৯ মার্চ সংসদে প্রধানমন্ত্রীর ঘরে একান্ত বৈঠকে। —ফাইল চিত্র।
মাত্র সপ্তাহখানেক আগেই এক টেবিলে মুখোমুখি হয়েছিলেন তাঁরা। সব কিছু ঠিক থাকলে এ মাসেই ফের সাক্ষাৎ হতে চলেছে তাঁদের। সে ক্ষেত্রে ক্ষমতায় আসার পরে এটাই হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রথম কলকাতা সফর।
বিজেপি ক্ষমতায় আসার ন’মাস পরে গত ৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর ঘরে একান্তে আধ ঘণ্টা বৈঠক করেন। সেখানে কেন্দ্রীয় ঋণ মকুব করার আশ্বাস না দিলেও উন্নয়ন-প্রশ্নে মমতাকে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতিই দিয়েছিলেন মোদী। বৈঠকের পরে মমতা জানান, ঋণভারে ন্যুব্জ অবস্থাতেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে আর্থিক শৃঙ্খলা দেখিয়েছে, তার প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সে দিনই মোদীকে কলকাতায় যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
তখন ঠিক ছিল, এপ্রিল মাসের তৃতীয় সপ্তাহে রামনবমীর সময়ে মোদী কলকাতায় যেতে পারেন। তবে পরে ঠিক হয়, রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অসুস্থ প্রেসিডেন্ট স্বামী আত্মস্থানন্দকে দেখতে এ মাসের ২৪ বা ২৫ মার্চ কলকাতায় আসবেন প্রধানমন্ত্রী। প্রেসিডেন্ট স্বামী আত্মস্থানন্দকে দেখতে আসা তাঁর সফরের প্রধান কারণ হলেও এর তাৎপর্য কিন্তু অন্য জায়গায়। প্রধানমন্ত্রী এটাও চাইছেন, তিনি যখন কলকাতায় আসবেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও যেন শহরে থাকেন।
সে কারণে প্রথমে ২৪ বা ২৫ মার্চ ঠিক হওয়ার পরেও সফরসূচি বদলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এই সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের তরফে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরে জানা যায়, ২৪-২৫ মার্চ মমতা কলকাতায় থাকবেন না। ওই সময় তিনি যাবেন উত্তরবঙ্গে। ফেরার কথা ২৬ মার্চ। অথচ প্রধানমন্ত্রী চাইছেন, তিনি কলকাতায় এলে মমতার সঙ্গে যাতে আরও এক প্রস্ত কথা বলার সুযোগ হয়। আর তাই তিনি দিন পাল্টে ২৬ মার্চই আসার সিদ্ধান্ত নেন। একই ভাবে প্রধানমন্ত্রী রাজ্যে পা রাখলে সাংবিধানিক প্রথা মেনে তাঁকে স্বাগত জানাতে হাজির থাকা উচিত মুখ্যমন্ত্রীর। আশা করা যায়, মমতাও সেই প্রথা ভঙ্গ করবেন না। সে ক্ষেত্রে ২৬ মার্চই ফিরে এসে মমতা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন কি না, সেটাই এখন দেখার। বস্তুত, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখেই এ ক্ষেত্রে এগোতে চাইছে উভয় পক্ষ।
পশ্চিমবঙ্গে আর কিছু দিনের মধ্যেই পুরভোট। নির্বাচনে যুযুধান তৃণমূল এবং বিজেপি, দুই দলই নিজেদের মতো করে শক্তি প্রদর্শন করার চেষ্টা করবে। রাজ্যের মাটিতে তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই করে বিজেপি শক্তিবৃদ্ধি করতে চাইছে। রাজ্য-রাজনীতির বাধ্যবাধকতায় দু’পক্ষের ক্ষেত্রে এটা যেমন সত্যি, তেমনই অন্য একটি বিষয়ও মাথায় রেখে চলতে হচ্ছে দুই দলকে। দিল্লিতে মোদী-মমতা তাঁদের আলোচনার মধ্যে দিয়ে যে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বা পারস্পরিক বোঝাপড়ার বাতাবরণ তৈরির চেষ্টা করেন, তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আগ্রহী দু’পক্ষই। সন্দেহ নেই, পুর নির্বাচনের আগে বিজেপি অথবা তৃণমূলের যতই লড়াই হোক না কেন, প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে একটা ‘কাজের’ সম্পর্ক গড়ে উঠছে। কলকাতার বৈঠকেও সেই ইতিবাচক দিকটিকে এগিয়ে নিতে চান তাঁরা।
প্রেসিডেন্ট স্বামী আত্মস্থানন্দের সঙ্গেও মোদীর সম্পর্ক বহু দিনের। সেই সূত্রেই তাঁকে দেখতে কলকাতায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী। এক সময় রাজকোটের রামকৃষ্ণ মিশনের সচিব ছিলেন স্বামী আত্মস্থানন্দ। তখনই তাঁদের আলাপ। মোদী অল্প বয়সে সন্ন্যাসী হতে চেয়ে রাজকোটের রামকৃষ্ণ মিশনে গিয়েছিলেন। ওখানে অনেক দিন ছিলেন। স্বামী আত্মস্থানন্দই তাঁকে সন্ন্যাস নিতে বারণ করেন। প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার আগে মোদী দেখা করে যান তাঁর সঙ্গে। শপথের আগে স্বামী আত্মস্থানন্দও আশীর্বাদী ফুল পাঠিয়েছিলেন মোদীর জন্য। রামকৃষ্ণ মিশন ছাড়া ইসকনের একটি অনুষ্ঠানেও প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।