ভিড়: বুধবার বালুরঘাটের এক বাজারে। ছবি: অমিত মোহান্ত
বুধবার বেলা ৩টে। মালদহের ইংরেজবাজারের রথবাড়ি বাজারের সামনে স্কুটি নিয়ে দাঁড়িয়ে চল্লিশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি। পিছনের আসনে ২৫ কেজি ওজনের দুটো চালের বস্তা। সামনে থলে ভরা আনাজ আর ডিম।
এত বাজার? ক্রেতার জবাব, “শহরে টানা ১৫ দিন লকডাউন চলছিল। বৃহস্পতি ও শনিবার আবার সার্বিক লকডাউন। তাই মালপত্র মজুত করে নিচ্ছি।”
টানা নয়, পরপর দু’দিনও নয়। তবু প্রতি সপ্তাহে জোড়া লকডাউন শুরুর আগে উত্তর থেকে দক্ষিণ— রাজ্যের বিভিন্ন জেলাতেই নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনার এই প্রবণতা দেখা গিয়েছে বুধবার। দোকানবাজারে ভিড় জমেছে। উত্তরবঙ্গে করোনা সংক্রমণে শীর্ষে থাকা মালদহ, শিলিগুড়ি ও উত্তর দিনাজপুরে উধাও হয়েছে সামাজিক দূরত্ব। শিলিগুড়ির টিকিয়াপাড়া, নিউ সিনেমা হল, সুভাষপল্লি বাজারে উপচে পড়া ভিড়ের ছবি ভাইরাল হয় সমাজ মাধ্যমে। দুপুরে পুলিশ শিলিগুড়ির বিভিন্ন বাজারে হানা দিয়ে দোকান বন্ধ করে। ধরপাকড়ও চলে।
পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানের বিভিন্ন বাজারেও ভিড় ছিল। কালনা, কাটোয়ার বাজারে স্বাস্থ্যবিধি ভেঙেই কেনাকাটা চলে। অনেকের মুখে মাস্কও ছিল না। বর্ধমান শহরে বুধবার থেকে সাত দিন সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। সেখানেও সকালে বিভিন্ন বাজারে ভিড় জমে। পরে নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ। দুর্গাপুরের বিভিন্ন বাজারে পুলিশি নজরদারি ছিল। বিধিভঙ্গের জন্য বেনাচিতি বাজারে ধরপাকড় হয়েছে। আসানসোল মহকুমার অধিকাংশ বাজার দুপুর ১টা পরেও খোলা ছিল। পরে পুলিশ দোকান বন্ধ করে।
বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার বাজারগুলিতেও বাড়তি ভিড় ছিল। আদ্রার সাউথ সেটেলমেন্টের আনাজ বিক্রেতা বিনয় পাল জানাচ্ছেন, দুপুর পর্যন্ত তিনি দুশো কেজি আলু, ৫০ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন। অন্য দিন, অর্ধেক বিক্রি হয়। শহর মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামেও মাছ-আনাজ বাজারেও ভিড়ের ছবি। ঝাড়গ্রাম জুবিলি বাজারের মাছ ব্যবসায়ী বাবলু রাউত বলেন, বৃহস্পতিবার অনেকেই মাছ খান না। তা-ও এ দিন ক্রেতা বেশি ছিল।’’ বাসেও অন্য দিনের থেকে বেশি যাত্রী হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মৃগাঙ্ক মাইতি বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার লকডাউনের আগে অনেকেই গন্তব্যে গিয়েছেন। তাই খানিকটা বেশি যাত্রী হয়েছে।’’
নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়ার মতো জেলাগুলিতে অবশ্য বাজারে তেমন হুড়োহুড়ি ছিল না। সিউড়ির আনাজ ব্যবসায়ী শেখ মকিদ হোসেন, শেখ নুর হোসেনরা বলছেন, ‘‘প্রথমবার লকডাউন ঘোষণার পর যে পরিস্থিতি হয়েছিল সে রকম কিছু এ বার হয়নি।’’ উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট, ব্যারাকপুর, বনগাঁর কিছু এলাকায় স্থানীয় প্রশাসনের তরফে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে, বাজারহাট এমনিতেই বন্ধ। অন্যত্রও এ দিন অতিরিক্ত কেনাকাটার বহর চোখে পড়েনি। ক্যানিং, গোসাবার একাধিক বড় বাজারও বন্ধ রাখা হয়েছে। জয়নগর, ডায়মন্ড
হারবারে বাজারে হুড়োহুড়ি না থাকলেও, সকালের দিকে মুদির দোকানগুলিতে ভিড় ছিল। বৃহস্পতিবার লকডাউন, মাঝে শুক্রবার খোলা আবার শনি-রবি ব্যাঙ্ক বন্ধ। তাই এ দিন হাওড়ায় ব্যাঙ্কগুলিতে বেশ ভিড় ছিল।