Panchayat elections

বিরোধিতা দুর্বল হলেই কমে সংঘর্ষ

বাসন্তীতেও বাম আমল থেকেই বোমা-বন্দুকের রাজনীতি শুরু হয়েছিল। এখানে প্রথমে লড়াইটা ছিল সিপিএম এবং আরএসপির। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের দিন নিহত হয়েছিলেন তিন আরএসপি কর্মী।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৩ ০৬:৫০
Share:

২০১৮ -এর পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়কার চিত্র। ফাইল চিত্র।

‘লড়াই’ গিয়েছে থেমে? আপাত ভাবে ছবিটা তেমনই।

Advertisement

এক কালে জায়গাগুলিতে কথায় কথায় বার হত ভক্সল, তরোয়াল। ওয়ান শটার থেকে তুলনায় আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র দেখা যেত অনেকেরই হাতে। দিনের পর দিন সেই সব দৃশ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল আরামবাগ, গড়বেতা, কেতুগ্রাম, খণ্ডঘোষ, নানুর, লাভপুর, ভাজাচাউলি, শাসন, আমডাঙা বা বাসন্তীর মতো এলাকায়।

আর একটা পঞ্চায়েত ভোট আসছে। এখন কেমন আছে এলাকাগুলি?

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে দাবি, এখনও পর্যন্ত পরিস্থিতি ‘শান্ত’। কী ভাবে ছবিটা পাল্টাল? রাজনীতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করেন, রাজনৈতিক জমি দখলের লড়াইয়ে যত দিন শাসক দল ও বিরোধীরা মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে, সংঘাত হয়েছে। ২০১১-র পর থেকে ওই সব জায়গায় বিরোধীদের শক্তিক্ষয় অব্যাহত। একাধিপত্য চলছে শাসক দলের। তাদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে। অস্ত্র নিয়ে ‘যুদ্ধ’-এর প্রয়োজনও তাই আপাতত নেই।

তৃণমূলের রাজ্য নেতা কুণাল ঘোষের কটাক্ষ, ‘‘বিরোধীদের সঙ্গে লোক না থাকলে তার দায় তো আমরা নিতে পারি না।’’

হুগলির আরামবাগ এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তী— এই দু’জায়গায় রাজনৈতিক সন্ত্রাসের ‘ঐতিহ্য’ দীর্ঘ কয়েক দশকের। সেই আশির দশক থেকে নব্বইয়ের দশকের শেষার্ধ পর্যন্ত আরামবাগে মূল লড়াই হত দুই বাম শরিকের। সিপিএম বনাম ফরওয়ার্ড ব্লক। তৃণমূল প্রধান বিরোধী শক্তি হয়ে ওঠার পর থেকে প্রতিপক্ষ বদলে যায়। ২০০৯ থেকে ২০১১— শুধুমাত্র এই তিন বছরে আরামবাগ মহকুমায় বাম-তৃণমূলের গ্রাম দখলের লড়াইয়ে নিহত হন অন্তত ১৫ জন। ২০২১ সালে এই মহকুমার চারটি বিধানসভা আসনই বিজেপি জিতেছে। কিন্তু তেমন হিংসা দেখা যায়নি। পর্যবেক্ষকদের দাবি, বিজেপির সংগঠন তত শক্ত নয় এখনও, তাই সংঘর্ষ হয়নি। তৃণমূলের দাবি, “প্রশাসন খুব সক্রিয়। তা ছাড়া, এত খুনোখুনির পর কোনও রাজনৈতিক দলই আর রক্তপাত চাইছে না।’’

বাসন্তীতেও বাম আমল থেকেই বোমা-বন্দুকের রাজনীতি শুরু হয়েছিল। এখানে প্রথমে লড়াইটা ছিল সিপিএম এবং আরএসপির। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের দিন নিহত হয়েছিলেন তিন আরএসপি কর্মী। রাজ্যে পালাবদলের পরেও বাসন্তী থেকে গিয়েছিল বামেদের হাতে। ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে প্রথম বার এই কেন্দ্র জেতে তৃণমূল। বামেদের বড় অংশই মিশে যায় ওই দলে।

সিপিএম-তৃণমূল রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে এক সময়ে উত্তপ্ত হত পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা, সবং, পিংলার বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চল। ‘সন্ত্রাসদীর্ণ’ পূর্ব মেদিনীপুরের ভাজাচাউলিও এখন বদলে গিয়েছে। উদাহরণ আরও আছে।

২০১১-তে রাজ্যে পালাবদলের পর থেকেই সন্ত্রাসের ছবিটায় বদল আসে— এ কথা মানছেন না বহু প্রবীণ রাজনীতিক। তাঁদের মতে, বিরোধীরা কমজোরি হলেও তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তখন বেড়েছিল। বিশেষত, যুব তৃণমূলের সঙ্গে দলের মূল সংগঠনের লড়াইকে ঘিরে বিভিন্ন এলাকা উত্তপ্ত হয়। তবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলের যুব সভাপতির পদ থেকে সরে মূল সংগঠনে চলে আসার পরে অভ্যন্তরীণ লড়াইয়েরও আপাত অবসান ঘটেছে। এখন গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থাকলেও তা এলাকা দখল নিয়ে লড়াইয়ের মতো বড় নয়।

পরিসংখ্যান বলছে, গত পঞ্চায়েত ভোটে শুধু বাসন্তীতে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বহু সংঘর্ষে নিহত হন অন্তত ১০ জন। সেই সময়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে বারবার উঠেছে এই জেলারই ভাঙড়ের নাম। নদিয়ার শান্তিপুর ও রানাঘাটে তৃণমূলের গোষ্ঠী-কোন্দল এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। ফলে, অশান্তিও প্রায় নেই।

একই ভাবে খণ্ডঘোষে এক সময়ে অশান্তির পিছনে ছিল মূলত তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই। আবার, বিজেপির উত্থানও উত্তাপ বাড়িয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে শাসক দলের দুই গোষ্ঠীর বিবাদ অনেকটাই মিটেছে। কেতুগ্রামে এক সময়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটেছে। মালদহের কালিয়াচকে মোজমপুর এলাকাতেও ২০১২ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত গুলি, বোমাবাজির ঘটনা ছিল নিত্য দিনের ঘটনা। সে ছবিও বদলেছে। বিশেষত, দুষ্কৃতীদের অনেককে পুলিশ ধরার পরে।

এ সবের পরেও তুষের আগুন রয়ে গিয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement