বাঘরোলের হেঁটে যাওয়ার ছবি।
সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে মেছোবিড়াল বা বাঘরোলের হেঁটে যাওয়ার ছবি। কিন্তু ‘বাঘ’ বেরনোর গুজবে সোমবার আতঙ্ক ছড়াল কোন্নগরের বাঁশাই কলোনির বিস্তীর্ণ এলাকায়। লাঠিসোটা হাতে ভিড় জমে। আসে পুলিশ।
বন দফতরের কর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে পায়ের ছাপ দেখে সেটি একটি পূর্ণবয়স্ক বাঘরোলের বলেই জানান। আতঙ্ক বা গুজব যাতে না-ছড়ায়, সে জন্য মাইকে প্রচারও করা হয়। প্রাণীটির যাতে ক্ষতি করা না হয়, সে ব্যাপারেও সতর্ক করা হয় সকলকে। খাঁচা পেতে বাঘরোলটিকে ধরে বে-ঘর করতে চায়নি বন দফতর। বাঁশাই কলোনি এলাকাটি বাঁশঝাড়, বড় বড় পুকুর আর উলুবনে ঘেরা। ঝোপ-জঙ্গলও রয়েছে। রয়েছে কিছু চাষজমিও। এমন এলাকা বাঘরোলের থাকার আদর্শ জায়গা বলে জানান হাওড়া-হুগলির অতিরিক্ত বনপাল শ্রীকান্ত ঘোষ। বললেন, ‘‘জনবসতি থাকায় ওরা মাঝেমধ্যে চলে আসে।’’ বন দফতরের হুগলি বিভাগের পদস্থ কর্তা রবীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পাঁচ-ছ’সেন্টিমিটার পায়ের ছাপ পেয়েছি, তাতে বাঘরোলটি অন্তত আড়াই ফুট লম্বা বলে মনে হচ্ছে। আতঙ্কের কিছু নেই।’’ বাঘ বিশেষজ্ঞ জয়দীপ কুণ্ডু ওই ছবি দেখে হাসছেন। বলছেন, ‘‘এ এক গভীর চক্রান্ত। যেখানে-সেখানে বাঘ বেরিয়েছে বলে প্রচার করে রাজ্য প্রাণী বাঘরোলকে পিটিয়ে মারা হচ্ছে ক্রমাগত।’’
সূত্রের খবর, বাঁশাই কলোনির রায় পাড়ার বাসিন্দা কর্ণ সাঁপুইয়ের একটি রট আয়রনের আসবাব কারখানা রয়েছে। নিরাপত্তার কারণে তিনি রাস্তার দিকে ২০ ফুট উঁচুতে সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছেন। প্রতিদিন তিনি ফুটেজ খতিয়ে দেখেন। রবিবার সেই ফুটেজ দেখেই তিনি উত্তরপাড়া থানায় জানান। পুলিশ বন দফতরকে খবর দেয়। সোমবার পুলিশ বা বন দফতরের লোক আসার আগেই বাঘের গুজব রটে। ভিড় জমতে থাকে বাঁশাই কলোনিতে।
আরও পড়ুন: নাম ছাড়াই আমন্ত্রণপত্র, সমাবর্তন কি ধনখড়-হীন
গ্রামবাসীদের সচেতন করতে প্রচার চলবে বলে জানায় বন দফতর। কেউ যাতে প্রাণীটিকে না-মারেন সে ব্যাপারে পুলিশও প্রচার চালাবে, জানান চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর। রায় পাড়ার বাসিন্দা, সংশ্লিষ্ট কানাইপুর পঞ্চায়েতের সদস্য শুভজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওর যাতে ক্ষতি না হয়, আমরা সতর্ক আছি।’’
এই ফুটেজ ঘিরেই শুরু হয়েছে আতঙ্ক।
এক সপ্তাহ নদিয়ার শান্তিপুরের চটকাতলা গ্রাম ও তার আশপাশের এলাকাও সরগরম এক ‘অজানা জন্তু’ নিয়ে। কেউ বলছেন বাঘরোল, কেউ মেছোবেড়াল, কেউ বা বাঘ! যদিও সেই প্রাণীর দেখা মেলেনি। অনেকেরই দাবি, তাঁরা ডাক শুনেছেন বা পায়ের ছাপ দেখেছেন। এলাকায় ঘুরে গিয়েছেন বনকর্মীরাও। কিন্তু রহস্য উদ্ঘাটিত হয়নি। এ দিন ফুলিয়াপাড়া এলাকায় একটি বাড়ির উঠোনে এক জন্তুর পায়ের অস্পষ্ট ছাপ দেখা গিয়েছে বলে দাবি করেন বাসিন্দারা।