প্রতীকী ছবি।
কোনও কোনও জেলায় ছাত্রছাত্রীরা ফোন করেছে। লাইন পেয়েছে। যা নিয়ে তাদের সমস্যা ছিল, বুঝিয়ে দিয়েছেন শিক্ষকেরা। কিন্তু এর ঠিক বিপরীত ছবি বেশ কিছু জেলায়। সেখানে ফোনে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছ থেকে স্কুলপড়ুয়াদের সাহায্য পাওয়ার সরকারি প্রক্রিয়া মঙ্গলবার পর্যন্ত শুরুই হয়নি। ওই সব জেলায় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রশিক্ষণ চলছে এখনও। কবে ফোনে পঠনপাঠনের সুযোগ পাবে পডুয়ারা, তা স্পষ্ট নয়।
‘বাংলার শিক্ষা দূরভাষে’ কর্মসূচির এই দু’রকম ছবি কেন, সেই প্রশ্ন উঠছে। মঙ্গলবার ওই কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে সোমবারেই বীরভূমে তার সূচনা হয় বলে জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর। অথচ উত্তর ২৪ পরগনা, হুগলি, নদিয়ায় এ দিনেও তা চালু হয়নি। উত্তর ২৪ পরগনা, হুগলি ও আলিপুরদুয়ারে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রশিক্ষণ চলছে। নদিয়ার জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) কুণালকান্তি রায় সিংহ জানান, এই কর্মসূচির জন্য সরকারের কাছ থেকে এ-পর্যন্ত মাত্র এক জন জীবনবিজ্ঞান শিক্ষকের নাম এসেছে।
ফোনে প্রশ্নোত্তর শুরু হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া, হাওড়ায়। টোল ফ্রি নম্বরের মাধ্যমে ‘ডাউট ক্লিয়ারিং সেশন’ এ দিন শুরু হয়েছে পশ্চিম বর্ধমানে। জেলার ১২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে আপাতত দু’দলে ভাগ করা হয়েছে। একটি দল সোম, বুধ, শুক্রবার পড়ুয়াদের প্রশ্নের উত্তর দেবে। অন্য দল দেবে মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনিবার। বাঁকুড়ার সোনামুখী বি জে হাইস্কুলের দশম শ্রেণির পড়ুয়া সুস্বাগতম রজক বলল, ‘‘বাংলার একটি অসুবিধা নিয়ে রাজ্য সরকারের চালু করা নম্বরে এ দিন ফোন করেছিলাম। লাইন পেতে দেরি হয়নি। ফোনের ও-পারের মাস্টারমশাই খুব ভাল ভাবে বিষয়টি বুঝিয়ে দেন।’’ পাঁশকুড়ার শ্যামসুন্দরপুর পাটনা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র শুভদীপ কাজলির কথায়, ‘‘ফোনে যে-কোনও বিষয়ের সমস্যা মিটিয়ে দিচ্ছেন শিক্ষকেরা। এতে খুব উপকার হচ্ছে।’’
এই পদ্ধতিতে পড়ানোর জন্য উত্তরবঙ্গের মালদহে ৪২ জন, দক্ষিণ দিনাজপুরে ন’জন, উত্তর দিনাজপুরে ২১ জন শিক্ষককে বেছে নেওয়া হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনির মৌপাল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রসূনকুমার পড়িয়া বলেন, ‘‘নবম ও দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেও টোল ফ্রি নম্বর দিয়েছি। যাতে ওদের সুবিধা হয়।’’
বীরভূম শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই জেলার ১১ জন শিক্ষক এই কর্মসূচির প্যানেলে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে সাত জন সোম, বুধ শুক্রবার পড়ুয়াদের প্রশ্নের উত্তর দেবেন। চার জন পড়ুয়াদের সাহায্য করবেন মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনিবার। বোলপুর নিচুপট্টি উচ্চ বিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানের শিক্ষক শৌভিক ঘোষ বলেন, ‘‘সোমবার আমি ৩৭টি ফোন পেয়েছি। মঙ্গলবার ৮০টি। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের ছাত্রছাত্রীরা তাদের সমস্যা নিয়ে ফোন করেছিল।’’
রাজ্য পাঠ্যক্রম কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার জানান, এই কর্মসূচি সাড়া ফেলেছে প্রথম দিনেই। ১১ হাজার পড়ুয়া এ দিন শিক্ষকদের সাহায্য চেয়েছে। যারা প্রথম পর্বে ফোন পায়নি, তারা পরের পর্বে পেয়েছে। তবে কিছু পড়ুয়া লাইন না-ও পেয়ে থাকতে পারে। ‘‘আমরা হেল্পলাইনের সংখ্যা বাড়াব। বাড়বে শিক্ষকের সংখ্যাও। আরও বেশি পড়ুয়া সুযোগ পাবে। শুধু নবম-দশম নয়, অন্য শ্রেণির পড়ুয়ারাও যাতে এই শিক্ষা পরিষেবা পায়, আমরা সেটা দেখছি,’’ আশ্বাস অভীকবাবুর।