সেই পকেট ক্যালেন্ডার।
গরুপাচার মামলায় গ্রেফতারির পরে বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতির পদ থেকে না-সরালেও দলীয় কর্মসূচিতে অনুব্রত মণ্ডলের ছবি কিংবা তাঁর নামে স্লোগান তোলা এক প্রকার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বর্তমানে বীরভূমে শাসকদলের দায়িত্বে রয়েছে ৯ সদস্যের কোর কমিটি। অনুব্রত কোথাও নেই। ‘ব্রাত্য’ সেই অনুব্রতের ছবি ফিরল নতুন বছরের পকেট ক্যালেন্ডারে।
যদিও দলের তরফে নয়। অনুব্রত মণ্ডলের ছবি সংবলিত পকেট ক্যালেন্ডার ছাপিয়েছেন ময়ূরেশ্বর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা জেলার বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। মোট ২০০টি পকেট ক্যালেন্ডার ছাপিয়েছেন তিনি। সেই ক্যালেন্ডারের এক দিকে মাস তারিখ। অন্য দিকে, অনুব্রতের ছবি। ওই ক্যালেন্ডারের ছবি সমাজমাধ্যমেও ‘পোস্ট’ করেছেন তিনি। যে অনুব্রতকে কার্যত নিঃশব্দে ‘ছেঁটে’ ফেলা হয়েছে বলে তাঁর অনুগামীদের অভিযোগ, তাঁরই ছবি দিয়ে হঠাৎ কেন ক্যালেন্ডার ছাপাতে গেলেন ধীরেন্দ্র, সেটা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে জেলা তৃণমূলের অন্দরে।
ধীরেন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘কারা তাঁকে (অনুব্রত) ব্রাত্য করেছে জানি না। ওঁর কী দোষ, কী গুণ, সেটা আদালতের বিচার্য। তবে, আমার ৪০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে অনুব্রতের থেকে ভাল জেলা সভাপতি, ভাল সংগঠক আমি দেখিনি।’’ অনুব্রতের প্রতি তাঁর কিছু ক্ষোভ আছে জানিয়েও ধীরেন্দ্রনাথের মতে, ‘‘আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করছি, সংগঠনে একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে। তাই কাছের লোকজনের হাতে ওই ক্যালেন্ডার তুলে দিতে চাই।’’ অনুব্রতের অনুপস্থিতিতে সাংগঠনিক পরামর্শ দেওয়ার কেউ নেই বলেও আক্ষেপ এই প্রবীণ নেতার। স্বাভাবিক ভাবেই ধীরেন্দ্রনাথের এ হেন মন্তব্যে দলের বর্তমান নেতত্বের প্রতি ‘অভিমান’-এ আঁচ দেখতে পাচ্ছেন অনেকে।
অনুব্রত গ্রেফতার হওয়ার পরে পরে তাঁর ছবি ও নাম ব্যবহারে প্রাথমিক ভাবে প্রভাব না-পড়লেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দলীয় কর্মসূচিতে তাঁর নামে স্লোগান বা তাঁর ছবি ব্যবহারেও ‘অলিখিত’ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। জেলার অনেক দলীয় কার্যলয়ের সামনে থেকেও সরানো হয়েছিল অনুব্রতের ছবি। কয়েক মাস আগে সব জেলার সভাপতির তালিকায় বীরভূমে অনুব্রতের নাম ছিল না। তার বদলে কোর কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে, দলের একাংশের অভিযোগ, কোর কমিটির সদস্যদের মধ্য সমন্বয়ের অভাব নিয়ে চর্চা রয়েছে।
এই প্রেক্ষিতে গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের আসনে মোট ৯ বার জয়ী ধীরেন্দ্রনাথের মতো প্রবীণ নেতা যখন প্রকাশ্যে অনুব্রত সম্পর্কে এমন দরাজ প্রশংসা করছেন, তাঁর ছবি ব্যবহার করে ক্যালেন্ডার ছাপাচ্ছেন, তা নিয়ে যথেষ্ট কৌতূহল তৈরি হয়েছে। ধীরেন্দ্রনাথের কথায়, ‘‘আমার দুঃখ আছে। আমার জন্য বিচার তিনি (অনুব্রত) করেননি। বরং আমি মনে করি, আমার যে যোগ্যতা ছিল, সেই জায়গায় আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়নি। ওঁর উপস্থিতিতই জেলা পরিষদের মেন্টর থেকে আমাকে কো-মেন্টর করা হয়েছিল। তা সত্বেও আমি বলছি, যে-ভাবে অনুব্রত মণ্ডল দল ও প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করতেন, তেমন কাউকে দেখিনি।’’ এখন সাংগঠনিক পরামর্শ নেওয়ার জন্য কাউকে পান না বলেও তাঁর দাবি।
এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘কেউ তাঁর নিজের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা দিয়ে মনে করতেই পারেন, অনুব্রত মণ্ডলের অনুপস্থিতি বড় ঘটনা। কিন্তু, এক জন মানুষ সারাজীবন একই দায়িত্বে থাকেন না। তিনি দক্ষ হাতে সব সামলেছেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে দল তো থেমে যাবে না। এখন যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁরা নিজেদের মতো করে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।’’