TET Protest

অরুণিমার হাতে কামড় মানুষেরই, বলল হাসপাতাল, অভিযুক্ত পুলিশের বিরুদ্ধে শুরু তদন্ত

২০১৪ সালের টেট পাশ করা অরুণিমা অন্যদের সঙ্গে কলকাতার রাজপথে বিক্ষোভে নেমেছিলেন বুধবার। ক্যামাক স্ট্রিটে বিক্ষোভ চলাকালীন অন্যদের সঙ্গে তাঁকেও পুলিশ ভ্যানে তোলা হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২২ ০৬:১০
Share:

মহিলা চাকরিপ্রার্থীর হাতে পুলিশের কামড়! ফাইল চিত্র।

সাগর দত্ত হাসপাতালের পরীক্ষায় চাকরিপ্রার্থী অরুণিমা পালের হাতে ‘হিউম্যান বাইট’ বা মানুষের কামড়ের আঘাত প্রমাণিত হয়েছে। ওই হাসপাতালের চিকিৎসক তাঁকে এই মর্মে শংসাপত্র দিয়েছেন যে, মানুষের কামড়ের ফলেই ওই কর্মপ্রার্থীর হাতে আঘাত লেগেছে। যে-পুলিশকর্মী তাঁকে কামড়ে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ, তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করছেন অরুণিমা।

Advertisement

২০১৪ সালের টেট পাশ করা অরুণিমা অন্যদের সঙ্গে কলকাতার রাজপথে বিক্ষোভে নেমেছিলেন বুধবার। ক্যামাক স্ট্রিটে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরের সামনে বিক্ষোভ চলাকালীন অন্যদের সঙ্গে তাঁকেও পুলিশ ভ্যানে তোলা হয়। অভিযোগ, তখন এক মহিলা পুলিশকর্মী অরুণিমাকে কামড়ে দেন। ঘটনার দু’দিন পরে শুক্রবার সরকারি হাসপাতাল অরুণিমার হাতে মানুষের কামড়ের বিষয়টি নিশ্চিত করল।

অরুণিমা বলেন, ‘‘আমি এখনও পুরোপুরি সুস্থ নই। জামিনের শর্ত মেনে এ দিন কলকাতায় শেক্সপিয়র সরণি থানায় হাজিরা দিতে হয়েছিল।’’ পুলিশের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানাবেন কি? ‘‘আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করব,’’ বলেন অরুণিমা।

Advertisement

বুধবারের কামড় কাণ্ডের পরে অভিযুক্ত পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বদলে আহত অরুণিমা-সহ ৩০ জনকে গ্রেফতার করে তাঁদের বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা করেছিল পুলিশ। বৃহস্পতিবার তাঁদের সকলেই আদালত থেকে জামিন পান। কর্মপ্রার্থীর হাতে পুলিশি দংশন নিয়ে চার দিকে সমালোচনা শুরু হতেই নিজেদের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে আসে লালবাজার। ওই পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে শুক্রবার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে লালবাজার।

লালবাজার সূত্রের খবর, দক্ষিণ ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনার (২) বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায়কে ঘটনার ‘এনকোয়ারি’ বা অনুসন্ধান করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি তদন্ত শেষ করে ডিসি (দক্ষিণ)-কে রিপোর্ট দেবেন। অরুণিমা বলেন, ‘‘এই বিভাগীয় তদন্ত যেন নিরপেক্ষ হয়।’’ পুলিশ জানিয়েছে, ডেপুটি কমিশনার অভিযুক্ত মহিলা পুলিশকর্মীর সঙ্গে কথা বলবেন। কথা বলবেন অরুণিমার সঙ্গেও। সে-দিন ঠিক কী হয়েছিল, তাঁদের কাছে তা জানতে চাইবেন। এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজও খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে সে-দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত অন্য পুলিশকর্মীদের বক্তব্য রেকর্ড করবেন ওই অফিসার। অভিযুক্ত ওই মহিলা পুলিশকর্মী এখন হাসপাতালে ভর্তি আছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এই বিতর্কে ইন্ধন জুগিয়েছে পিংলার তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক অজিত মাইতির মন্তব্য। তিনি শুক্রবার বলেন, ‘‘পুলিশকে কামড়ালে কি পুলিশ রসগোল্লা খাওয়াবে?’’ যদিও শাসক দলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায়ের মতে, বিক্ষোভ বা অবরোধে হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হলেও পুলিশের সংযত থাকা উচিত। তিনি বলেন, ‘‘কামড়ে পুলিশের ভূমিকা কলঙ্কিত হয়েছে। চাকরিপ্রার্থীরা যে-ভাবে রাস্তা আটকে বসেছিলেন, তাতে পুলিশকে হস্তক্ষেপ করতেই হত। পাশাপাশি, পুলিশেরও সংযত থাকা উচিত।’’

বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি কামড়ে দেওয়াটাকে সমর্থন করছি না। কিন্তু হঠাৎ গুরুতর কোনও প্ররোচনা তৈরি হলে পাল্টা এই রকম ঘটনা কোনও অপরাধ নয়।’’ স্পিকারকে বিঁধে রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ট্রিগার হ্যাপি পুলিশ দেখেছি। কিন্তু পুলিশ কামড়াচ্ছে, এ দৃশ্য অভিনব! স্পিকার হলেন এই রাজ্যের নতুন ধৃতরাষ্ট্র!’’

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর মন্তব্য, ‘‘বাংলার মানুষ এর আগে ‘ম্যান ইটার’ বাঘের কথা শুনেছে। এ বার দেখল ‘ম্যান বাইটার’ পুলিশ!’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘পুলিশের আচরণ তৃণমূলের গুন্ডা বাহিনীর মতো। রাজ্য প্রশাসনের অমানবিক চেহারা বেরিয়ে আসছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement