প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে জানাচ্ছেন, আবাস যোজনা নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্যের চাপানউতোর কিছু কম হয়নি। ফাইল চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় আগেই নানা শর্ত দিয়েছে কেন্দ্র। এ বার পঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ‘কোটা’-র বিন্যাসও স্থির করে দিতে চলেছে কেন্দ্র। সেই ‘কোটা’ কী ভাবে স্থির করা হবে তা নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের কাছে নির্দিষ্ট বার্তা দিল্লি থেকে এখনও না-এলেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে প্রশাসনের অন্দরে। প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “শেষ পর্যন্ত কেন্দ্র এমন পদক্ষেপ করলে, পঞ্চায়েত দফতর বা সরকারের তরফে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার সুযোগ সীমিত হতে পারে। কারণ, কোটার বিন্যাস, উপভোক্তাদের অগ্রাধিকার সবই কেন্দ্র স্থির করে দিলে রাজ্য কার্যত শুধু তা কার্যকর করবে!”
প্রশাসনিক সূত্রের ব্যাখ্যা, কোনও রাজ্য এক আর্থিক বছরে কত সংখ্যায় বাড়ি তৈরির অনুমোদন দিতে পারবে, রাজ্যভিত্তিক উপভোক্তাদের মূল তালিকার নিরিখে তা স্থির করে দেয় কেন্দ্র। তাকেই ‘কোটা’ বলা হয়ে থাকে। সংশ্লিষ্ট মহল জানাচ্ছে, আগে এই প্রকল্পে একটি আর্থিক বছরে কত ‘কোটা’ দেওয়া হচ্ছে, তা শুধু রাজ্যকে জানিয়ে দিত কেন্দ্র। সেই ‘কোটা’ রাজ্য প্রশাসন থেকে জেলাস্তরে পাঠিয়ে দেওয়া হত। সাধারণ শ্রেণি, তফসিলি জাতি, তফসিলি জনজাতি, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি) বা সংখ্যালঘু উপভোক্তার নিরিখে জেলাস্তর থেকেই তা গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হত। প্রশাসনিক মহলের অনুমান, নতুন পদ্ধতিতে হয়তো পঞ্চায়েত স্তরে কত জন বাড়ি পেতে পারেন, সেই সংখ্যা স্থির করে দেবে কেন্দ্র নিজেই।
এ ব্যাপারে পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, “যেমন ভাগ হয়েছে, তেমন ভাবেই উপভোক্তাদের নাম আপলোড করতে হচ্ছে।” প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে জানাচ্ছেন, আবাস যোজনা নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্যের চাপানউতোর কিছু কম হয়নি। নাম বদল এবং উপভোক্তা তালিকায় ‘গরমিল’-এর অভিযোগের কারণে দীর্ঘদিন আটকে ছিল এই প্রকল্পে কেন্দ্রের অনুমোদন।
সম্প্রতি কেন্দ্র তাতে ছাড়পত্রের সঙ্গে চলতি আর্থিক বছরের (২০২২-২৩) ‘কোটা’ও নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। একই সঙ্গে, তাতে নির্বাচিত উপভোক্তাদের কারা আগে বাড়ির টাকা পেতে শুরু করবেন, সেই ক্রমতালিকা স্থির করে দিচ্ছে কেন্দ্রের স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি। এ বার ‘কোটা’-র বিন্যাসও কেন্দ্র স্থির করে দিলে, স্থানীয় স্তরে কত জনকে বাড়ি দেওয়া হবে, সেই সিদ্ধান্ত হয়তো রাজ্যের হাতে থাকবে না। যদিও কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক এ বিষয়ে মুখ খুলতে চায়নি।
প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে জানাচ্ছেন, ২০২৪ সালে লোকসভা ভোটের আগে গোটা দেশে বেশিরভাগ উপভোক্তাকে আবাস দেওয়ার ‘সাফল্য’-এর তথ্য তুলে ধরতে হবে কেন্দ্রকে। তা করতে হলে এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করা প্রয়োজন। সেই দিক থেকে এই পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশাসনের প্রবীণ কর্তাদের অনেকেই জানাচ্ছেন, ২০১১ সালের জাতি গণনার মানদণ্ডে (সোশিয়ো-ইকনমিক কাস্ট সেন্সাস) এই প্রকল্পে উপভোক্তাদের বাছাই প্রক্রিয়া চলত। কয়েক বছর আগে বেশ কয়েকটি রাজ্যের দাবির ভিত্তিতে সেই সমীক্ষার বাইরেও যোগ্য কোনও উপভোক্তা থাকলে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষমতা পঞ্চায়েতগুলিকে দেয় কেন্দ্র। তার পর থেকে সে ভাবেই উপভোক্তা তালিকাভুক্ত করার কাজ চলছিল। কিন্তু আবাস (প্লাস) প্রকল্পে উপভোক্তার তালিকা নিয়ে ওঠা অভিযোগের পরে কেন্দ্রের সুপারিশে সেই তালিকা ফের যাচাই করতে হয় রাজ্যকে। তাতে এখনও পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ নাম বাদ দিতে হয়েছে। সেই দিক থেকেও কেন্দ্রের নতুন অবস্থানকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।