কলকাতা বইমেলায় শশী তারুর। শনিবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
ধর্মের নামে দেশকে ভাঙার চেষ্টা ভারতে সহজে সফল হতে পারে না-বলে মনে করেন ওঁরা। শনিবার বইমেলার মাঠে সমাজবিজ্ঞানী আশিস নন্দী বলছিলেন, দেশভাগ-দাঙ্গার সময়কার গল্প! ‘‘অত হিংসার মধ্যেও যারা বেঁচে গিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে শতকরা ৪০টি ক্ষেত্রেই ভিন্ ধর্মীরা তাঁদের বাঁচতে সাহায্য করেছিলেন। বিশ্বের অন্য কোথাও গণহত্যার সময়ে এই সংখ্যাটা চার শতাংশও হবে না।’’— বললেন আশিস।
বইমেলায় কলকাতা সাহিত্য উৎসবের আসরে এ গণতন্ত্রের সার্থকতা নিয়ে বিদগ্ধ অতিথিদের আলাপচারিতা ঘুরে-ফিরে কার্যত দেশের বর্তমান শাসকদের চাপিয়ে দেওয়া নানা স্বৈরাচার নিয়েও সরব হল। সাংসদ-লেখক শশী তারুর, আশিসবাবুর সঙ্গে দেশের সমসময়ের রাজনীতির পটভূমিতে গড়ে ওঠা ‘সিটিজ়েনস্পিক’-নাগরিক মঞ্চটির তরফে অপর্ণা সেনও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। দেশের ক্ষমতায় আসীন বিজেপিকে একদা ‘সংখ্যাগুরু নয় কুচিন্তার গুরু’ বলে অভিহিত করেন প্রবীণ অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। খানিকটা যেন সে-সুরেই এ দিনের আলোচকেরা বলছিলেন, এমনিতেই দেশের ভোটার-তালিকাভুক্ত জনসংখ্যার ৬৫-৬৬ শতাংশ ভোট দিতে আসেন। এর মধ্যে এখনকার শাসকেরা মোটে ৩৭ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। ১৯৮৪তে রাজীব গাঁধীর দলই প্রদত্ত ভোটের প্রায় অর্ধেক পেয়েছিল। শশী তারুর বললেন, ‘‘ভারতে বেশির ভাগ নাগরিকই বহু সত্তা বহন করছেন। ধরা যাক, বাঙালি, মুসলিম এবং ভারতীয়— তিনটেই তো এক জন একইসঙ্গে হতে পারেন!’’ ‘‘তা ছাড়া যার হাতে সংখ্যা যতই থাকুক, দেশের সংবিধান পাল্টে ফেলার স্বাধীনতা কারও নেই।’’— এ কথাও মনে করিয়ে দেন আশিস। এই পরিস্থিতিতে দেশে মেয়েদের প্রতিবাদ আলো দেখাচ্ছে বলে মনে করেন বক্তারা সকলেই।
সঞ্চালক তথা সাহিত্য উৎসবের অধিকর্তা সুজাতা সেন মনে করালেন, কয়েক দিন আগেই দেশের শাসক দল এ দেশের আত্মার বিভাজন ঘটাচ্ছে বলে লোকসভায় ধিক্কার জানিয়েছিলেন শশী। শশীর ব্যাখ্যা, ইংরেজ আমলে হিন্দু, মুসলিম সত্তাটাই প্রধান ছিল। ভারতীয় সংবিধান তৈরিই হল, এক সঙ্গে বহু সত্তাকে মেলে ধরতে। সেটাই দেশের আত্মা। এখন নানা বিষয়ে রামজাদা ও বাকিদের ফারাক দেখিয়ে বা হিন্দু-মুসলিমে ভাগ করে দেশটার সর্বনাশ করা চলছে।
আরও পড়ুন: প্রতিবন্ধীর শংসাপত্র নিজেকেই! বিপাকে সুপার
আর একটি আলাপচারিতার আসরে শশী বললেন, তাঁর দেখা আগের এবং এখনকার কলকাতার কথাও। ‘‘কলকাতায় এখন অনেকগুলো বড় বাড়ি। পরিষ্কার শহর। তবে আগের প্রাণশক্তিতে মনে হয় একটু খামতি দেখছি। বাদল সরকারের নাটক, পারস্পরিক সহমর্মিতার একটা চমৎকার কলকাতাকে এখনও মনে রয়েছে।’’