ফেসবুক পোস্টের জন্য শিক্ষক এবং শিল্পীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছে বালুরঘাটের পুলিশ। —প্রতীকী ছবি।
ফেসবুক পোস্টে পুলিশের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বড়সড় হেনস্থার মুখে শিক্ষক। তাঁর ফেসবুক পোস্ট নিজের ওয়ালে শেয়ার করে পুলিশি হেনস্থার মুখে এক চিত্রশিল্পীও। ঘটনা দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটের। পুজোর পাঁচ দিনে বালুরঘাট শহরে রোজ ১২ ঘণ্টা করে গাড়ি এবং বাইক চলাচল বন্ধ করে রেখেছিল পুলিশ। ফেসবুক পোস্টে পুলিশের এই সিদ্ধান্তেরই সমালোচনা হয়েছিল। যাঁরা সেই সব ফেসবুক পোস্ট করেছিলেন, তাঁদের কয়েক জনকে থানায় ডেকে পাঠিয়ে দীর্ঘক্ষণ জেরা করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি আইন-সহ বিভিন্ন ধারায় তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের করেছে পুলিশ। পুলিশের এ হেন পদক্ষেপে হতচকিত বালুরঘাটের অনেকেই।
ষষ্ঠী থেকে দশমী, বিকেল ৪টে থেকে পরের দিন ভোর ৪টে পর্যন্ত বালুরঘাট শহরের রাস্তায় বাইক এবং গাড়ি চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল জেলা পুলিশ। যাঁরা পুজোর বালুরঘাটে বেড়াতে বা ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছিলেন, গাড়ি এবং বাইক চলাচল পুরোপুরি বন্ধ থাকায় তাঁরা বেজায় বিড়ম্বনায় পড়েন। ছাড় ছিল শুধু টোটো চলাচলে। টোটোয় চড়েই ঠাকুর দেখুন বালুরঘাটের মানুষ— এমনই বার্তা দিয়েছিল জেলা পুলিশ।
এই রকম কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখেই একাধিক ধারায় অভিযোগ দায়ের করে ফেলেছে বালুরঘাটের পুলিশ।
এই পদক্ষেপকে অনেকেরই ‘পুলিশি বাড়াবাড়ি’ বলে মনে হয়েছিল। তাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হন পুলিশের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদীদের অন্যতম বালুরঘাটের এক প্রাথমিক শিক্ষক কৌশিকরঞ্জন খাঁ। পুজোর বালুরঘাটে রাস্তায় বেরিয়ে কী রকম হয়রান হতে হচ্ছে, ফেসবুক পোস্টে বিশদে লেখেন তিনি। পুলিশের তীব্র সমালোচনাও করেন। তাঁর পোস্টটি শেয়ার করেছিলেন চকভৃগু এলাকার চিত্রশিল্পী ব্রতীন সরকার। পুজো মিটতেই তাঁদের কাছে পৌঁছে গিয়েছে পুলিশি তলব।
আরও পড়ুন: দিলীপ ঘোষের উপর হামলায় রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ বিজেপির
পুলিশের চিঠি পেয়ে বৃহস্পতিবার থানায় হাজিরা দিয়েছিলেন কৌশিক এবং ব্রতীন। তাঁদের পুলিশ দীর্ঘক্ষণ জেরা করেছে বলে খবর। ফেসবুকে পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন ধারায় মামলা করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, কৌশিক-ব্রতীনরা সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তি ও উত্তেজনা ছড়িয়েছেন।
আরও পড়ুন: নয়া ইতিহাসে সঙ্ঘের নজর তৃণমূলে
কৌশিক-ব্রতীনদের বক্তব্য, নাগরিকের মতপ্রকাশের অধিকারে পুলিশ হস্তক্ষেপ করতে পারে না। তাঁরা ফেসবুকে নিজেদের মত প্রকাশ করেছেন এবং সেই পোস্টের বক্তব্য পুলিশের বিরুদ্ধে যাচ্ছে বলেই পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করছে, এমনটা বেনজির। পুলিশ বলছে, কোনও সিদ্ধান্তের বিরূপ সমালোচনায় আপত্তি নেই। কিন্তু কৌশিক-ব্রতীনরা ফেসবুক পোস্টে অশালীন কথাবার্তা লিখেছেন। সেই সব পোস্ট দেখে উৎসাহিত হয়ে আরও অনেকে পুলিশকে কুরুচিকর ভাষায় আক্রমণ করেছে। তাই পুলিশকে পদক্ষেপ করতে হয়েছে।