Plastic waste

Plastic waste: দূষণ এড়াতে রাস্তা নির্মাণে প্লাস্টিক বর্জ্য

সড়ক পরিবহণ ও হাইওয়ে মন্ত্রক সব রাজ্যে নির্দেশ পাঠিয়েছে, যত রাস্তা তৈরি হবে, তার অন্তত পাঁচ শতাংশের উপরিভাগে ব্যবহার করতে হবে বর্জ্য প্লাস্টিক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২২ ০৭:০৫
Share:

ফাইল ছবি

পরিবেশ ও মানুষ, উভয়ের পক্ষেই সে বিপজ্জনক। তবে তার রক্তচক্ষুতে পিছু না-হটে তাকে কাজের ঘানিতে জুতে দিয়ে একই সঙ্গে তাকে শায়েস্তা করতে এবং ফায়দা তুলতে চাইছে কেন্দ্র ও রাজ্য, দুই সরকারই। পরিবেশের সঙ্গে প্লাস্টিক বর্জ্যের মিশে যাওয়া ঠেকাতে সড়ক নির্মাণে তা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। এখন যত রাস্তা তৈরি হচ্ছে, সর্বত্র নির্দিষ্ট পরিমাণে প্লাস্টিক বর্জ্যের ব্যবহার কার্যত বাধ্যতামূলক করার পথে এগোচ্ছে কেন্দ্র।

Advertisement

কিন্তু কাঁটাও আছে অন্তত দু’টি। প্রথমত, অন্যতম অন্তরায় প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহের পদ্ধতি। দ্বিতীয়ত, সড়ক বিশেষজ্ঞেরা সতর্ক করে দিচ্ছেন, এর ঠিকমতো ব্যবহার না-হলে পরিবেশ দূষণ ঠেকানো মুশকিল হবে। তবে অনেক প্রশাসনিক বিশেষজ্ঞই জানান, এই পদক্ষেপ গতি পেতে কিছুটা দেরি হলেও নিয়মবিধি ঠিকমতো মেনে কাজ চালানো হলে শেষ পর্যন্ত তা ইতিবাচক ফল দিতে পারে।

কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ ও হাইওয়ে মন্ত্রক সব রাজ্যে নির্দেশ পাঠিয়েছে, যত রাস্তা তৈরি হবে, তার অন্তত পাঁচ শতাংশের উপরিভাগ তৈরিতে ব্যবহার করতে হবে বর্জ্য প্লাস্টিক। ইন্ডিয়ান রোড কংগ্রেসও এই পদ্ধতিকে গ্রহণ করেছে। এ রাজ্যের নদিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনার একাংশে ছোট পরিসরে এর প্রয়োগ শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় তৈরি রাস্তাগুলিতে এর প্রয়োগ হচ্ছে বেশি। জাতীয় সড়কেও আংশিক ভাবে এর ব্যবহার শুরু হয়েছে সম্প্রতি। জাতীয় সড়ক ২বি-র আওতায় বর্ধমান থেকে বোলপুরের মধ্যে পাঁচ কিলোমিটার রাস্তাকে এই পদ্ধতির আওতায় আনা হয়েছে। তাতে বিটুমিন বা পিচের তৈরি রাস্তার উপরিভাগের মিশ্রণ তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে বর্জ্য প্লাস্টিক। প্রশাসনিক মহলের খবর, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, দক্ষিণ ভারতে এর ব্যাপক প্রয়োগ শুরু হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

