Mamata Banerjee

তৃণমূলে কঠোর, উল্টো পক্ষে নরম কেন? পুলিশকে কড়া ধমক মুখ্যমন্ত্রীর, সমালোচনায় বিরোধীরা

ডেবরায় আয়োজিত প্রশাসনিক বৈঠকে বুধবার অনেক সরকারি বিভাগই মুখ্যমন্ত্রীর ধমক খেয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৭:৩৬
Share:

পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর। —ফাইল চিত্র।

পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুললেন খোদ পুলিশমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী। বিরোধী দলগুলির প্রতি নরম আচরণ করছে পুলিশ, কিন্তু তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলেই সক্রিয় হচ্ছে। বুধবার পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরায় প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই মন্তব্য করেছেন। সঙ্গে সঙ্গেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে রাজ্যের রাজনৈতিক শিবিরে। বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেস একযোগে আক্রমণ করেছে মুখ্যমন্ত্রীকে।

Advertisement

ডেবরায় আয়োজিত প্রশাসনিক বৈঠকে বুধবার অনেক সরকারি বিভাগই মুখ্যমন্ত্রীর ধমক খেয়েছে। কিন্তু পুলিশের প্রতিই মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা সবচেয়ে কড়া ছিল এ দিন। তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ পেলেই পুলিশ সক্রিয় হচ্ছে এবং ধরপাকড় করছে, কিন্তু বিরোধী দলগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে পুলিশের সেই ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না— এ দিন সরাসরি এই রকমই বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন অভিযোগ পেলেই তৃণমূল কর্মীরা গ্রেফতার? কেনই বা বিরোধীদের ক্ষেত্রে উল্টো ছবি? বিরোধীদের ক্ষেত্রে কি পুলিশ এখন ‘ব্যালান্স করছে’? প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। পুলিশকর্তাদের উদ্দেশে তাঁর জিজ্ঞাসা, ‘‘তৃণমূলকর্মীরা কি সহজ, সুলভ?’’

মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যে স্বাভাবিক কারণেই প্রবল অস্বস্তিতে পড়তে হয় পুলিশকর্তাদের। সকলেই প্রায় নিরুত্তর বসে থাকেন। কারও কাছে কোনও জবাব ছিল না। তৃণমূল যে হেতু প্রশাসনে রয়েছে, সে হেতু তৃণমূলকর্মীরা প্রশাসনের বিরুদ্ধে কিছু করবেন না— এটা বুঝে নিয়েই কি হেনস্থা করছে পুলিশ? এমন প্রশ্নও শোনা যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে।

Advertisement

আরও পড়ুন: ঝুলে রইল রাজীবের ভাগ্য, কাল ফের শুনানি হাইকোর্টে​

পুলিশের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর এই ধমক ‘বিস্ময়কর’— মনে করছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন, এ রাজ্যে ঠিক তার উল্টোটাই তো ঘটে! বিরোধী দলগুলির কর্মীদেরকে যখন তখন হেনস্থা করে পুলিশ। আর তৃণমূলের বিরুদ্ধে আমরা যখন থানায় যাই, তখন পুলিশ এফআইআর-ই নিতে চায় না। যদি বা এফআইআর নেয়, পদক্ষেপ কিছুতেই করে না।’’ দিলীপ আরও বলেন, ‘‘আমাদের বিরুদ্ধে ২৮ হাজার মামলা দিয়ে রেখেছে গোটা রাজ্যে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক’টা অভিযোগ পুলিশ নেয়? মুখ্যমন্ত্রী তথ্য চাইলে দিয়ে দিতে পারি।’’

ঝাড়গ্রাম থানার আইসি-কে এ দিন আলাদা করে ধমকেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ঝাড়গ্রামে পুলিশ একেবারেই ভাল কাজ করছে না বলে মুখ্যমন্ত্রী এ দিনের প্রশাসনিক বৈঠকে মন্তব্য করেন। ঝাড়গ্রামের আইসি-কে প্রথমে তিনি জিজ্ঞাসা করেন যে, ঝাড়গ্রাম থানার ভার তাঁর হাতে কত দিন রয়েছে? আইসি জানান, এক বছর। তার পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আপনাকে তো কাজ করার জন্য এখানে পাঠানো হয়েছিল। আপনি তো অকাজ করছেন।’’ আইসি-কে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, ‘‘ভাবছেন কি আমরা কোনও খবর পাই না?’’

সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হওয়া প্রশাসনিক বৈঠকে পুলিশ অফিসারকে মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে ধমক দিয়েছেন, তার নিন্দাতেও সরব হয়েছেন দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর উচিত সরকারি কর্তাদের বা পুলিশের মনোবল বাড়ানো। তার বদলে সবার সামনে যে ভাবে তিনি অপমান করলেন এক জন পুলিশ অফিসারকে, তাতে ওই অফিসার আর কাজ করতে পারবেন?’’ দিলীপের কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী চান পুলিশ তাঁর দলের ক্যাডার হিসেবে কাজ করুক। সেটা না হলেই ওঁর রাগ হয়ে যাচ্ছে।’’

আরও পড়ুন: পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় আপত্তি নেই, ‘টেররিস্তানে’র সঙ্গে কথা নয়: জয়শঙ্কর​

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রও তীব্র কটাক্ষ করেছেন মুখ্যমন্ত্রীকে। পুলিশ সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য শুনে সোমেনের বক্তব্য, ‘‘তিনি কোন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বুঝতে পারছি না। পুলিশ সম্পর্কে যে কথা তিনি বলছেন, সে রকম কিছু এ রাজ্যে হয় বলে তো শুনিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি এখন নিজেকে অন্য কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ভাবছেন?’’ সোমেনের অভিযোগ, ‘‘এ রাজ্যে বিরোধী দলের ছেলেগুলোকে সব জেলায় মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। আর তৃণমূলের অনুব্রত পুলিশকে থাপ্পড় মারছেন। এই হচ্ছে এ রাজ্যের পুলিশের অবস্থা। কিসের ভিত্তিতে মুখ্যমন্ত্রী কী বলছেন, জানি না।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির কটাক্ষ, ‘‘শুনলাম বিদ্যাসাগরের জন্মভিটেয় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন যে, বিদ্যাসাগর জ্যোতির্বিজ্ঞানী ছিলেন। আর ডহরবাবুর গল্প তো আমরা সবাই জানি। তাই মুখ্যমন্ত্রী কখন কী বলেন, সে কথার কী অর্থ হয়, সেটা শুধু তিনি নিজেই বলতে পারবেন। আমরা পারব না।’’

বিধানসভার বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর গলাতেও একই সুর। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আবোলতাবোল কথা বলছেন। তাঁর কথার কী জবাব দেব!’’ সুজনের কথায়, ‘‘তৃণমূল কর্মীদের গ্রেফতার করবে পুলিশ? তৃণমূলের বিরুদ্ধে কোনও এফআইআর-ই নেওয়া হয় না। এই সব কথা বলে মুখ্যমন্ত্রী আসলে পুলিশকে ধমকাচ্ছেন। পুলিশ যাতে আরও বেশি করে দাসত্ব করে, সেটা নিশ্চিত করতে চাইছেন।’’

তৃণমূল স্বাভাবিক ভাবেই মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যকেই সমর্থন করছে। যে জেলায় বসে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন পুলিশকে ধমকেছেন, সেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন, তা তথ্যের ভিত্তিতেই বলেছেন, শান্তি রক্ষার স্বার্থেই বলেছেন। এ নিয়ে বিরোধীদের উষ্মা প্রকাশ করার কোনও কারণ নেই।’’ অজিতের কথায়, ‘‘বিরোধীদের তো আর শান্তি রক্ষা করার দায় নেই। তাঁদের কাজই তিলকে তাল করা। তাই নানা রকম কথা বলছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement