শনিবার নশিপুর রেলসেতুর উদ্বোধন করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
লালুপ্রসাদ যাদবের হাতে এই রেল প্রকল্পের শিলান্যাস হয়েছিল। পরে জমি জটের কারণে থমকে গিয়েছিল। দীর্ঘ এক যুগ পর সাংসদ অধীর চৌধুরীর তৎপরতায় আবার কাজ শুরু হয়। শেষমেশ সেই রেল প্রকল্পের উদ্বোধন করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
শনিবার নদিয়ার কৃষ্ণনগরে সভা করবেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সভা থেকে নশিপুর-আজিমগঞ্জ রেলসেতুর উদ্বোধন করার কথা তাঁর। তার কৃতিত্ব নিয়ে শুরু হয়েছে দ়ড়ি টানাটানি। কংগ্রেসের বক্তব্য, ইউপিএ সরকার এবং সাংসদ অধীরের এক দশকের লড়াইয়ের ফল এই নশিপুর রেলসেতু। বামেদের দাবি, তারাই প্রথম রেলসেতুর দাবি তুলেছিল। অন্য দিকে বিজেপির বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী এবং রেলমন্ত্রী উদ্যোগী না হলে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হত না।
রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে নশিপুর-আজিমগঞ্জ রেলসেতুর আনুষ্ঠানিক শিলান্যাস করেন লালু। সেই সময় সেতু নির্মাণের জন্য রেল মন্ত্রক থেকে ৪৬ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়। ২০১০ সালে সেটি চালু হওয়ারও কথা ছিল। কিন্তু জমি নিয়ে জটিলতায় কাজ থমকে যায়। ফের ২০২২ সালের অগস্টে রেল সেতুর অসমাপ্ত কাজ পরিদর্শন করেন বহরমপুরের সাংসদ তথা লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর এবং পূর্ব রেলের তৎকালীন চিফ ইঞ্জিনিয়ার-২ (নির্মাণ) অরুণ কুমার। ওই দিন আজিমগঞ্জের দিয়ার মাহিনগর এলাকায় যান তাঁরা। জমিদাতাদের সঙ্গে আলোচনাও হয়েছিল। জমিদাতাদের মধ্যে কয়েক জন চাকরির দাবিতে বিক্ষোভ দেখালেও রেলসেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে তাঁরা বাধা হয়ে দাঁড়াবেন না বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। ইতিমধ্যেই রেল মন্ত্রক ভাগীরথী নদীর উপর সেতু নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ করে ফেলে। নদীর পূর্ব দিকে সেতুর ‘অ্যাপ্রোচ’ অংশের অধিকাংশই কাজ শেষ হয়ে গিয়েছিল তত দিনে। কিন্তু পশ্চিমপারে দিয়ার মাহিনগর গ্রামের প্রায় ৪৬২ মিটারের কাজ জমি-জটে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কংগ্রেসের দাবি, অধীর ও রেল কর্তাদের মধ্যস্থতায় মিটে যায় সেই সব সমস্যা। গত বছরের ডিসেম্বরে এই রেলপথের সূচনা হওয়ার কথা থাকলেও রেল সুরক্ষা কমিশনের ছাড়পত্র না মেলায় পিছিয়ে যায় উদ্বোধন। সব জট পেরিয়ে শনিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে রেল চলাচলের সূচনা করার কথা মোদীর।
এ নিয়ে অধীর বলেন, ‘‘দীর্ঘ ৯ বছর ধরে জমি জট থেকে শুরু করে স্থানীয় মানুষদের বোঝানো, তাঁদের আস্থা অর্জন, ছোট-ছোট অনেক সমস্যায় বাড়ির অনুষ্ঠানের মতো লেগেছিলাম। আজকে কেউ এসে কী বলবেন, তা নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নই।’’ পাল্টা বিজেপির বহরমপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি শাখারভ সরকার বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী ও রেলমন্ত্রীর কাছে দীর্ঘ দিন ধরে দরবার করে এই সেতুতে রেল চলাচলের ছাড়পত্র আদায় করে এনেছি। ভোট আসতেই অধীরবাবু ময়দানে লাফিয়ে পড়বেন, এ সব মানব না।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক জামির মোল্লার বক্তব্য, ‘‘এই রেল পথ নিয়ে সংসদে সব থেকে বেশি যদি কোনও দল দাবি জানিয়ে থাকে, সেটা বামেরা। তাই বামেদের কৃতিত্ব অস্বীকার করলে ইতিহাস এবং বর্তমানকে অস্বীকার করা হবে।’’