প্রতীকী ছবি।
বাংলাদেশে আত্মসমর্পণ করা জলদস্যুর দল প্রায় গোটা রাজ্য জুড়েই ডাকাতির জাল বিছিয়ে ফেলেছে। সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনার তদন্তে নেমে এ বিষয়ে তথ্য প্রমাণ হাতে আসার পরে ঘুম ছুটেছে পুলিশ কর্তাদের।
দিন কয়েক আগে ক্যানিং থানা এলাকা থেকে রনি শেখ নামে এক বাংলাদেশি জলদস্যু ধরা পড়েছে। রনি বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার বাসিন্দা হলেও বছর দুয়েক ধরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলি এলাকায় রয়েছে। এ দেশে একটি বিয়েও করেছে সে। রনিকে জেরা করে এ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় আত্মসমর্পণ করা বাংলাদেশি জলদস্যুদের ঘাঁটির হদিস পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি করছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সুন্দরবনে ভারত-বাংলাদেশ নদী উপকূলবর্তী এলাকায় মজনু, ইলিয়াস ও আতিয়ার নামে তিন গোষ্ঠীর জলদস্যুরা সক্রিয় ছিল। তারা অপহরণ ও লুঠপাট চালাত। ২০১৪-১৫ সালে বাংলাদেশের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র্যাব)-এর কাছে ওই তিন গোষ্ঠীর অধিকাংশ জলদস্যুই আত্মসমর্পণ করেছিল। সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসার জন্য বাংলাদেশ সরকারের তরফে বছরে এক লক্ষ টাকা অনুদানও দেওয়া হচ্ছে ওই সব আত্মসমর্পণকারীদের। অন্যান্য সাহায্যও দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে তারা ও দেশে ডাকাতি বন্ধ করেছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে সেই কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য রীতিমতো জাল তৈরি করেছে তারা।
কী ভাবে এ রাজ্য ঘাঁটি তৈরি করছে বাংলাদেশের প্রাক্তন জলদস্যুরা?
এক তদন্তকারীর কথায়, উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্তের বোটঘাট এলাকা দিয়ে এ দেশে এসেছিল বলে রনি জেরায় কবুল করেছে। বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে ছোট ডিঙি নৌকায় ইছামতী নদী পেরিয়ে বসিরহাটের বোটঘাট এলাকায় চলে এসেছিল। তদন্তকারীদের কথায়, কোন পথে সে বাংলাদেশ থেকে এসেছিল তা খতিয়ে দেখার জন্য পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন রনিকে বোটঘাট এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
তদন্তকারীদের কথায়, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া, মালদা ও মুর্শিদাবাদ এলাকায় ওই তিন গোষ্ঠীর জলদস্যুরা সীমান্ত ঘেঁষা এলাকার বিভিন্ন বাংলাদেশি পরিবারে এসে আশ্রয় নিচ্ছে। স্থানীয় মহিলাদের বিয়েও করছে। তার পর ভোটার কার্ড ও আধার কার্ড তৈরি করে নিচ্ছে। স্থানীয় দুষ্কৃতীদের সঙ্গে যোগসাজস তৈরি করে ডাকাত দল তৈরি করেছে। তার পরে কলকাতা ও বিভিন্ন জেলায় ডাকাতি-লুঠপাট চালিয়ে বাংলাদেশ গিয়ে গা-ঢাকা দিয়ে থাকছে। এক তদন্তকারীর কথায়, লুঠপাটের জিনিসও তারা বাংলাদেশ নিয়ে চলে যাচ্ছে। ওখানে তা বিক্রি করে
ফিরে এসে নগদ টাকা স্থানীয় দুষ্কৃতীদের ভাগ করে দিচ্ছে।
তদন্তকারীরা বলছেন, লুটের জিনিস বিক্রি করার সমস্যা রয়েছে। এই কাজ করতে গিয়েই অধিকাংশ ডাকাত ধরা পড়ে যায়। আবার ধরা পড়ার পরে লুঠের জিনিসকে আদালতে প্রামাণ্য হিসেবে দাখিল করে মামলা
সাজায় পুলিশ। সেই কারণেই লুটের মাল বাংলাদেশে নিয়ে বিক্রি করার কৌশল নিয়েছে বাংলাদেশি দুর্বৃত্তরা।
কিছু দিন পরে তারা নগদ টাকা নিয়ে ফিরে আসছে। সিআইডি-র তরফেও রনিকে দফায় দফায় জেরা করা হচ্ছে। রাজ্য পুলিশের এক কর্তা জানাচ্ছেন, বাংলাদেশের আত্মসমপর্ণকারী অন্তত শ’দেড়েক জলদস্যু এ দেশে ঘাঁটি গেড়েছে বলে তাঁদের অনুমান। এখনই তাদের এই সংগঠন ভাঙতে না-পারলে রাজ্যে ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যাবে।