Mamata Banerjee

‘টিম আসে একটা পটকা ফাটলেও, কত টিম পাঠাবে!’ কেন্দ্রকে খোঁচা মুখ্যমন্ত্রী মমতার

আবাস প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ যাচাই করতে বৃহস্পতিবার রাজ্যে দুটি টিম পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। পূর্ব মেদিনীপুর ও মালদহে ওই দুই টিম পৌঁছোনোর দিনই কেন্দ্রকে তীব্র আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

চন্দন বিশ্বাস

গঙ্গাসাগর শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৩ ০৫:৫৯
Share:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই রাজ্যে আবাস প্রকল্প যাচাইয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ‘টিম’ পাঠিয়েছে বলে অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘টিম আসে একটা পটকা ফাটলেও। কত টিম পাঠাবে! আজ ক্ষমতায় আছে বলে টিম পাঠাচ্ছে। কাল থাকবে না।’’

Advertisement

আবাস প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ যাচাই করতে বৃহস্পতিবারই রাজ্যে দুটি টিম পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। পূর্ব মেদিনীপুর ও মালদহে ওই দুই টিম পৌঁছোনোর দিনই তা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘রাজনৈতিক কারণে মাঝেমাঝেই এ টিম, বি টিম, সি টিম, ডি টিম পাঠাচ্ছে। এ টু জ়েড টিম।’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘কারও ঘরে নিজস্ব ব্যবসার টাকা থাকলেও ‘টিম’ চলে আসছে।’’ দোতলা, তিন তলা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও বিজেপির নেতারাও এই টাকা নিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

মুখ্যমন্ত্রীর এই অভিযোগের জবাবে পাল্টা দুর্নীতির কথাই বলেছে বিজেপি। এ দিন পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরিতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘যাদের পাকা বাড়ি রয়েছে, তারা গোয়াল ঘর দেখিয়ে, কাটমানি দিয়ে বাড়ি তৈরির টাকা পেয়েছে। এ বার আবাস প্লাসের জন্য ১১ লক্ষ বাড়ি তৈরির টাকা দিয়েছে কেন্দ্র। ২০১৮ সালে তৃণমূলের পঞ্চুরা সেই তালিকা বানিয়ে ছিল।’’ ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর ১ ব্লকের গুরগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতে দেখা গিয়েছে, একটা ছোট গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ৮৪ জন প্রাপকই অযোগ্য !

Advertisement

সরকারি আবাস প্রকল্পের সুবিধা প্রাপকের তালিকা নিয়ে চাপানউতোর চলছেই। তার মধ্যেই কেন্দ্রের টিম পাঠানোর সিদ্ধান্তে সুর চড়েছে তরজায়ও। এ রাজ্যে তালিকায় অস্বচ্ছতার অভিযোগ সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘আমরাই ১৭ লক্ষ নাম বাদ দিয়েছি। যেটুকু বাকি আছে তা-ও আমরা তদন্ত করে সম্পূর্ণ করব।’’ পাশাপাশি নাম না করলেও এই প্রকল্পে গরমিলের অভিযোগে শীর্ষে থাকা পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দিকে ইঙ্গিত করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও নিশানা করেছেন মু্খ্যমন্ত্রী।

মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি এ দিন কেন্দ্রের শাসক বিজেপির দিকে আঙুল তুলেছে রাজ্যের শাসক তৃণমূল কংগ্রেসও। দলের দুই মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও পার্থ ভৌমিক সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘২০১৮ সালে যাঁরা প্রাপক হিসেবে যোগ্য ছিলেন পাঁচ বছরে তাঁদের অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এ দায় তো কেন্দ্রের। কারণ পাঁচ বছরে কেন্দ্রীয় সরকার সেই মানুষকে এই প্রকল্পের সুবিধা দিতে পারেনি।’’ সেই সঙ্গেই দুই মন্ত্রীর অভিযোগ, ‘‘আবাস প্রকল্পে সব থেকে বেশি অস্বচ্ছতার অভিযোগ পূর্ব মেদিনীপুরে। সেখানে ৪১ শতাংশ নাম বাদ গিয়েছে।’’ সেই সূত্রেই বিরোধী দলনেতা নিশানা করে তাঁরা বলেন, ‘‘তালিকা তৈরির সময় ওই জেলার দায়িত্বে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। তখন সেখানে কার কথায় দল চলত, কে পঞ্চায়েত চালাতেন তা সবার জানা।’’

এই অভিযোগের জবাবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘প্রশাসনের দেখার কাজ যারা যোগ্য নয় তারা যেন প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর না পায়। শুভেন্দুবাবু তো উত্তরবঙ্গেরও পর্যবেক্ষক ছিলেন। যেখানেই আবাস প্রকল্পে অভিযোগ পাব, সেখানেই কেন্দ্রীয় টিম আসবে।’’

গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি দেখে কলকাতায় রওনা হওয়ার আগে এ দিন আবাস প্রকল্পের পাশাপাশি ১০০ দিনের কাজের বকেয়া নিয়েও কেন্দ্রকে বিঁধেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘গরিব মানুষ কাজ করেছেন। তাঁদের টাকা দেওয়া হচ্ছে না। এটা কেন্দ্রীয় সরকার দয়া করে দেয় না। এ টাকা মানুষের প্রাপ্য।’’ এ ক্ষেত্রে বিরোধীদের তোলা অনিয়মের অভিযোগ কেন্দ্রের দিকে ফিরিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এই টাকা তো সরাসরি মানুষের হাতে দেওয়া হয়। তাতে কোনও অনিয়ম হলে তার দায় কি ওরা (কেন্দ্র) এড়াতে পারে?’’ রাজ্যে ভুয়ো জব কার্ডের অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর পাল্টা বক্তব্য, ‘‘এখানে শুনছি ২০ লক্ষ। উত্তরপ্রদেশে তো ৬৯ লক্ষ ভুয়ো কার্ড। হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, কর্নাটকেও ওইরকম। টাকা শুধু এখানেই আটকানো হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement