকে। পরে অর্জুনই পুলিশকে পুরো বাড়ি ঘুরিয়ে দেখান। এই মামলায় মনোজ সিংহ এবং কামতা সিংহ নামে আরও দু’জনের নাম পেয়েছে পুলিশ। তাঁদের নোয়াপাড়ার বাড়িতেও এ দিন তল্লাশি চালিয়ে কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

Advertisement

পাপ্পুই এই মামলার মূল অভিযুক্ত। তা হলে অর্জুনের বাড়িতে তল্লাশি কেন? ব্যারাকপুর কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান অজয় ঠাকুর জানান, ওই সমবায় ব্যাঙ্ক বেশ কয়েক জনকে ঋণ দেয়। তাঁরা সকলেই ছিলেন ভাটপাড়া পুরসভার ঠিকাদার। পুরসভার বিভিন্ন কাজের জন্য তাঁদের ঋণ দেওয়া হয়। শর্ত ছিল, সমবায় ব্যাঙ্কের মাধ্যমেই তাঁদের বিল মেটানো হবে। তখনই তাঁদের ঋণের টাকা কেটে নেওয়া হবে। পরে দেখা যায়, যে কাজের জন্য ঋণ, সেই কাজও হয়নি, আবার ঋণের টাকাও শোধ দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ হলে তদন্তে জানা যায়, ঋণের টাকা একটি সংস্থার অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছে। ‘রকওয়েল রিসোর্সেস আর্থ মুভার্স প্রাইভেট লিমিটেড’ নামের সংস্থাটি পাপ্পু সিংহের বলে পুলিশের দাবি। সংস্থার ঠিকানা মজদুর ভবন।

আরও পড়ুন: বৈঠক এড়াল বিশ্বভারতী, কাটল না জট

গোয়েন্দা প্রধান বলেন, “ভাটপাড়া পুরসভা এবং ওই সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান ছিলেন অর্জুন সিংহ। যে সংস্থা আর্থিক তছরুপে অভিযুক্ত, তার ঠিকানাও সাংসদের বাসভবন। আমরা বেশ কিছু নথি পেয়েছি। সঙ্গত কারণেই সাংসদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিস পাঠিয়েছি আমরা।”

অর্জুন বলেন, “আমার সঙ্গে রাজনৈতিক লড়াইয়ে মুখ্যমন্ত্রী হেরে গিয়েছেন। পুলিশ নিয়ে লড়াইয়ে নেমেছেন। সেই লড়াইয়েও তিনি হারবেন। কিছু লোককে ডেকে পুলিশ সাদা কাগজে সই করিয়ে সেগুলিকে অভিযোগপত্র বানিয়েছে।” বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘ব্যারাকপুর পুলিশের কর্মসূচিই হয়ে দাঁড়িয়েছে, সুযোগ তৈরি করে অর্জুন সিংহের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়া। তিনি বাড়িতে না থাকলে তাঁর পরিবারের লোকেদের শান্তি নষ্ট করা হয়। এ রাজ্যে বিরোধী সাংসদদের শান্তিতে বাঁচার সুযোগ নেই।” বিধানসভায় সরকার পক্ষের মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী তো অর্জুনকে ব্যাঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করতে বলেননি। তিনি পুলিশও পাঠাননি। তল্লাশিতে সায় দিয়েছে আদালত।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement