প্রতীকী ছবি।
ভোট বা রাজনৈতিক সংঘর্ষের জেরে অনেক সময় বিভিন্ন দলের কর্মী-সমর্থকেরা ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হন। এ বার ‘কাটমানি’-কে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ হবে জেনে বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে নিজেই এলাকা ছাড়লেন রাজ্যের শাসক দলের এক কাউন্সিলর! বিক্ষোভ থেকে বাঁচতে কাটমানি ফেরতের মুচলেকা দিয়েছেন অন্য এক তৃণমূল নেতা। তৃণমূলেরই এক অঞ্চল সভাপতি নিজের দলের নেতাকে দিয়েছেন ‘বিজেপি-কর্মী’র তকমা।
কাটমানি ফেরতের দাবিতে পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে কোচবিহার রবিবার উত্তপ্ত হয়ে উঠলেও অন্য ছবি দেখা গিয়েছে কলকাতায়। তোলাবাজির অভিযোগ করায় এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করলেন কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর পুষ্পালি সিংহ। পুলিশি সূত্রের খবর, শুক্রবার সিঁথি থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। সুমন্ত চৌধুরী নামে ওই ব্যবসায়ী সংবাদমাধ্যমে পুষ্পালিদেবীর বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ করেছিলেন। কাউন্সিলরের পাল্টা অভিযোগ, তাঁর সম্মানহানি করতে মিথ্যা রটাচ্ছেন সুমন্তবাবু। ওই ব্যবসায়ী তৃণমূলের চিকিৎসক-সাংসদ-কাউন্সিলর শান্তনু সেনের নামেও অভিযোগ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে পাল্টা আইনি ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শান্তনুবাবুও।
এ দিন সকালে বীরভূমের ইলামবাজার পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কামারপাড়ায় তৃণমূলের বুথ সভাপতি পিন্টু মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি ঘিরে কাটমানি ফেরতের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান কিছু গ্রামবাসী। তাঁদের বক্তব্য, পিন্টুবাবুর কথাতেই সরকারি প্রকল্পের সুবিধাভোগী ঠিক হয়। ১০০ দিনের কাজের মজুরি না-দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। সাত দিনের মধ্যে সব টাকার হিসেব দেবেন এবং ১০০ দিনের কাজের মজুরির প্রাপ্য টাকা ফেরাবেন— এই মর্মে মুচলেকা দিয়ে ঘেরাওমুক্ত হন পিন্টুবাবু।
বাড়ি তৈরির সরকারি প্রকল্প থেকে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগে বাঁকুড়ার সোনামুখী পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর ঝিলিক দত্তের বাড়ির সামনেও বিক্ষোভ হয়েছে। তৃণমূলের খবর, আগেভাগে খবর পেয়ে বাড়িতে তালা দিয়ে এলাকা ছাড়েন কাউন্সিলর। তাঁর প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটের চাণক গ্রামে সালিশি সভা ডেকে কে কত টাকা কাটমানি নিয়েছেন, জানালেন গ্রামবাসীরা। অভিযুক্ত দুই তৃণমূল নেতা অপূর্ব ঘোষ ও কালীময় গঙ্গোপাধ্যায় এ দিন সকালে গ্রামবাসীদের সামনে ‘দোষ’ স্বীকার করেছেন বলে খবর। তবে ফোনে ওই দুই নেতা অভিযোগ মানতে চাননি। তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি রমজান শেখ বলেন, ‘‘ওই দু’জন বিজেপির কর্মী। এলাকায় উত্তেজনা বাড়াতে গ্রামবাসীদের উস্কানি দেওয়া হচ্ছে।’’ আউশগ্রামের পাণ্ডুক গ্রামেও তৃণমূলের বুথ সভাপতি উজ্জ্বল মণ্ডলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে। উজ্জ্বলবাবুর দাবি, তিনি চাঁদা নিয়েছিলেন, কাটমানি নয়।
বালুরঘাটে তৃণমূল কাউন্সিলর নীতা হাঁসদার বিরুদ্ধে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ দায়ের হয়েছে পুলিশের কাছে। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদের সদস্য শিপ্রা নিয়োগীর বাড়িতে ভাঙচুর হয়। তিনি এখন দিল্লিতে আছেন। কোচবিহারে সিতাইয়ের বিধায়ক-সহ বহু তৃণমূল নেতা কাটমানি ফেরতের ভয়ে ঘরছাড়া বলে বিজেপির অভিযোগ। তবে তৃণমূলের দাবি, বিজেপির সন্ত্রাসেই নেতা-কর্মীরা এলাকা ছাড়া। আলিপুরদুয়ারেও টাকা ফেরতের দাবি উঠেছে। পশ্চিম বর্ধমানের লাউদোহায় তৃণমূল নেতা রবিলাল মণ্ডলের তালাবন্ধ বাড়ির সামনেও বিক্ষোভ হয়। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। হুগলির গোঘাট-২ ব্লকে দুই তৃণমূল নেতার বাড়ি ঘেরাও হয়েছে।
সরকারি প্রকল্পে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগে এ দিন মেদিনীপুরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর রোকাইয়া খাতুনের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ হয়। কাউন্সিলর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ডেবরা-২ পঞ্চায়েতের তৃণমূলের সদস্য অনিমেষ দে-সহ দুই নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে শনিবার সন্ধ্যায় অভিযুক্ত ও অভিযোগকারীদের থানায় ডাকে পুলিশ। তবে মামলা রুজু হয়নি।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।