সোমরেশ আমিন।
ঘড়িতে তখন ৫টা ২০ মিনিট। মালদহ টাউন স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে পৌঁছল নয়া ট্রেন ‘বন্দে ভারত’। যিনি চালিয়ে আনলেন, তাঁর ট্রেন চালানোর অভিজ্ঞতা ২২ বছর। চালিয়েছেন রাজধানী এক্সপ্রেসের মতো ট্রেন। তবে বন্দে ভারত চালানোর অভিজ্ঞতা একেবারেই ভিন্ন বলে জানান লোকো পাইলট মালদহের মহানন্দাপল্লির বাসিন্দা সোমরেশ আমিন। তিনি বলেন, ‘‘বন্দে ভারতের গতি যখন তখন বাড়ানো কমানো যায়। এ দিন মালদহ থেকে এনজেপি যেতে সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় লেগেছে। তবে পরে আরও কম সময় লাগবে। মালদহ থেকে নিউ জলপাইগুড়ির রেলের ট্র্যাক খুব ভাল। বন্দে ভারত চলাচলের পক্ষে আদর্শ।’’ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র সোমরেশ মালদহ পলিটেকনিক কলেজ থেকে পড়াশোনা করেছেন। তিনি তেভাগা এক্সপ্রেস, কুলিক এক্সপ্রেস, নবদ্বীপ ধাম এক্সপ্রেসের মতো ট্রেন উদ্বোধনের দিন চালিয়েছেন বলে জানান সোমরেশ। তাঁকে সহযোগিতা করেন সহকারী লোকো পাইলট উত্তমকুমার মণ্ডল। এ দিন ট্রেনের সর্বচ্চ গতি ছিল ১১০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়।
ট্রেন যখন মালদহ টাউন স্টেশন ছাড়ল, ঘড়িতে তখন ৫টা ৫০ মিনিট। মালদহ টাউন স্টেশনে ট্রেনটি থামার কথা মাত্র পাঁচ মিনিট। তবে শুক্রবার নির্ধারিত সময়ের থেকে বাড়তি ৩০ মিনিট মালদহ টাউন স্টেশনেই দাঁড়িয়ে থাকে বন্দে ভারত। এই সময়ে পুরো ট্রেনটি ঘুরে দেখেন বিজেপির নেতা, কর্মীরা।
মালদহের মতো দেরি বিহারের মুক্রিয়া, বারসই, কিসানগঞ্জ, আলুয়াবাড়ি স্টেশনে না করলেও বিজেপির নেতা, কর্মীদের উচ্ছ্বাসের ছবিটা ছিল একই। ট্রেনের ভেতরে দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে কার্যত ‘মিছিল’ করেন তাঁরা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নামে তাঁরা স্লোগান দেন। এক রেলযাত্রী মালদহের বাসিন্দা ঋত্বিকা ঘোষ বলেন, ‘‘মুক্রিয়া স্টেশনেই সব চেয়ে কম সময়ের জন্য ট্রেনটি দাঁড়িয়েছে। সে স্টেশনের বাইরে রাজনৈতিক দলের সমর্থক কম ছিল। তবে অন্য স্টেশনে বেশি সমর্থক থাকায় ট্রেনও ১০ থেকে ১৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকে।’’ আর এক যাত্রী ইউরেকা ঘোষ বলেন, ‘‘ট্রেন এত দ্রুত ছুটছে, অথচ, কোনও ঝাঁকুনি, অসবিধা টের পেলাম না।’’
মালদহ থেকে আলুয়াবাড়ি পর্যন্ত ট্রেনটিতে সফর করেন বিজেপির রায়গঞ্জের সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগ আরও উন্নত হল। মানুষের চাহিদা পুরণ করতে পেরে বিজেপির কর্মকর্তারাও উৎসাহিত। তাই শীতের মধ্যেও স্টেশনগুলিতে দাঁড়িয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।’’
বন্দে ভারতে ওয়াই-ফাই পরিষেবা আছে বলা হলেও এ দিন তা চালু ছিল না। ১ জানুয়ারি থেকে ওয়াই-ফাই চালু থাকবে বলে জানান রেল কর্তৃপক্ষ। ট্রেনের খাবারের মানও যথেষ্ট ভাল বলে জানান যাত্রী সুশান্ত দাস। তিনি বলেন, ‘‘টিফিন, সুপ, রাতের খাবার সব সময় মতো দেওয়া হয়েছে।’’
রেলের আইআরসিটিসির অস্থায়ী কর্মী সুমন হালদার বলেন, ‘‘দুরন্ত, শতাব্দী, রাজধানীর মতো এক্সপ্রেসে কাজ করেছি। বন্দে ভারতের পরিষেবায় সে ট্রেনগুলির থেকে উনিশ-বিশ ফারাক রয়েছে।’’