দূরত্ববিধি শিকেয়। শুক্রবার বসিরহাটে। নিজস্ব চিত্র
ঘরের ভিতরে বৈঠকে হোক বা বায়ুসেনার হেলিকপ্টারে, ‘দূরত্ব’ বজায় রেখেই বসলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীকে দেখতে রাস্তায় বসিরহাটবাসীর ভিড়ে করোনা মোকাবিলার আবশ্যিক দূরত্ববিধির লেশমাত্র চোখে পড়ল না! পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশকর্তারা ‘বিধিটুকু’ মেনে চলতে বলেছিলেন বটে। কিন্তু তাতে আগত ভিড় কর্ণপাত করেনি।
ভিড় সামলাতে আসা এক পুলিশকর্মী গজগজ করতে করতে বলছিলেন, ‘‘মাস্কটুকুই যা পরেছে। কিন্তু তাতে কী হবে? কাছেই কোয়রান্টিন কেন্দ্র। তার পরেও এমন ভিড়!’’ প্রশাসন সূত্রে খবর, একদা কোভিড-১৯ শূন্য বসিরহাট মহকুমাতেও করোনা থাবা বসিয়েছে। কয়েক জন আক্রান্ত হয়েছেন। কন্টেনমেন্ট জ়োন রয়েছে।
কিন্তু সে কথায় কেউ কান দিলে তো! কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে হাতে স্যানিটাইজ়ার ঘষতে ঘষতে বাসন্তী বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক বাসিন্দার দাবি, ‘‘এই তো স্যানিটাইজ়ার হাতে দিচ্ছি। কিছুই হবে না। বাড়ি গিয়েই স্নান করে নেব। কিন্তু বারবার তো প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী আর রাজ্যপাল একসঙ্গে আসবেন না। সেটা বুঝুন!’’ আরও কিছুটা গলা চড়িয়ে শ্যামল মণ্ডল নামে এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রীকে কি করোনাভাইরাসের ভয়ে দেখা যাবে না। মুখে তো মাস্ক রয়েছে। অসুবিধা হবে না।’’
ভিড় সরাতে দড়ি দিয়ে বসিরহাটের বাসিন্দাদের রাস্তা থেকে হাত খানেক দূরত্বে সরিয়ে রেখেছিল পুলিশ-প্রশাসন। জনতার চোখ থেকে বৈঠকস্থল বসিরহাট কলেজ গেটের মুখ আড়াল করতে সংকীর্ণ টাকি রোডের উপরে সার দিয়ে দাঁড়িয়েছিল পুলিশ-প্রশাসনের গাড়ি। আশা ছিল, এমন বাধা পেয়ে ঘরমুখো হবে জনতা। তাতে ঘুরপথে দূরত্ববিধি মান্য করা হবে। কিন্তু এ সব বাধা পাত্তাই দেয়নি জনতা। উল্টে ভিড় সামলাতে গিয়ে গাদাগাদি করতে হয়েছে পুলিশের একাংশকেও! রাস্তা ছেড়ে আশপাশের দোকান-বাড়ির ছাদেও উঠে পড়েছিলেন অনেকে।
আরও পড়ুন: আশ্রয়হীন, বিধ্বস্ত... আমপানের ধাক্কায় থমকে গিয়েছে জীবন
এমন সময়েই ভিড়ের মধ্যে কারা যেন সাদা কাগজে লাল, কালো কালিতে ‘নো-এনআরসি’, ‘নো সিএবি’ পোস্টার নিয়ে হাজির। সে সব দেখে তড়িঘড়ি পোস্টার সরিয়ে ফেলে পুলিশ (তার আগে কলেজ গেটেও কালো কালিতে লেখা পোস্টার পড়ে, তা সরিয়ে ফেলেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্তেরা)। পোস্টার কেন সরিয়ে ফেলা হল, তা নিয়ে অসন্তোষ দানা বাধতে না-বাধতেই আকাশে দেখা গেল একটি কপ্টার। তা দেখে হইহই করে উঠল জনতা। কপ্টার মাটি ছুঁতেই হুল্লোড় আরও বেড়ে গেল। কপ্টারের দরজা খুলতেই নেমে এলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ
এবং প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অফিসারেরা। দ্বিতীয় কপ্টার দেখেও হুল্লোড়। কিন্তু তা নামল কলেজের পিছনে! এ বার তৃতীয় কপ্টারের পালা। অনেক আশা নিয়ে আকাশমুখো জনতা। যদি দেখা মেলে। কপ্টার মাটি ছোঁয়ার পরে দরজা খুলল। নেমে এলেন দুই কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, দেবশ্রী চৌধুরী-সহ এসপিজি এবং প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের কয়েক জন অফিসার!
মোদী-মমতা এবং রাজ্যপাল কোথায়, তা নিয়ে গুঞ্জন, চাপা হতাশা। এমন সময় জানা গেল, কলেজের পিছনে নামা কপ্টারেই ছিলেন প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রী-রাজ্যপাল।
তাতেও অবশ্য ভিড় কমেনি। ফিরতি পথের উদ্দেশে কপ্টার না-ওড়া পর্যন্ত ‘বৃথা’ আশা নিয়েই রোদে পুড়ে কয়েক ঘণ্টা ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন অনেকে।