Ram Mandir Inauguration

রাম-দিনে প্রদীপ জ্বালাবেন আমানত, ফ্রান্সিস-রাজীবও

রাজনৈতিক শিবিরের বড় অংশের মতে, রামমন্দির উদ্বোধনকে কাজে লাগিয়ে দেশ জুড়ে হিন্দুত্বের আবেগ তুলতে চাইছে বিজেপি।

Advertisement

বিপ্রর্ষি চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:১০
Share:

অযোধ্যার রামমন্দির। —ফাইল চিত্র।

Advertisement

তাঁদের ধর্ম আলাদা, উপাসনা পদ্ধতিও আলাদা। কিন্তু আগামী ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমন্দির প্রতিষ্ঠার দিনে নিজেদের মহল্লায় আলো জ্বালাবেন আমানত আলি, সি এম ফ্রান্সিসেরা। বিজেপির সঙ্গেই তাঁদের সংস্রব। তবে তাঁদের বক্তব্য, সংখ্যালঘু হয়েও রামের জন্য তাঁদের এই আবেগ আসলে দেশকে ভালোবেসেই।

রাজনৈতিক শিবিরের বড় অংশের মতে, রামমন্দির উদ্বোধনকে কাজে লাগিয়ে দেশ জুড়ে হিন্দুত্বের আবেগ তুলতে চাইছে বিজেপি। যা তাদের সুবিধা করে দিতে পারে লোকসভা নির্বাচনে। তবে বিজেপি নেতারা বারবার দাবি করে এসেছেন, রাম সবার। তাই সকলের কাছেই পৌঁছে যাবে রামমন্দির দর্শনের আমন্ত্রণপত্র। সেই সূত্রেই বিজেপির সঙ্গে যুক্ত থাকা সংখ্যালঘুরা জাতীয়তাবাদের পক্ষে দাঁড়িয়েই এই কর্মকাণ্ডের অংশ হতে চাইছেন। আর বিরোধীদের তোলা হিন্দুত্বের রাজনীতির অভিযোগের জবাবে সংখ্যালঘু মুখেদের ঢাল করছে গেরুয়া শিবিরও।

Advertisement

রামমন্দির উদ্বোধনের আগে স্বচ্ছতা অভিযানে শামিল হয়েছেন কোচবিহারের মেখলিগঞ্জের আলি হোসেন। রামমন্দির উদ্বোধনের দিন নিজের ঘরে তেলের প্রদীপ জ্বালাবেন তিনি। পাড়ার সকলকে একই কাজ করার জন্য আবেদনও করেছেন তিনি। তাঁর দাবি, “রাম শুধু সনাতন ধর্মের দেবতা নন। তিনি গোটা বিশ্বের সুশাসনের প্রতীক। আজ থেকে পাঁচ হাজার বছরেরও বেশি সময় আগে অযোধ্যায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রামচন্দ্র। সেই সুশাসনের ছায়া আমরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সময়ে দেখতে পাচ্ছি। আমরা চাই, দেশে এই সুশাসন দীর্ঘস্থায়ী হোক।”

জৈন ধর্মাবলম্বীদেরও কারও কারও রাম মন্দির উদ্বোধন নিয়ে উৎসাহ রয়েছে। কোলাঘাটের রাজীব জৈন জানান, উদ্বোধনের দিন তিনি নিকটবর্তী জৈন মন্দিরে রামলালার নামে বিশেষ প্রার্থনা করবেন। তাঁর দাবি, ‘‘মহাবীরের জন্মের আগে রামলালার জন্ম। তাই রামলালার স্বীকৃতিও মহাবীরের আগে।” তিনি আরও জানান, ওই দিন বাড়িতে যজ্ঞ করবেন তিনি। পাড়ায় রামলালার প্রসাদ হিসেবে পায়েস বিলি করার পরিকল্পনাও রয়েছে।

কলকাতার নেতাজি নগরের সি এম ফ্রান্সিস ধর্মে খ্রিস্টান হলেও রামমন্দির উদ্বোধনের অনুষ্ঠান নিয়ে চূড়ান্ত ব্যস্ত। তাঁর উদ্যোগে এলাকায় বড় এলইডি পর্দা বসতে চলেছে। ওই দিনের যাবতীয় অনুষ্ঠান ওই পর্দায় এলাকাবাসী দেখতে পাবেন। রামের মূর্তি এনে পুজো-পাঠের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। কিন্তু রাম নিয়ে তাঁর এই উন্মাদনার কারণ কী? ফ্রান্সিসের উত্তর, “সব ধর্মের আরাধ্য দেবতা সমান। আমরা ছোটবেলা থেকে জেনে এসেছি ওই নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে রামলালা জন্মেছিলেন। কিন্তু ওখানে পরবর্তী কালে মসজিদ তৈরি হয়। ধর্ম বলে, যার জমি, তারই প্রাপ্য হওয়া উচিত।’’

সিঙ্গুরে থাকেন আমানত আলি। ব্যবসায়িক সূত্রে মাসে বেশ কয়েক বার তাঁকে দিল্লি যেতে হয়। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে সেখান থেকেই তাঁর রাম মন্দির দর্শনে যাওয়ার কথা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমার ধর্ম আমায় শিখিয়েছে দেশ সবার আগে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এই মন্দির নির্মাণ হচ্ছে। তাই এই নির্মাণের শরিক আমিও।” তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী অনুরোধ করেছেন ওই দিন অকাল দীপাবলি পালন করতে। সেই কথা মেনে তিনি তাঁর ঘর আলোর মালায় সাজাবেন।

তবে শুধুই জেলায় নয়, কলকাতাতেও উদ্বোধনের দিন ঘিরে উন্মাদনার পারদ চড়তে শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় ভাবে বুধবারই রাজ্য বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চা দক্ষিণ কলকাতায় সাধারণ মানুষের মধ্যে মাটির প্রদীপ বিলি করেছে। কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন মোর্চার রাজ্য সভাপতি চার্লস নন্দী। কলকাতার রামমন্দিরেও ২২ তারিখ বিশেষ পূজার্চনার আয়োজন করা হয়েছে। সকাল থেকে সেখানে ভজন হওয়ার কথা। কলকাতার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তেরা শোভাযাত্রা সহকারে রামমন্দিরে এসে মিলিত হবেন। থাকার কথা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর। সংগঠকেরা জানিয়েছেন, ভারতের বিভিন্ন মন্দিরে রাম পূজিত হলেও রামের নামে মন্দির মাত্র চারটি। যার মধ্যে কলকাতার রাম মন্দির অন্যতম প্রাচীন মন্দির।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement