ফাইল চিত্র।
ফের পূর্ব মেদিনীপুরে উপকূলের আকাশে মেঘের ঘনঘটা। সোমবার সকাল থেকে বিক্ষিপ্তভাবে তো বটেই, দীর্ঘক্ষণ মুষলধারে বৃষ্টিও হচ্ছে।
জোয়ার ঠেকাতে ভরসা ছিল যে সমুদ্রবাঁধ, ইয়াসের দাপটে জলোচ্ছ্বাসে তা প্রায় নিশ্চিহ্ন। ফলে, সমুদ্র আবার উথালপাথাল হলে কী হবে, ভেবে থই পাচ্ছেন না উপকূলবাসী। সামনেই আবার অমাবস্যার কটাল। তাই ভয়ে কাঁটা হয়ে রয়েছে রামনগরের চাঁদপুর, টেংরামারি, খীরপাল, কায়মা, জলধার মতো একের পর এক গ্রাম।
‘ইয়াস’ স্থলভূমিতে আছড়ে পড়ার আগেই বঙ্গোপসাগরে ব্যাপক জলোচ্ছ্বাস হয়। তার ঝাপটায় চুরমার হয়ে গিয়েছে শঙ্করপুর থেকে তাজপুর পর্যন্ত সমুদ্রবাঁধ। সম্প্রতি মেরিন ড্রাইভের রাস্তার ধার বরাবর যে কংক্রিটের গার্ডওয়াল তৈরি করছিল সেচ দফতর, সেটিও অধিকাংশ জায়গায় ভেঙে গিয়েছে। আর চাঁদপুরের কাছে ২০০ মিটারের বেশি এলাকা জুড়ে বাঁধ পুরোপুরি ভেসে গিয়েছে। সমুদ্র আর লোকালয়ের মধ্যে কার্যত কোন দূরত্বই নেই।
এখনও ওই এলাকার ১২টি গ্রাম পুরোপুরি জলবন্দি। বেশিরভাগ গ্রাম জনমানবশূন্য। বহু মানুষ ত্রাণ শিবিরেও আছেন। এই জলভাসি অবস্থার মধ্যেই আবার এ দিন থেকে আকাশে জমাট মেঘ। মাঝে মধ্যে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। তার জেরে দুর্গতদের ত্রাণ বিলির কাজও ধাক্কা খাচ্ছে।
আজ, মঙ্গলবার থেকে রাজ্যে মৌসুমী বায়ুর আগমন ঘটবে বলে আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। ফলে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টির মধ্যেই এ দিন রামনগর-১ ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত সব ত্রিপল, রান্নার সরঞ্জাম, চাল, ডাল,আলু বিলি করা হয়েছে। বিডিও বিষ্ণুপদ রায় বলেন, "পঞ্চায়েতগুলিকে এমন জায়গায় ত্রাণ শিবির করতে বলা হয়েছে যেখান থেকে পার্শ্ববর্তী তিনটি গ্রামের লোক এসে প্রয়োজনমতো ত্রাণ সংগ্রহ করতে পারেন।"
চাঁদপুর গ্রামের দাস পাড়ার অসিত পাত্র, উত্তম পাত্রদের সর্বস্ব কেড়েছে জলোচ্ছ্বাস। উত্তম বলছেন, "বাড়িঘর সব জলের তলায়। আর সামনের বাঁধের যা অবস্থা, তাতে অমাবস্যার কটালের পরে আর কিছুই থাকবে না।" ঘূর্ণিঝড় কেটে যাওয়ার পাঁচ দিন পরেও জল জমে রয়েছে ওল্ড দিঘার নেহরু মার্কেট এবং আশেপাশের বাজারগুলিতেও। আপাতত ১১৬ বি জাতীয় সড়কের উপরেই বসছে বাজার।
রামনগর ১-এর বিডিও বিষ্ণুপদ বলেন, "অমাবস্যার কটালের আগে অস্থায়ীভাবে হলেও বাঁধ মেরামত করতে হবে। এ ব্যাপারে সেচ দফতরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছি।" পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলে ১২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সমুদ্রবাঁধ সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাঁধ কী ভাবে সংস্কার করা হবে, সে জন্য বিশেষজ্ঞ দল প্রাথমিক রিপোর্টও জমা দিয়েছে সেচ দফতরে। দফতরের কাঁথি মহকুমা এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার উত্তমকুমার হাজরা বলেন, ‘‘বিশেষজ্ঞ দলের পরামর্শ মেনে আগামী সপ্তাহ থেকে সমুদ্র বাঁধের কাজ শুরু
করা হবে।’’