‘জনতা কার্ফু’ কাল। বাড়ি ফেরার তাগিদে ট্রেনে ভিড় শনিবার।
করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘জনতা কার্ফু’র ডাক দিয়েছেন। সকাল ৭ট থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ঘর থেকে না বেরনোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে এ রাজ্যের বাস-ট্রাম-মেট্রো-রেল চলবে কি না, তা নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রচুর বিভ্রান্তি রয়েছে।
রবিবার এমনিতে ছুটির দিন। অফিসকাছারি বন্ধ থাকলেও অনেকেই বাইরে নানা কাজে বেরোন। কিন্তু অন্যান্য রবিবারের সঙ্গে করোনা-মোকাবিলার এই সময়টা একেবারেই আলাদা। জনতা কার্ফু থাকলেও ওই দিন জরুরি কাজে গণপরিবহণের প্রয়োজনীতা রয়েছে। রবিবার সে সবের কী ব্যবস্থা থাকছে?
জানা গিয়েছে, বাস-ট্রাম অন্যান্য দিনের তুলনায় কমই চলবে। মেট্রোর সংখ্যা কমানো হয়েছে। আগামিকাল রবিবার ৩০ মিনিট অন্তর চলবে মেট্রো। দূরপাল্লার মেল-এক্সপ্রেস এবং প্যাসেঞ্জার ট্রেন বাতিল করা হচ্ছে। লোকাল ট্রেন কম চালানোর কথা ভাবছে রেল কর্তারা। এমনিতে রবিবার লোকাল ট্রেন কম পরিমাণে চলে, সেই সংখ্যা আরও কমানো হচ্ছে। আন্তরাজ্য বিমান পরিষেবা চালু থাকবে। তবে, ট্রেন কিন্তু শুধু রাজ্যের মধ্যেই চলবে।
আরও পড়ুন: করোনার আঁচ, পুলিশ-বন্দি সংঘর্ষে রণক্ষেত্র দমদম সেন্ট্রাল জেল
কলকাতা ও ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো
দিল্লি মেট্রো বন্ধ হলেও, কলকাতা এবং ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো আপাতত বন্ধ হচ্ছে না। তবে মেট্রো পরিষেবা কিছুটা নিয়ন্ত্রিত হবে। কলকাতা মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রানী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রবিবার ৩০ মিনিট অন্তর কলকাতা মেট্রোর ৫৪টি রেক চলবে। এমনিতে রবিবারে ১২৪টি রেক চালানো হয়। সেই সংখ্যা কমানো হয়েছে। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোও চলবে ৩০ মিনিট অন্তর। ৫০টির বদলে চলবে ৩৪টি রেক।” তবে অন্যান্য রবিবারের মতো আগামিকালও সকাল ৯টা থেকে মেট্রো পরিষেবা শুরু হবে। শেষ মেট্রো ছাড়বে রাত ১০টা ৫৫মিনিটে।
জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে ট্রেনের কামরায়। গ্লাভস পরে কাজ করছেন মেট্রোর কর্মী।
বাস-ট্রাম-ট্যাক্সি
সরকারি বাস, ট্রাম এবং ভেসেল পরিষেবা বন্ধ রাখার কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি এখনও পর্যন্ত নেয়নি রাজ্য পরিবহণ দফতর। রবিবার করে গাড়ির সংখ্যা যেমন থাকে তেমনই থাকবে। তবে এক পরিবহণ কর্তা জানিয়েছেন, রাস্তায় গাড়ি বেরোনোর আগে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হবে। এর পাশাপাশি যাত্রীদের হ্যান্ড স্যানিটাইজারও দেওয়া হবে। তবে কর্মীদের জোর করে কাজ করানো হবে না। রবিবার ছুটির দিন থাকায় অন্যান্য দিনের থেকে এমনিতেই যাত্রী সংখ্যা কম থাকে। তার উপর এই রবিবার জনতা কার্ফু রয়েছে। তাই বাস-ট্রাম-ট্যাক্সি নিয়ে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয় বলেই জানিয়েছেন পরিবহণ দফতরের ওই উচ্চপদস্থ কর্তা।
আরও পড়ুন: রাজ্যে তৃতীয় করোনা আক্রান্ত স্কটল্যান্ডফেরত হাবড়ার তরুণী
জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটের তরফে তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে, ৪০ হাজার বাস। আমরা বাসমালিক, কনডাক্টর, চালকের উপরে বিষয়টি ছেড়ে দিচ্ছি।” হলুদ ট্যাক্সি রাস্তায় কম নামার সম্ভাবনা রয়েছে। বেসরকারি অ্যাপ ক্যাব সংস্থাগুলির তরফে জানানো হয়েছে, তাদের শেয়ার পুল-পরিষেবা বন্ধ থাকলেও সমগ্র পরিষেবা বন্ধ থাকছে না।
বাসে যাত্রীদের হাতে স্যানিটাইজার দেওয়া হচ্ছে।
ট্রেন পরিষেবা
দূরপাল্লার বহু ট্রেন বাতিল করা হচ্ছে। যাঁরা ট্রেনের টিকিট কেটে ফেলেছেন, তাঁদের চিন্তার কোনও কারণ নেই বলে জানিয়েছে রেল। টিকিটের অর্থ ফেরত নিতে স্টেশনে যেতে হবে না। অনলাইনে সেই টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করেছে রেল। পূর্ব রেলের মু্খ্য জনসংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী বলেন, “লোকাল ট্রেন বন্ধ হচ্ছে না। চলবে। তবে দূরপাল্লার মেল-এক্সপ্রেসের পাশাপাশি প্যাসেঞ্জার ট্রেন বাতিল হতে পারে পরিস্থিতি অনুযায়ী।” দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, “লোকাল ট্রেন বন্ধ হচ্ছে না। তবে নূন্যতম সংখ্যায় চলবে। প্যাসেঞ্জার এবং দূরপাল্লার বেশির ভাগ ট্রেন বাতিল হতে পারে।”
আরও পড়ুন: করোনা আজ নয় কাল চলে যাবে, কিন্তু তার পর কী হবে?
ট্রেনে করে যে যাত্রীরা এ রাজ্যে আসছেন, তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হচ্ছে কি না, তা নিয়ে এ দিন প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “ভিন রাজ্যে অনেকেই কাজ করেন। তাঁরা রাজ্যে ফিরেছেন। ট্রেন বন্ধ করতে বলতে পারি না। তবে তাঁদের স্বাস্থ্যের দিকটাও খেয়াল রাখা উচিত।”
গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
বিমান পরিষেবা
দেশের মধ্যে বিমান পরিষেবা স্বাভাবিক থাকবে। তবে, আন্তর্জাতিক বিমান দমদমে ওঠানামার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “রাজ্য বিষয়টি দেখে না। বিষয়টি দিল্লির হাতে রয়েছে। পরিস্থিতির কথা বিচার করে, এখনই তা বন্ধ রাখা উচিত।’’ কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, আগামিকীল অর্থাৎ ২২ মার্চের পর আপাতত কোনও আন্তর্জাতিক বিমান কলকাতায় নামবে না।