কমিশনের চূড়ান্ত রিপোর্টে কী ছিল, জানতে আর্জি হাইকোর্টে

মেয়াদ শেষে জমা পড়েছে— এই যুক্তি তুলে শ্যামল সেন কমিশনের চূড়ান্ত রিপোর্ট খারিজ করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। সেই রিপোর্টটি প্রকাশের আর্জি জানিয়েই জনস্বার্থ মামলা দায়ের হল কলকাতা হাইকোর্টে। আগামী সপ্তাহে এই মামলার শুনানি হতে পারে। সরকার যদিও কমিশনের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট খারিজের কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে জানিয়েছে বুধবার, মামলাটি দায়ের হয়েছে তার আগে, গত সোমবার।

Advertisement

অত্রি মিত্র

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৩১
Share:

আদ্যাপীঠে একটি অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় ও ইলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি শ্যামল সেন। ছবি সুদীপ্ত ভৌমিক।

মেয়াদ শেষে জমা পড়েছে— এই যুক্তি তুলে শ্যামল সেন কমিশনের চূড়ান্ত রিপোর্ট খারিজ করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। সেই রিপোর্টটি প্রকাশের আর্জি জানিয়েই জনস্বার্থ মামলা দায়ের হল কলকাতা হাইকোর্টে। আগামী সপ্তাহে এই মামলার শুনানি হতে পারে।

Advertisement

সরকার যদিও কমিশনের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট খারিজের কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে জানিয়েছে বুধবার, মামলাটি দায়ের হয়েছে তার আগে, গত সোমবার। সারদার আমানতকারী ও এজেন্ট সুরক্ষা মঞ্চের পক্ষে মামলাটি দায়ের করেছেন সুবীর দে। তিনি বলেন, ‘‘সারদা-সহ ৮৬টি বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার কার্যকলাপ তদন্তের জন্য শ্যামল সেন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছিল সরকার। কমিশনের কাজের পরিধি ঠিক করতে ছ’টি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। তদন্ত করে শেষ পর্যন্ত কমিশন কী পেল— তা জানার অধিকার সকলের রয়েছে। কিন্তু কমিশনের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট গ্রহণ করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে রাজ্য। সেই রিপোর্ট প্রকাশের আর্জি জানিয়েই আমরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছি।’’

মামলার মূল বিষয়ের সঙ্গে আরও কিছু দাবি যুক্ত করা হয়েছে। যেমন, আমানতকারীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য কমিশনকে ২৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল সরকার। এর মধ্যে ২৫১ কোটি টাকা কমিশনকে দেওয়া হয়। নানা কারণে আমানতকারীদের দিতে পারেনি বলে ১০২ কোটি টাকা সরকারকে ফিরিয়ে দেয় কমিশন। এ ছাড়া সারদার বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি বিক্রি করে দু’কোটির কিছু বেশি টাকা আয় করেছিল কমিশন। সেটাও সরকারের হাতে আসে। সব মিলিয়ে শ্যামল সেন কমিশনের জন্য বরাদ্দ ২৮৭ কোটি টাকার মধ্যে ১৪০ কোটি টাকা ফেরত পায় সরকার। এই টাকা কোথায়, কী ভাবে আছে, মামলার আর্জিতে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।

Advertisement

সরকারি সূত্রের খবর, মেয়াদ শেষের দিন রাত ১০টায় কমিশনের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট সরকারের কাছে পাঠিয়ে অফিস ছেড়েছিলেন শ্যামল সেন। যদিও সেই রিপোর্টে কমিশনের অন্য দুই সদস্যের সই ছিল না। তাই এই রিপোর্ট গ্রহণ করেননি নবান্নের কর্তারা। উল্টে বুধবার রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, কমিশন চলাকালীন যে অন্তর্বর্তী রিপোর্ট পেশ করেছিল কমিশন, সেটাকেই চূড়ান্ত বলে গণ্য করা হচ্ছে। এবং এই রিপোর্টই বিধানসভায় পেশ করা হবে।

সরকারের এই বক্তব্য জানার পরেই সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলি। স্বরাষ্ট্রসচিবের ঘোষণার মধ্যে সরকার কিছু লুকোনোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ তুলেছে তারা। একই অভিযোগ তুলেছে সুরক্ষা মঞ্চও। সুবীরবাবুর দাবি, ‘‘সারদা-কাণ্ডে মোট ৩ লক্ষ ৯০ হাজার আমানতকারীকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী ও কমিশন জানিয়েছে। সেই তালিকা কমিশনের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করে হয়েছে। অথচ খোঁজ নিয়ে জেনেছি, এর মধ্যে অনেকেই এখনও চেক পেলেও টাকা পাননি। কারণ, তাঁদের অনেকের চেক হয় বাউন্স করেছে, বা ভুল ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে।’’ তাঁদের অভিযোগ, সুদীপ্ত সেনের পর সরকারও আমানতকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।

সুরক্ষা মঞ্চ তাদের দাবির পক্ষে আবেদনের সঙ্গে এমন তিন জন আমানতকারীর হলফনামা পেশ করেছেন— যাঁদের চেক জমা নেয়নি ব্যাঙ্ক। ফলে তাঁরা ক্ষতিপূরণের টাকাও পাননি। সারদা ছাড়া বাকি বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থাগুলিকে তদন্ত করে কমিশন ও সরকার গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) কী তথ্য পেয়েছে, আদালতের কাছে তা-ও প্রকাশ করার আর্জি জানিয়েছে মঞ্চ।

নবান্নের খবর, ২০১৪-র ২৩ এপ্রিল কমিশন চালু হওয়ার পর থেকে টাকা ফেরত চেয়ে আবেদন জানান সাড়ে ১৭ লক্ষ আমানতকারী। এর মধ্যে সাড়ে ১২ লক্ষ আমানতকারী শুধু সারদা গোষ্ঠীর কাছেই টাকা রেখেছিলেন। এঁদের মধ্যে মাত্র আট হাজার আমানতকারীর শুনানি করে ৩ লক্ষ ৯০ হাজার জনকে চেক বিলি করে কমিশন। সুবীরবাবু জানান, হাইকোর্ট মামলাটি গ্রহণ করেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement