গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
পরীক্ষার হলে ঢোকার আগেই উচ্চ মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র পৌঁছে যাবে পরীক্ষার্থীর হাতে! তবে তার জন্য নির্দিষ্ট কিউ আর কোড স্ক্যান করে জমা করাতে হবে টাকা। সমাজমাধ্যমের একটি শাখা টেলিগ্রামে এমনই বার্তা গিয়েছিল বহু উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী বা তাঁদের পরিবারের কাছে। পুলিশের কাছে সেই কথোপকথনের স্ক্রিনশট-সহ অভিযোগ জমা পড়তেই তৎপর হয় তারা। তদন্তে নেমে তারা জানতে পারে গোটা ঘটনাটি মূলচক্রী এক অল্পবয়সি যুবক। বান্ধবীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সাহায্য নিয়ে এই প্রতারণাচক্র ফেঁদে বসেছিল সে।
পুলিশের কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ জমা পড়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার ঠিক দু’দিন পরে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ওয়েস্ট বেঙ্গল কাউন্সিল হায়ার এডুকেশনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বিধাননগর পুলিশের সাইবার সেলে এই বিষয়ে একটি এফআইআর করেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, এক বা একাধিক ব্যক্তি সমাজমাধ্যমে উচ্চ মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের কাছে কিছু দাবি জানাচ্ছে। যা আদপে সত্যি নয়।
এ ব্যাপারে টেলিগ্রামে কথোপকথনের কিছু স্ক্রিনশটও পুলিশকে দেন চিরঞ্জীব। যা খতিয়ে দেখে পুলিশ বুঝতে পারে, টাকার বিনিময়ে উচ্চ মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র দেওয়ার একটি প্রতারণাচক্র চলছে। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে যে কিউআর কোড পাঠানো হয়েছে টেলিগ্রামে, তার সঙ্গে দু’টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট যুক্ত। এর মধ্যে একটি অ্যাকাউন্ট প্রীতি শর্মার নামে। যিনি নদিয়ার হাবিবপুরের বাসিন্দা।
পুলিশ প্রীতির সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারে, তাঁর এটিএম কার্ডটি কিছু দিন আগে তাঁর থেকে কিছুটা জোর করেই নিয়ে যান তাঁর বন্ধু রূপম সাঁধুখা। তার পর থেকে তাঁর অ্যাকাউন্টে অজস্র লেনদেন শুরু হয়েছে। সেই লেনদেনের মেসেজে এসেছে তাঁর ফোনে। তিনি বুঝতে পারছিলেন তাঁর বন্ধু কারও সঙ্গে প্রতারণা করছেন এবং সেই প্রতারণার অর্থ তাঁর অ্যাকাউন্টে ফেলছেন। কিন্তু তিনি কী করবেন, বুঝতে পারেননি।
প্রীতির দেওয়ার তথ্যের ভিত্তিতেই এর পর নদিয়ার গরিবপুর মাঝের গ্রামের বাসিন্দা রূপমের বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। গ্রেফতার করে ওই প্রতারণার মূল চক্রী রূপমকে। পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনার নেপথ্যে আরও বড় কোনও প্রতারণাচক্র জড়িয়ে রয়েছে কি না, তার খোঁজ চালাচ্ছে তারা।