মহিউল আলম ও হিরু ঘড়ুই। নিজস্ব চিত্র।
দুষ্কৃতীদের লাগানো আগুনে পুড়ছে মহিউল আলমের কাপড়ের দোকান। মহিউল তখন দোকানে ছিলেন না। তাঁর দোকানের পাশে ফুল ও সবজির দোকান ছিল হিরু ঘড়ুইয়ের। সেই দোকানে ভাঙচুর হয়েছে আগেই। তবুও মহিউলের দোকান পুড়তে দেখে আর স্থির থাকতে পারেননি হিরু। কাঁদতে কাঁদতে ফোন করেছিলেন মহিউলকে। বলেছিলেন, ‘‘তোর দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। এখন পরিস্থিতি ভাল নয়। তোকে আসতে হবে না। আমি যতটা পারছি জিনিসপত্র বাঁচানোর চেষ্টা করছি।’’
ছবিটি গত শনিবার দুপুর সওয়া দুটোর। ঘটনাস্থল পাঁচলা বাজার। শুক্র ও শনি—এই দু’দিন ধরে পাঁচলার পরিস্থিতি ছিল অগ্নিগর্ভ। একের পর দোকান পোড়ানো হয়। নষ্ট করা হয় দোকানের জিনিসপত্র। একটি ক্লাবে ভাঙচুর করা হয়। দু’দিনই পুলিশের সঙ্গে জনতার খণ্ডযুদ্ধ হয়। শেষ পর্যন্ত পুলিশ শনিবার বিকেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এমনই দিনে আগুন ধরানো হয়েছিল মহিউলের দোকানে।
সোমবার ফোনে মহিউল বলেন, ‘‘ঘটনার সময় আমি ছিলাম দশ কিলোমিটার দূরে মেজুটি গ্রামের বাড়িতে। হিরুই আমাকে ফোনকরে বিষয়টা বলে। আমাকে ওখানে যেতে বারণ করেছিল। লড়েছে নিজে একা। পরমবন্ধু ছাড়া এমন আর কে করতে পারে!’’
হিরুও এটাকে বন্ধুর প্রতি কর্তব্য বলেই উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ব্যবসায়ীরাই পুকুর থেকে জল এনে সব দোকানের আগুন নিভিয়েছিলাম। পুলিশ আর র্যাফের ভয়ে ঠিক মতো কাজ করতে পারিনি। দমকল তো এল অনেক পরে। ততক্ষণে সব শেষ!’’
শনিবার বিকেল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানগুলি মেরামতি ও ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে টাকা দেওয়ায় উদ্যোগী হয় পাঁচলা ব্লক প্রশাসন। রবিবার দিনভর ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদারদের তালিকা তৈরি ও তাঁদের কাছ থেকে আবেদনপত্র জমা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ওই দিন থেকেই ঠিকা সংস্থাকে দিয়ে দোকানঘর মেরামতির কাজও শুরু করা হয় প্রশাসনের উদ্যোগে। সোমবার থেকে শুরু হয় চেক বিলি। মহিউল জানিয়েছেন, চেক বিলির খবরও তিনি পেয়েছেন হিরুর থেকেই।
দু’দিনের তাণ্ডব নিয়ে ক্ষুব্ধ মহিউল আর হিরুই। দু’জনেই বলেন, ‘‘বছরের পর বছর আমরা পাশাপাশি ব্যবসা করি। এক থালা থেকে খাই। এই অশান্তি তো ইচ্ছাকৃত করা হল। আমাদের সকলেই ক্ষতি হয়ে গেল।’’ হিরুর সংযোজন, ‘‘আগুন লাগিয়ে দোকান পোড়ানো যায়। কিন্তু বন্ধুত্ব কি তাতে নষ্ট হয়ে যায়?’’
বিডিও এষা ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা দোকান মেরামত এবং ক্ষতিপূরণ দিতে গিয়ে দেখেছি ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে রয়েছে উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ। তাঁদের মধ্যে কিন্তু কোনও বিভেদ নেই। সবাই নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক সুসম্পর্ক রেখেই ফের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।’’
একই কথা জানিয়েছে পুলিশও। গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিদের নিজেদের মধ্যে কোনও বিবাদ নেই। হামলা করেছে বিভেদকামী দুষ্কৃতীরা। তাদের চিহ্নিত করে ধরার চেষ্টা চলছে। কাউকে ছাড়া হবে না।