Communal harmony

ভোগের খিচুড়ি বিলিতে প্রদীপের সঙ্গে মকবুলেরা

জলপাইগুড়ি শহরের পাশ ছুঁয়ে বয়েছে তিস্তা নদী। তিস্তা বাঁধের পাশে বালাপাড়া এলাকায় প্রায় আটশো হিন্দু পরিবারের বাস। মুসলিম পরিবার প্রায় দু’শো। এলাকায় একটি মসজিদও রয়েছে।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:৫০
Share:

জলপাইগুড়ির তিস্তাপাড়ের পুজোয় মণ্ডপের তদারকিতে যুগ্ম সম্পাদক ফয়জুল ইসলাম। ছবি: সন্দীপ পাল

বয়সে তিরানব্বই ছুঁতে চলা এই পুজোয় বহু দিনের রীতি যুগ্ম সভাপতির। এক জন হিন্দু পাড়ার এবং এক জন মুসলিম পাড়ার। জলপাইগুড়ির বালাপাড়া সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটির এ বারের অন্যতম যুগ্ম সভাপতি ফয়জুল ইসলাম।

Advertisement

পুরসভার বর্জ্য অপসারণ দফতরের কর্মী ফয়জুল পুরসভায় যাওয়ার আগে, পুজোর মাঠে এলেন। মণ্ডপের প্রস্থ ঠিকঠাক আছে কি না দেখে রওনা হলেন। বাঁধের এক পাশে পুকুর। পুকুর পরিষ্কারের কাজ চলছে। মাছ ধরার ‘টিকিট’ বিক্রি হবে। পুজোর আগে, মাছ ধরার আসর বসবে। সে টাকা দিয়ে মুসলিম পরিবারগুলির ‘পুজোর বোনাস’ হবে। ফয়জুল বললেন, “মুসলিমদের কাজের জায়গা থেকে পুজোর বোনাস দেয় না। আমরা পুকুরের মাছ ধরে বোনাস দিই। এখানে পুজোর সময় সব মুসলিম পরিবার নতুন পোশাক কেনে। পুজোর কেনা পোশাক আমাদের পরবেও পরি।”

জলপাইগুড়ি শহরের পাশ ছুঁয়ে বয়েছে তিস্তা নদী। তিস্তা বাঁধের পাশে বালাপাড়া এলাকায় প্রায় আটশো হিন্দু পরিবারের বাস। মুসলিম পরিবার প্রায় দু’শো। এলাকায় একটি মসজিদও রয়েছে। মসজিদের ইমাম বাবুল মহম্মদ নিজে প্রতি বার পুজোয় চাঁদা দেন। বললেন, “ইসলাম ধর্মে কোথাও বলা নেই যে পুজোয় শামিল হওয়া যাবে না। বরং, বলা আছে. সব ধর্মই সমান।“ ইমামের সংযোজন, “পুজো আসবে ভেবে আমাদেরও বেশ কিছুদিন আনন্দে যায়। দশমীর পরে ফাঁকা মণ্ডপ দেখে আমার বুকটা খুব খালি লাগে।”

Advertisement

ষষ্ঠীর বিকেলে ঠাকুর আনতে যাওয়ার আগে, বালাপাড়ার পুজো মণ্ডপে সকলে জড়ো হন। মুসলিম পাড়া থেকে লোকেরা না পৌঁছনো পর্যন্ত কুমোরপাড়ার দিকে শোভাযাত্রা এগোয় না। পুজোর প্রতিদিন প্রসাদের খিচুড়ি বিলি করতে পুজো কমিটির সদস্য মুন্না, প্রদীপ তন্ত্রের সঙ্গে হাত লাগান মকবুল ইসলামেরাও। প্রদীপ বলেন, ‘‘প্রতি বার আমাদের মুসলিম পড়শিরা পুজোতে পাঁচ রকম ফল, সন্দেশ পাঠান।” মইনুল মহম্মদ বলেন, “ছোট থেকে দেখছি, আমাদের বাড়ি থেকে ফল, সন্দেশ পুজোতে যায়। আমরাও পাঠাই। আমার ছোট ছেলে আয়ুষ ধুনুচি ধরে আরতিও করে।” পুজোর আগে, আজিনারা খাতুন, ফরিদা খাতুনদের নতুন শাড়ি হয়। তোফাজল মহম্মদ বলেন, “স্ত্রী পুজোর বাজারের তাগাদা দিচ্ছে। মণ্ডপের বাঁশ বাঁধা শুরু হয়ে গেল। বলছি, বোনাস পেলে বাজার করব। শুনছে না।”

পুজো কমিটির যুগ্ম সভাপতি অসীম রায় বললেন, “বাবা-ঠাকুরদার আমল থেকে মুসলিমপাড়ার সকলকে নিয়েই পুজো হয়। এখানে বিভেদ বলে কিছু নেই।’’ মাথা নাড়েন আর এক যুগ্ম সভাপতি ফয়জুল ইসলাম।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement