কোথাও বসন্তের বাতাস, কোথাও আগুন ঝরছে। যে দখিনা বাতাস শান্তি দিচ্ছে কলকাতাকে, সে-ই আবার বর্ধমান-বাঁকুড়া-পুরুলিয়ায় তাপপ্রবাহের অন্যতম কারণ।
তাপপ্রবাহ চলছে মধ্য ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকায়। মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়ের গরম বাতাস ঢোকায় তাপপ্রবাহের কবলে ঝাড়খণ্ডের সব শহর। ৫০ বছরে মার্চের তাপমাত্রায় রেকর্ড গড়েছে জামশেদপুর। বিপজ্জনক ভাবে বেড়েছে অতিবেগুনি রশ্মির বিকিরণও। খুব প্রয়োজন না হলে ঘরবন্দি থাকারই পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
এই তাপপ্রবাহই ঝাড়খণ্ড হয়ে ঢুকছে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম, জঙ্গলমহল ও বর্ধমানের শিল্পাঞ্চলে। এমনিতে সেই গরম বাতাসের চলে আসার কথা বর্ধমান, হুগলি, হাওড়া হয়ে কলকাতা ও দুই ২৪ পরগনার দিকে। কিন্তু এ বার সেটা হচ্ছে না। পশ্চিমাঞ্চল থেকে গরম বাতাসটা আটকে যাচ্ছে সমুদ্র থেকে ধেয়ে আসা জোলো বাতাসের দেওয়ালে। যার নাম দখিনা বাতাস। তার কাছে বাধা পেয়ে গরম হাওয়া মুখ ঘুরিয়ে চলে যেতে চাইছে যে দিক থেকে এসেছিল, সেই দিকে। কিন্তু মধ্যভারত থেকে ধেয়ে আসা গরম বাতাসের স্রোতে তা আর পিছোতেও পারছে না। গরম বাতাস জমে যাচ্ছে বাঁকুড়া-পুরুলিয়ার উপরেই। এবং জমে যাচ্ছে এক জায়গাতেই, আর সেখানে তাপমাত্রা চলে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায় তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি ছুঁই ছুঁই। গায়ে যেন সূচ ফোটাচ্ছে গরম বাতাস। এ দিকে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় সকালে-রাতে আরাম দিচ্ছে দখিনা বাতাস। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আটকে আছে ৩৪-৩৫ ডিগ্রিতে। বেলা বাড়লে অবশ্য বাতাসের জলীয় বাষ্প কলকাতাতেও অস্বস্তি বাড়িয়ে তুলছে। মানুষ ঘেমেনেয়ে একসা।
এই সময়ে হঠাৎ এমন জোরালো দখিনা বাতাস কেন? আবহবিদেরা বলছেন, ওড়িশা থেকে কলকাতা হয়ে উত্তর-পূর্ব ভারত পর্যন্ত একটি নিম্নচাপ রেখার জন্য বায়ুপ্রবাহের পরিবর্তন ঘটেছে। ওই নিম্নচাপ রেখাই সমুদ্র থেকে জোরালো জোলো বাতাস ঢুকিয়ে দিচ্ছে পরিমণ্ডলে। বছরের এই সময়টায় এই ধরনের জোরালো দখিনা বাতাস স্বাভাবিক নয়। বরং এতে আবহাওয়ার নির্দিষ্ট ছন্দই ব্যাহত হয়। স্বাভাবিক নিয়মে রাঢ়বঙ্গের সঙ্গে সঙ্গে কলকাতার তাপমাত্রাও বাড়ার কথা ছিল। কিন্তু মহানগর ও সংলগ্ন এলাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এ সময়ের স্বাভাবিকের নীচেই রয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: রোদ উঠলে গায়ে ছ্যাঁকা,রাস্তা ফাঁকা
মহারাষ্ট্রের কিছু এলাকা, বিদর্ভ, রাজস্থান, গুজরাত, উত্তরপ্রদেশের কিছু এলাকা, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, ঝাড়খণ্ডে এখন তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। মৃত্যুও হয়েছে বেশ কয়েক জনের। আবহবিদেরা বলছেন, এটাই আবহাওয়ার স্বাভাবিক ছন্দ। এই ছন্দ জুন মাস পর্যন্ত বজায় থাকে কি না সেটাই দেখার। এল নিনো-র শক্তিবৃদ্ধির জন্য এ বার বর্ষা কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যা দেশের অর্থনীতিতে আঘাত হানবে বলেও মনে করছেন অনেকেই।
গ্রাফিক্স: অমিতাভ চন্দ্র
(তথ্য সহযোগিতা: আর্যভট্ট খান)