রূপান্তর: আবাস যোজনার বাড়ি ভাড়া নিয়ে ওষুধের দোকান। নিজস্ব চিত্র
রুমাল কি বিড়াল হয়? কিন্তু আবাস যোজনার বাড়ি হয়ে যায় ঝাঁ চকচকে ওষুধের দোকান!
শিল্পশহর হলদিয়া পুরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ক্ষুদিরাম নগর কলোনির বীরাঙ্গনা ব্লক। মার্বেল দিয়ে বাঁধানো ওষুধের দোকানটি এই পাড়াতেই। স্থানীয়দের অভিযোগ, আসলে ওটা ছিল আবাস যোজনার একটি বাড়ি। উপভোক্তা ওই বাড়ি ভাড়ায় দিয়েছেন। ভাড়াটিয়া ওই বাড়িতে বানিয়েছেন বাহারি রঙের ওষুধের দোকান। সেই দোকানের পিছনের দিকে অবশ্য এখনও উঁকি দিচ্ছে নীল-সাদা রং।
পুরসভা সূত্রের খবর, ২০১৮-’১৯ সালে আরতি প্রধান নামে এক মহিলাকে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পে তিন লক্ষাধিক টাকা বরাদ্দ করা হয়। আবাস যোজনার নিয়ম অনুযায়ী, বাড়ি পেতে গেলে আবেদনকারীর নিজস্ব জায়গা থাকতে হয়। আরতি সে সময়ে জানিয়েছিলেন, তিনি স্বামীর সঙ্গে থাকেন না এবং পৈতৃক সূত্রে তিনি একখণ্ড জমি পেয়েছেন। সেই জমিতেই তৈরি হয় আবাস যোজনার বাড়ি। স্থানীয় সূত্রের খবর, মাস ছয়েক আগে হঠাৎ ভোল বদলে যায় ওই বাড়ির। রঙের পোঁচ, কাচ আর মার্বেল সজ্জায় তা বদলে যায় ওষুধের দোকানে। অভিযোগ, তমলুকের নিমতৌড়ি এলাকার এক ব্যবসায়ী নাকি ভাড়ায় নিয়েছেন সেই বাড়ি।
সব দেখেশুনে তাজ্জব সরকারি আধিকারিকেরাও। স্থানীয়েরা জানিয়েছেন, আরতির স্বামী স্বপন প্রধান হলদিয়া পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শ্যামল আদকের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। সেই শ্যামল আদক, যিনি শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। স্বপন নিজে হলদিয়ায় একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। তাঁদের পরিবার আর্থিক ভাবে সচ্ছল। এখন অভিযোগ, শ্যামলের সঙ্গে যোগসূত্রকে কাজে লাগিয়ে স্বপন কোনও ভাবে স্ত্রীর নামে ওই আবাস যোজনার বাড়ি জোগাড় করেছিলেন। আরতি অবশ্য স্বীকার করে নিয়েছেন, বাড়িটি তিনি ভাড়ায় দিয়েছেন। কত ভাড়া? আরতি বলেন, ‘‘আমার স্বামীর সঙ্গে আমার বনিবনা নেই। আলাদা থাকি। ওই বাড়িটি ভাড়া দিয়ে মাসে যে ছ’হাজার আয় হয়, তার সামান্য অংশ খরচ করে জীবন নির্বাহ করি।’’ যদিও আরতির প্রতিবেশীরা বলেছেন, ‘‘ভাড়া বাড়ি নয়, অন্য জায়গায় বাড়ি করে স্বামীর সঙ্গেই থাকেন আরতি।’’ এই পরিস্থিতিতে যখন স্বপনকে ফোন করা হয়, তখন এক পুরুষ কণ্ঠ ফোনটি ধরে আরতিকে দেন। তখন আরতি ফের বলেন, ‘‘আলাদাই থাকি। একটি জরুরি প্রয়োজনে দু’জনকেই বাজারে যেতে হয়েছিল।’’
সরকারি আধিকারিকেরা জানান, আবাস যোজনায় পাওয়া বাড়ি ভাড়া দেওয়া যায় না। তা হলে এ ক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ করা হবে? হলদিয়া মহকুমা শাসক সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’’ প্রসঙ্গত, হলদিয়া পুরবোর্ডের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় মহকুমাশাসকের নেতৃত্বাধীন প্রশাসকমণ্ডলী পুরসভার কাজ চালাচ্ছে। শ্যামল বর্তমানে একটি মামলায় দুর্নীতি মামলায় জেলে রয়েছেন। হলদিয়া পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ মণ্ডল বলছেন, ‘‘উপভোক্তা শ্যামল আদকের ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে শুনেছি। ওঁরা নিয়মের তোয়াক্কা না করেই অযোগ্যদের প্রাপকের তালিকায় রেখেছিলেন।’’ বিজেপি নেতা তথা ভারতীয় মজদুর সংঘের রাজ্য সহ-সভাপতি প্রদীপকুমার বিজলি বলেন, ‘‘তৃণমূলের আমলে সবই সম্ভব।’’