তিনটি বাবুর ত্রিকোণ জটেই চাবির খোঁজ

বৃত্তান্তটা বাবুরই। তবে এক-আধ জন নয়। দু’জনও নয়। মধ্যমগ্রামের বাবু-হত্যার কাহিনিতে বাবু তিন-তিন জন! এক বাবু আর নেই। কিন্তু তাকে ঘিরেই অন্য দুই বাবুর কাণ্ডকারখানার গোলকধাঁধায় ঘুরে বেড়াচ্ছে পুলিশ। তিন বাবুর মধ্যে মিল আর অমিল দু’‌টো‌ই আছে। মিল বলতে তিন বাবুই প্রোমোটার এবং জমি-মাফিয়া। এলাকা দখল আর সিন্ডিকেটের লাগাম হাতে নেওয়ার কাজিয়ার পরিণামেই রক্তপাত বলে পুলিশের ধারণা। তারা জানাচ্ছে, যুযুধান দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মিটমাট করিয়ে দেওয়ার টোপ ফেলেই এক বাবুকে ডেকে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৫ ০৩:৪৮
Share:

মদন মিত্রের সঙ্গে একই ফ্রেমে বাবু মণ্ডল (উপরে)। ড্রাইভিং লাইসেন্সে সেই তাঁরই নাম সোমনাথ রায়চৌধুরী। — নিজস্ব চিত্র

বৃত্তান্তটা বাবুরই। তবে এক-আধ জন নয়। দু’জনও নয়। মধ্যমগ্রামের বাবু-হত্যার কাহিনিতে বাবু তিন-তিন জন! এক বাবু আর নেই। কিন্তু তাকে ঘিরেই অন্য দুই বাবুর কাণ্ডকারখানার গোলকধাঁধায় ঘুরে বেড়াচ্ছে পুলিশ।

Advertisement

তিন বাবুর মধ্যে মিল আর অমিল দু’‌টো‌ই আছে। মিল বলতে তিন বাবুই প্রোমোটার এবং জমি-মাফিয়া। এলাকা দখল আর সিন্ডিকেটের লাগাম হাতে নেওয়ার কাজিয়ার পরিণামেই রক্তপাত বলে পুলিশের ধারণা। তারা জানাচ্ছে, যুযুধান দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মিটমাট করিয়ে দেওয়ার টোপ ফেলেই এক বাবুকে ডেকে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে।

তিন বাবুর মধ্যে অমিল হল, এক সঙ্গী-সহ প্রথম বাবু ঘাতকের শিকার। আর সেই খুনের মূল ষড়যন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয় বাবুকে খুঁজছে পুলিশ। আবার রবিবারের তদন্তে ওই হত্যাকাণ্ডেরই ‘লিঙ্কম্যান’ হিসেবে উঠে এসেছে আর এক বাবু অর্থাৎ তৃতীয় বাবুর নাম।

Advertisement

প্রথম জন বাবু সেন।

দ্বিতীয় জন বাবু মণ্ডল।

তৃতীয় জন বাবু ঘোষ।

দ্বিতীয় বাবু নামমাহাত্ম্যে প্রথম আর তৃতীয় বাবুকে অনেকটাই পিছনে ফেলে দিয়েছে বলে পুলিশের খবর। তদন্তে নেমে তারা জানতে পেরেছে, দ্বিতীয় বাবু অর্থাৎ চক্রী বাবু অন্যত্র সোমনাথ রায়চৌধুরী নামেও পরিচিত। মধ্যমগ্রামের জোড়া খুনের রহস্য ভেদ করতে নেমে পুলিশ আপাতত ঠোক্কর খেয়ে চলেছে তিন বাবুর ত্রিকোণে।

কী বলছে পুলিশ? ঘটনার সঙ্গে তৃতীয় বাবুর যোগসূত্র আবিষ্কারের দৌলতেই মধ্যমগ্রামে বাবু সেন এবং তার সঙ্গী নিতাই পাল ওরফে নুঙ্কাই খুনের তদন্তে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে বলে পুলিশের দাবি। উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চোধুরী রবিবার জানান, তৃতীয় বাবুই ওই জোড়া খুনের লিঙ্কম্যান। তিনি বলেন, ‘‘ওই লিঙ্কম্যানের নাম বাবু ঘোষ। লেক টাউনের বাসিন্দা।’’

পুলিশের দাবি, বাবু সেন ওরফে তারক ঘোষকে খুন করার জন্য এই বাবু ঘোষকেই বরাত দিয়েছিল কামারহাটির বাবু মণ্ডল। জোড়া খুনের ঘটনাটি ঘটে গত বৃহস্পতিবার। তদন্তকারীরা জানান, ঝগড়াঝাঁটি মিটিয়ে নেওয়ার কথা বলে এই বাবু ঘোষই সে-দিন বাবু সেনকে মধ্যমগ্রামের প্রদীপ দেব ওরফে পদ-র বাড়িতে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয় ও তৃতীয় বাবুকে ধরতে শুধু এ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা নয়, ভিন্‌ রাজ্যেও তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।

তদন্তকারীরা জানান, ‘লিঙ্কম্যান’ বাবু ঘোষ ধরা না-পড়লেও তার শাগরেদ দেবরাজ মাইতিকে রবিবার সন্ধ্যায় লেক টাউন থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই নিয়ে বাবু সেন খুনের ঘটনায় তিন জন ধরা পড়ল। পুলিশি সূত্রে জানা গিয়েছে, দেবরাজই মোটরবাইক চালিয়ে বাবু ঘোষকে মধ্যমগ্রামে পদ-র বাড়িতে নিয়ে যায়। খুনের সময়েও সেই মোটরসাইকেলটিকে ঘটনাস্থলে দেখা গিয়েছিল বলে পুলিশকর্তাদের দাবি।

এই খুনের ঘটনায় ধৃত পদকে রবিবার বারাসতে আদালতে তোলা হয়। তাকে ১৪ দিন পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। শনিবার বিকেল থেকেই পদকে দফায় দফায় জেরার সঙ্গে সঙ্গে তাকে নিয়ে মধ্যমগ্রাম, বেলঘরিয়া, কামারহাটি এলাকায় জায়গায় তল্লাশি চালায় পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের মূল চক্রী বলে অভিযুক্ত বাবু মণ্ডলের বেলঘরিয়ার একটি বাড়ি এবং দক্ষিণেশ্বরে তার একটি হোটেলেও এ দিন অভিযান চালানো হয়। ওই বাড়ি ও হোটেল সিল করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান পুলিশকর্তারা। তদন্তকারীরা জানান, এর মধ্যেই মধ্যমগ্রামে জোড়া খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আটক করা হয়েছে বেশ কয়েক জনকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement