PM Narendra Modi

‘সারা দেশ দেখেছে রক্তের খেলা’, বাংলার পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে তৃণমূলকে বিঁধলেন প্রধানমন্ত্রী

বিজেপি তথা বিরোধীদের মনোনয়নে বাধা দেওয়া থেকে ভোটে জেতার পরেও হুমকি এবং মারধর— বাংলার পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে গুচ্ছ অভিযোগ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২৩ ১৩:১৫
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

বাংলার পঞ্চায়েত ভোট মিটেছে প্রায় এক মাস। গত ৮ জুলাই সেই ভোটে শুধু খুনোখুনি, ভোটলুট এবং বিরোধীদের উপর অত্যাচার হয়েছে বলে অভিযোগ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শনিবার বিজেপির ‘ক্ষেত্রীয় পঞ্চায়েতিরাজ পরিষদ’-এর পূর্বাঞ্চলীয় সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি। অন্য দিকে, পশ্চিমবঙ্গে তখন সশরীরে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। সেই অনুষ্ঠান থেকে পঞ্চায়েত ভোটে হিংসার অভিযোগ করে তৃণমূলকে আক্রমণ করলেন প্রধানমন্ত্রী। জানালেন তৃণমূলের ‘ভোটপ্রক্রিয়া’ কেমন ছিল।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘যে ভাবে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির কার্যকর্তারা ভারতমাতার জন্য, পশ্চিমবঙ্গের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য, পশ্চিমবঙ্গের ভাইবোনের জন্য সংঘর্ষ করছেন, তা এক প্রকার সাধনার সমান। নিজেদের তিল তিল করে নিংড়ে যে ভাবে পশ্চিমবঙ্গের পুরনো বৈভব ফেরানোর চেষ্টা করছেন, তা কুর্নিশযোগ্য।’’ এর পর মাসখানেক আগে শেষ হওয়া বাংলার পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, যাতে বিজেপি তথা বিরোধী প্রার্থীরা ভোটে লড়তেই না পারেন, তার সব রকম পরিস্থিতি তৈরি করেছিল শাসকদল তৃণমূল। তাঁর কথায়, ‘‘এই ভোটে তৃণমূল কেমন রক্তের খেলা খেলেছে, এটা সারা দেশ দেখেছে। এদের ভোটপদ্ধতি কেমন ছিল? প্রথমে ভোটে লড়ার প্রস্তুতির সময়ই দিও না। দ্বিতীয়ত, ভোটে মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য কম সময় দাও। তাই তাড়াতাড়ি ফর্ম ভরার সময় ঘোষণা করে দাও! তার পর কোনও বিজেপি অথবা বিরোধীদের কেউ যাতে মনোনয়নের ফর্ম ভরতে না পারে, তার জন্য যা করার হয় করো। তার পরেও যদি কেউ বিভিন্ন উপায়ে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য পৌঁছেও যান, তাঁকে ভোটে লড়তে বাধা দাও।’’

প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, বাংলার পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপিকে বাড়ি বাড়ি প্রচার করতেও দেওয়া হয়নি। হুমকি দেওয়া হয়েছে। ভয় দেখানো হয়েছে পঞ্চায়েত স্তরের বিজেপি নেতা-কর্মীদের। ভয়ে কেউ কেউ বাড়ি থেকে বেরোতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘‘শুধু যে বিজেপি কার্যকর্তাদের ধমকেছে এমন নয়, ভোটারদেরও ভয় দেখিয়েছে। বিজেপি কর্মীদের যে সমর্থক এবং তাঁদের আত্মীয় আছেন, তাঁদেরও বাঁচা মুশকিল করে দেওয়া হয়েছে। আর তার পর ভোটের সময় ছাপ্পা দেওয়া হয়েছে। তখন তোলাবাজদের ফৌজ ছাপ্পাবাজের ফৌজ হয়ে যায়। সব গুন্ডাদের ভাড়া করা হয়, কী ভাবে এবং কোন কোন বুথ কে দখল করবেন তা ঠিক করে ফেলা হয়। তার পর ভোটের মেশিন নিয়ে পালানো... এবং এখানেই শেষ নয়। ভোটগণনার সময়েও বিজেপির কার্যকর্তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া, তাঁদের গণনাকেন্দ্রের কাছে থাকতে না দেওয়া— এত জুলুমের পরেও পশ্চিমবঙ্গের জনগণ বিজেপিকে আশীর্বাদ করেছেন।’’

Advertisement

তবে ভোটের পরেও বিজেপি কর্মী, বিশেষত জয়ী বিজেপি প্রার্থীদের উপর আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এমনকি, অনেক সময় প্রাণঘাতী হামলাও হয়েছে। কটাক্ষের সুরে তিনি বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূলের রাজনীতির এটাই পদ্ধতি। ওখানে আমাদের আদিবাসী ভাইবোনকে কী ভাবে অত্যাচারিত হতে হয়, আমরা জানি। এই পরিস্থিতির মধ্যেও বিজেপির যে প্রতিনিধিরা জয়ী হয়েছেন ভোটে, তাঁদের আমি অনেক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এঁরা গণতন্ত্রের চ্যাম্পিয়ন।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘যাঁরা কথায় কথায় ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তাঁদের মুখোশ খুলে দিয়েছেন আপনারা।’’ মোদী এ-ও অভিযোগ করেছেন, বিজেপি ভোটে জিতলে বিজয় মিছিল বার করতে দেওয়া হয় না। সেই মিছিলেও হামলা করা হয়। প্রাণঘাতী হামলা করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকার কাজ করতে দেন না বলেও অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তিনি জানান, রাজ্য সরকারের বাধা দেওয়ার পরেও পশ্চিমবঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার অধীনে ৪৫ লক্ষ পাকা বাড়ি তৈরি করা হয়েছে।

মোদীর দাবি, স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত হয়েছে পূর্ব ভারত। যদিও পূর্ব ভারত বরাবরই বিজেপির পক্ষে থেকেছে। দেশের বিকাশের অন্যতম স্তম্ভ। এখানে প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন রয়েছে, তেমনই দক্ষ এবং আত্মবিশ্বাসী মানুষেরও অভাব নেই। তাই এই সব রাজ্যে দ্রুত উন্নয়নের কাজ করছে বিজেপি সরকার। বাংলায় বিজেপি কর্মীদের নিরন্তর কাজ করে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

শেষে বাংলার বিজেপি কর্মীদের উদ্দেশে মোদী বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে পেরে খুব ভাল লাগছে। আমি যখন দলের কাজে আসি, কার্যকর্তাদের সঙ্গে কথা বলি, তখন নতুন করে কাজের উৎসাহ পাই। লক্ষ লক্ষ কার্যকর্তা কোনও পদের আশা না করেই ভারতমাতার জন্য কাজ করছেন। ওঁদের দর্শন থেকে নতুন প্রেরণা পাই।’’

শনিবারই জি২০-র দুর্নীতি বিরোধী মন্ত্রিসভার বৈঠকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘দুর্নীতি সম্পদের ব্যবহারকে প্রভাবিত করে। বাজারকে বিকৃত করে। পরিষেবা সরবরাহকে প্রভাবিত করে এবং শেষ পর্যন্ত মানুষের জীবনযাত্রার মানকে হ্রাস করে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement