মুখ ঢেকে: বাঁকুড়ার নতুনচটি এলাকায় ‘সুফল বাংলা’ স্টলে। ছবি: অভিজিৎ সিংহ
হেলমেটে মুখ ঢেকে কে বটে পেঁয়াজের লাইনে?
বাঁকুড়া শহরের নতুনচটিতে ‘সুফল বাংলা’র স্টলে গত ২২ নভেম্বর থেকে ৫৯ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ মিলছিল, খোলা বাজারে তখন যার দাম ৯০ টাকা কেজি। তখন লাইনে দাঁড়ালে মাথাপিছু এক কেজি পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল। ছবি বদলাল খোলা বাজারে পেঁয়াজের দর চড়ায়। সে দর যবে থেকে ১৩০-১৪০ টাকা কেজিতে পৌঁছেছে এবং মাথাপিছু ৫০০ গ্রাম করে পেঁয়াজ দেওয়া হচ্ছে, লাইনে দেখা মিলছে হেলমেটওয়ালাদের। অভিযোগ, অনেকে এক বার হেলমেটে মুখ ঢেকে পেঁয়াজ কিনছেন। সে বারের বরাদ্দ অন্যত্র রেখে ফের হেলমেট খুলে দাঁড়াচ্ছেন লাইনে।
নতুনচটির ‘সুফল বাংলা’ স্টলের পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে একটি কৃষি সমবায় সমিতি। কর্মীরা জানাচ্ছেন, রোজ পাইকারি বাজার থেকে সাড়ে চার-পাঁচ কুইন্টাল পেঁয়াজ কেনা হচ্ছে স্টলের জন্য। সকালে সাড়ে ৮টায় বিক্রি শুরু। কিন্তু লাইন পড়ছে সকাল ৬টা থেকে। অন্তত ছ’শো লোক তাতে। শুরু হওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পেঁয়াজ শেষ। ফের বিক্রি শুরু বিকেল সাড়ে ৪টে থেকে। তার জন্য লাইন পড়ছে দুপুর ২টো থেকে। লাইনে দাঁড়িয়েও সবাই পেঁয়াজ পাচ্ছেন না। তারই মধ্যে এক লোককে একাধিক বার লাইনে দাঁড়াতে দেখে গোড়ায় অশান্তি হচ্ছিল। স্টলের ইনচার্জ তাপস দাসের কথায়, ‘‘টাইম কলের লাইনে জলের জন্য যেমন ঝঞ্ঝাট হয়, পেঁয়াজ কেনার লাইনেও তেমন হচ্ছিল। রোজ মনে হচ্ছে, এই বুঝি হাতাহাতি হল!’’
শনিবার থেকে বাঁকুড়ার ওই স্টলটিতে ক্রেতার লাইনের দিকে মুখ করে বসানো হয় একটি ভিডিয়ো ক্যামেরা। যাতে কারও বারবার লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে হাওয়া তেতে উঠলে ‘ফুটেজ’ দেখে সামাল দেওয়া যায়। লাভ হয়নি। লাইন সামলানোর জন্য পুলিশ চাওয়া হয়। রবিবার বিকেল থেকে তা-ও রয়েছে। তার পরেও ক্রেতাদের অভিয়োগ, কেউ পরিবারের সবাইকে নিয়ে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। কেউ আসছেন হেলমেটে মুখ ঢেকে।
আরও পড়ুন: এত পেঁয়াজ, বাড়ছে কেন দাম: মমতা
কেন? একাধিক হেলমেটধারীর দাবি, ‘‘৫০০ গ্রাম পেঁয়াজে কী হবে? এই দরে পেঁয়াজ পেতে হলে লাইন দেওয়া ছাড়া, গতি নেই। কিন্তু বার বার লাইনে দাঁড়াতে দেখে লোকে গালমন্দ করছে, তাই।’’
বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি শুভাশিস বটব্যাল রাজ্য ‘অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ় কর্পোরেশন’-এর ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘‘সবার উচিত, ‘সুফল বাংলা’ স্টলের কর্মীদের সঙ্গে সহযোগিতা করে নিয়ম মেনে পেঁয়াজ নেওয়া।’’ ‘হেলমেট’-এর প্রতিকার কী? জেলার এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘কে বার বার লাইনে দাঁড়াচ্ছে, সেটা পুলিশের পক্ষে দেখা অসম্ভব। তেমন হলে, লাইনে থাকা জনতাকেই প্রতিবাদ করতে হবে।’’