ধাড়াপাড়ায় তাপস পালের আদিবাড়ির দরজায় পোস্টার।
নিজেকে ‘চন্দননগরের মাল’ বলে তিনি ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছেন, মঙ্গলবার তাপস পালকে হাতের কাছে পেলেই জানতে চাইতেন অনেক চন্দননগরবাসী। তৃণমূল সাংসদকে নানা সূত্রে চেনা মানুষেরা যেমন ভিড়ে রয়েছেন, রয়েছেন অপরিচিতেরাও। শহরের প্রাতর্ভ্রমণকারী থেকে ডাক্তার, কলেজের ‘সিনিয়র’ ক্ষোভ চেপে রাখেননি দাদার এই ‘কীর্তিতে’। শহরের ধাড়াপাড়ায় ‘পালবাড়ি’র রং চটে যাওয়া লোহার গেটে এ দিন সকালে বিজেপি-র পোস্টার পড়ে, ‘চন্দননগরবাসীর লজ্জা তাপস পাল’।
বাড়িটা তাপস পালের পৈতৃক ভিটে। নদিয়ার নাকাশিপাড়ার চৌমুহা গ্রামে কৃষ্ণনগরের এই সাংসদ নিজেকে ‘চন্দননগরের মাল’ বলার পাশাপাশি বিরোধীদের ‘রেপ করিয়ে’ দেওয়ার হুমকি দেওয়ায় তুমুল শোরগোল পড়েছে রাজ্য-রাজনীতিতে। চোখের সামনে বড় হয়ে ওঠা তাপসের এই ‘পরিবর্তন’ মানতে পারছে না ধাড়াপাড়া। সেখানকার বাসিন্দা, বেসরকারি সংস্থার কর্মী তন্ময় পালের কথায়, “ছোটবেলা থেকে তাপস ডানপিটে ছিল। গুন্ডা নয়। এটা কি মস্তানদের শহর না কি! চন্দননগরের মাল বলে ও কী বোঝালো!” আর এক পড়শি সঞ্জয় মালাকারের আক্ষেপ, “শহরের ঐতিহ্য নষ্ট হল!” তাপসের ছোটবোন পাপিয়াও বিস্মিত, “যে দাদাকে চিনতাম, সেই দাদার সঙ্গে এই লোকটার কথার কোনও মিল নেই। এটা ও কী বলল!”
তাপসের বাবা চিকিৎসক গজেন্দ্রচন্দ্র পাল বছর দশেক আগে মারা যান। তার পরেই সম্পত্তি নিয়ে তাপসের সঙ্গে বিবাদ বাধে তাঁর তিন বোন এবং মায়ের। তাপসের মা মীরাদেবী মারা যান বছর চারেক আগে। ছোট বোন, পেশায় আইনজীবী পাপিয়া থাকেন চন্দননগরের বড়বাজার এলাকায়। দাদার মন্তব্য সামনে আসায় তিনি ফোনে ফোনে জেরবার হচ্ছেন। এ দিন বলেই দিলেন, “দাদা রেপ করিয়ে দেওয়ার কথা বলেছে। লোকে সে সব শুনে নানা কথা বলছে।”
তাপস যে ভাবে নিজেকে ‘চন্দনননগরের মাল’ বলেছেন তাতে বিস্মিত শহরের বিশিষ্টজনেরা। বড়বাজার এলাকার বাসিন্দা, পরিবেশ-বন্ধু বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় মনে করেন, “ঐতিহাসিক এই শহরের মানুষ হয়েও তাপস যা বলেছে, তা শহরের অপমান। কুরুচিকর।” প্রৌঢ় শুভ্রাংশু রায় এক সময়ে হুগলির মহসিন কলেজে পড়তেন। ওই কলেজেই তাঁর চেয়ে দু’বছরের ‘জুনিয়র’ ছিলেন তাপস। শুভ্রাংশুবাবুর প্রশ্ন, “চন্দননগরের মাল বলে এ শহরকেই কি তাপস ছোট করল না? এ শহর কানাইলাল, রাসবিহারী, রবীন্দ্রনাথ, বিদ্যাসাগরের স্মৃতিধন্য। এর পরে কীবাইরে গিয়ে শহরের নাম বললে কেউ যদি কথা শোনায়?” শহরের বিশিষ্ট চিকিৎসক অমিয়কুমার পালের ক্ষোভ, “মাল শব্দের সঙ্গে চন্দননগরকে জড়ানোই বা কেন? শহরের নামকে কলুষিত করলেন তাপস।”
বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ তাপসের মন্তব্যের প্রতিবাদে শহরের স্ট্র্যান্ড থেকে ধিক্কার-মিছিল করে বিজেপি। গঞ্জের বাজার, পাদ্রিপাড়া-সহ এলাকা ঘুরে মিছিল যায় তাপসের বাড়ি পর্যন্ত। পরে থানায় গিয়ে চন্দননগরবাসীকে ‘হেয়’ করার জন্য তাপসকে গ্রেফতারের দাবিতে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। সন্ধ্যায় সিপিএম প্রতিবাদ-সভা করে বাগবাজারে।
চন্দননগরের মেয়র রাম চক্রবর্তী তৃণমূলেরই লোক। তিনিও বলেন, “এক জন প্রথিতযশা অভিনেতা-সাংসদের ওই মন্তব্য চন্দননগরবাসীর কাছে খুবই অসম্মানজনক এবং বেদনাদায়ক। শহরের শিক্ষা-সংস্কৃতির সঙ্গে এই ধরনের মন্তব্যের কোনও মিল নেই। এ শহরের লোক হিসেবেই তাপসের মন্তব্যের প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”