সড়ক বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, রাস্তা তৈরিতে বিটুমিনের বাঁধন শক্ত করতে মিশ্রণকে তিন ভাবে তৈরি করা হয়। তাতে পলিমার, রবার অথবা প্লাস্টিক মেশানো হয়ে থাকে। এই তিনটি উপাদানের মধ্যে প্লাস্টিকের বাঁধুনি তুলনায় কিছুটা কম শক্ত হলেও পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে এই উপাদানের ব্যবহার বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে। সাধারণত, ৭৫ মাইক্রনের বেশি মাপের প্লাস্টিককে পুনর্ব্যবহার করে নতুন কিছু তৈরি করা সম্ভব। কিন্তু ৫০-৬০ মাইক্রনের প্লাস্টিককে পুনর্ব্যবহার্য করে তোলা যায় না। কারণ, তা আর্থিক ভাবে লাভজনক হয় না। তা ফেলেই দিতে হয়। বহু বিজ্ঞানীর মতে, এমন প্লাস্টিক কয়েকশো বছর ধরে পরিবেশের সঙ্গে থেকে যেতে পারে। তাতে পরিবেশ দূষণ বাড়ে এবং তা মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর নানা রোগ ডেকে আনে। তাই ওই প্লাস্টিক বর্জ্য ধুয়ে, রোদে শুকিয়ে, নির্দিষ্ট মাপে কেটে বিটুমিনের সঙ্গে মেশানো হয়।

এক সড়ক বিশেষজ্ঞ বলেন, “সাধারণত পিচ গলানো হয় ১৬০-১৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়। তাতে ওই প্লাস্টিক গলে যেতে সমস্যা হয় না। শুধু প্লাস্টিক কেন, অনেক ধরনের বর্জ্য উপাদান ঠিকমতো পুনর্ব্যবহারযোগ্য করা গেলে তা-ও ব্যবহার করা যেতে পারে।”

কিন্তু সমস্যা রয়ে গিয়েছে গোড়ায়। প্রশাসনিক আধিকারিকদের অনেকেই জানাচ্ছেন, কলকাতা-সহ কয়েকটি পুরসভায় কাজ শুরু হলেও মিউনিসিপ্যাল বর্জ্য সংগ্রহের পদ্ধতি এখনও ঠিক খাতে এগোচ্ছে না। বর্জ্যের কোনটা পুনর্ব্যবহার যোগ্য এবং কোনটি নয়, সংগ্রহের শুরুতে তা আলাদা করে ফেলাই রীতি। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেটা হচ্ছে না। সব বর্জ্য এক জায়গায় জমা হয়। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, মিউনিসিপ্যাল বর্জ্যের মাত্র এক-পঞ্চমাংশ পুনর্ব্যবহারযোগ্য করা যাচ্ছে। তা যথেষ্ট নয়। পৃথকীকরণ পদ্ধতি যথাযথ হলে পুনর্ব্যবহারযোগ্য নয়, এমন প্লাস্টিক আলাদা করে নির্দিষ্ট জায়গায় পাঠিয়ে ধুয়ে-শুকিয়ে-নির্দিষ্ট মাপে কাটার যে-খরচ, অনেক ক্ষেত্রেই তা এড়াতে চায় সড়ক নির্মাতা সংস্থা। নিয়মের কড়াকড়িতে প্লাস্টিক ব্যবহার করতে হলেও তাতে সব মাপের প্লাস্টিক জায়গা পেয়ে যায়। পুনর্ব্যবহারের অযোগ্য প্লাস্টিক গলাতে অনেক বেশি তাপ লাগে এবং তাতে কার্বন নিঃসরণও হয় বেশি। এক কর্তা বলছেন, “উদ্দেশ্য সাধু। কিন্তু তার প্রয়োগ যথাযথ হওয়া জরুরি। দরকার সচেতনতার। করতে হবে বলে যেমন খুশি করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তা ছাড়া রাস্তার উপরিভাগ তৈরিতে যত প্লাস্টিক লাগবে, ততটা পাওয়াও যাচ্ছে না!”

পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, এখন বড় রাস্তা তৈরিতে ফ্লাই অ্যাশ ব্যবহার করা হচ্ছে। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি তা সরবরাহ করে এবং সড়ক এবং কিছু বাড়ি তৈরির কাজে তা ব্যবহার হয়। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক-সহ বেশ কিছু রাস্তায় এই উপাদানের ব্যবহার কার্যকর হয়েছে। তাতে বালির উপরে নির্ভরতা কম হচ্ছে। সেটাও পরিবেশের পক্ষে সুবিধাজনক।

পঞ্চায়েত দফতর সূত্রের দাবি, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। পুরসভাগুলিতেও একই পদক্ষেপ করার কথা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement