উঁচু হারে কর দেওয়া সত্ত্বেও গ্রাম্য শাসনব্যবস্থায় রয়েছে নিউ টাউন। —ফাইল চিত্র।
করের হার অন্য অনেক আধুনিক শহরের মতো। পুর পরিষেবা দেওয়ার জন্য আলাদা করে সরকারি সংস্থাও রয়েছে। তা সত্ত্বেও নিউ টাউন শহর আপাতত পঞ্চায়েত শাসনের অধীনেই যেতে চলেছে। কারণ, পঞ্চায়েত এলাকায় ঢুকে যাওয়া শহর নিউ টাউনকে পৃথক করার আগেই পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। এই নিয়েই সরব সেখানকার বাসিন্দারা। মঙ্গলবার সকাল থেকে সমাজমাধ্যমে এ নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। কেন তাঁরা উঁচু হারে কর দেওয়া সত্ত্বেও গ্রাম্য শাসনব্যবস্থায় থাকবেন, সেটাই সকলের প্রশ্ন।
শহর নিউ টাউনের পাশেই রয়েছে জ্যাংড়া-হাতিয়াড়া পঞ্চায়েত। এলাকা পুনর্বিন্যাসের কারণে ওই পঞ্চায়েতের অধীনে থাকা শহর নিউ টাউন আটটি আসন ও ১২টি বুথে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। কয়েক মাস আগে এই তথ্য জানাজানি হতেই নিউ টাউনের বাসিন্দাদের একটি সংগঠন পুর ও পঞ্চায়েত দফতর-সহ প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে স্মারকলিপি দিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল। পরবর্তী কালে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার দু’জনেই জানিয়েছিলেন, পঞ্চায়েত থেকে শহর নিউ টাউন আলাদা করে দেওয়া হবে। এমনকি তার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছিল বলে পঞ্চায়েত দফতর জানিয়েছিল। তা সত্ত্বেও পঞ্চায়েত ভোটের আগে শহর নিউ টাউনকে আলাদা করা গেল না।
বাসিন্দাদের একটি সংগঠন ‘নিউ টাউন ফোরাম ও নিউজ’-এর সম্পাদক সমরেশ দাস এ দিন বলেন, ‘‘ভোট একটা সাংবিধানিক ব্যবস্থা। সেটা বয়কটের কথা তো আমরা বলতে পারি না। তবে পঞ্চায়েতে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা আমাদের কোনও কাজে আসবেন না। কারণ তাঁরা যা যা করার, সেই সব পরিষেবাই আমরা এনকেডিএ থেকে পাই। বরং প্রচুর হারে কর দিয়েও এ বার গ্রামীণ শাসনের আওতায় থাকতে হবে ভেবেই বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ।’’ পঞ্চায়েত এলাকায় থাকলে বর্তমানের চড়া হারের কর কমবে কি না, তা নিয়েও এ দিন ফোরামের সমাজমাধ্যমে প্রশ্ন তোলেন বাসিন্দারা।
কিন্তু কেন নির্বাচনের অনেক আগে প্রক্রিয়া শুরু হলেও শহর নিউ টাউনকে পঞ্চায়েত ভোটের আওতা থেকে আলাদা করা গেল না, তা নিয়ে পঞ্চায়েত দফতরের শীর্ষ মহল কোনও মন্তব্য করতে চায়নি। যদিওপুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এ দিন বলেন, ‘‘আমরা চেয়েছিলাম নিউ টাউনকে আলাদা করতে। কিন্তু এই মুহূর্তে কিছু করতে গেলে পুরো পুনর্বিন্যাস ব্যবস্থাটা ঘেঁটে যাবে। পঞ্চায়েত ভোটের পরে নিউ টাউনকে পুরসভার অধীনস্থ করার পদ্ধতি শুরু হবে। তবে সেটা শেষ করতে এক-দু’বছর সময় লাগবে।’’
এ দিকে ভোট ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় শাসক-বিরোধী সব রাজনৈতিক দলই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। দেওয়াল লিখন থেকে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া, সবই শুরু হয়ে গিয়েছে। যদিও বিজেপি এবং সিপিএম— দুই দলের তরফে জানানো হয়েছে, শহর নিউ টাউনকে পঞ্চায়েত থেকে আলাদা করার দাবি নিয়েই তারা ভোটের প্রচারে নামবে।
সিপিএম নেতা সপ্তর্ষি দেবের কথায়, ‘‘ভোট একটা সাংবিধানিক প্রক্রিয়া। তাই আমরা অংশ নিচ্ছি। কিন্তু শহর নিউ টাউনের শাসনভার পঞ্চায়েতের হাতে থাকতে পারে না। নিউ টাউনকে পঞ্চায়েত থেকে আলাদা করার দাবি নিয়েই আমরা এখানে প্রচার করব।’’
অনেকটা একই সুর শোনা গিয়েছে বিজেপি নেতা ভাস্কর রায়ের গলায়। তিনি বলেন, ‘‘এটা শাসক দলের অভিসন্ধি। নিউ টাউনের মতো শহর কখনও পঞ্চায়েতের অধীনে থাকতে পারে না। আমরা এর বিরোধিতা করছি।’’