শাসক দলের কাউন্সিলরকে গ্রেফতার হতে দেখছি আমরা। আমরা দেখছি, সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বাড়লে মধ্যরাতেও ধরপাকড়ে নামছে পুলিশ। রাজ্য সরকারি দফতরকে কর্মমুখী করতে নবান্ন থেকে কঠোর নির্দেশিকাও জারি হতে দেখছি।
ইতিবাচক, সংশয় নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্যমন্ত্রিত্বের প্রথম পাঁচটি বছর যে ছন্দে কেটেছে, তার প্রেক্ষিতে এই নতুন প্রবণতা দৃশ্যতই ইতিবাচক। দুর্নীতি, ঘুষ কাণ্ড, স্বজনপোষণ, প্রশাসনের দলদাসত্ব, প্রশাসকের অন্ধত্ব— কয়েক মাস আগের বিধানসভা নির্বাচনটাও হয়েছে এমন অসংখ্য নেতির পটভূমিকায়। আইন-আদালত সে প্রসঙ্গে যে রায়ই দিক না কেন, পশ্চিমবঙ্গের জনগণ নিজেদের মতো করে একটা রায় দিয়ে দিয়েছেন। সেই রায়ে ভর করে শাসনকালের দ্বিতীয় পর্বে উপনীত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং দ্বিতীয় সুযোগটি পেলেন বলেই যেন অনেক বেশি সর্তক তিনি এ বার, এ যাবৎ নেওয়া প্রতিটি পদক্ষেপ অনেক বেশি সচেতন, রাজনৈতিক ভাবে অনেক বেশি বিচক্ষণ আগের চেয়ে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই দ্বিতীয় ইনিংস বেশ কয়েকটি প্রেক্ষিতেই এক নতুন ইনিংস। ক্রিকেটীয় পরিভাষাতেই যদি ব্যাখ্যা করা যায়, তা হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন সেই ব্যাটসম্যান, স্কোর বোর্ডে যাঁর দল ইতিমধ্যে বান ডাকিয়েছে এবং যিনি নিজে এই বিপুল স্কোরের কারিগর। টিমের অবস্থা এতটাই স্থিতিশীল যে ব্যক্তিগত স্কোরটা দ্রুত বাড়ানোর লক্ষ্যে স্টেপ আউট করার ঝুঁকি তিনি নিতেই পারেন এখন। অত্যন্ত বিচক্ষণ ভঙ্গিমায় তাই তিনি স্টেপ আউটও করেছেন। তার ফলশ্রুতি হল অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, অনন্ত রায়দের মতো কাউন্সিলরের গ্রেফতারি, সিন্ডিকেট নেতা-নেত্রীদের মধ্য ত্রাসের সঞ্চার ঘটিয়ে দেওয়া, সরকারি দফতরে কর্মসংস্কৃতি পুনরুদ্ধারের জন্য সরাসরি হাজিরা খাতায় লাল কালির জুজু দেখিয়ে দেওয়া।
এমন এক সন্ধিক্ষণে হাজির হল একুশে জুলাই। আগেও বহু বার এসেছে এই দিনটা। কিন্তু এ বার প্রেক্ষিতটা ভিন্ন অনেকটাই। নির্বাচনের আগে বিপুল ঝড়ের মুখে ফেলে দিয়েছিল যে মারাত্মক ভ্রান্তিগুলো, নির্বাচন উত্তর পরিস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সে সব কাটিয়ে উঠতে বেশ কিছুটা সচেষ্ট যেন। নিজের প্রশাসক ভাবমূর্তি তুলে ধরতেও বেশ কিছুটা আগ্রহী। দল এবং সরকারেও সেই বার্তাটা বোধহয় চারিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন কিছুটা। একুশের মঞ্চ কি আজ তা হলে নতুন কোনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখবে? সচেতন ও সতর্ক ভাবেই তিনি যে প্রশাসক হয়ে উঠতে চাইছেন, সমর্থক-অনুগামীদের জমায়েতে কি আরও দৃঢ় ভঙ্গিমায় সেই বার্তাটাই উচ্চারণ করবেন মমতা বন্দ্যাপাধ্যায়? জানার জন্য আজ গোটা রাজ্যের চোখই ধর্মতলার দিকে থাকছে।
‘একুশ মানে স্বপ্ন, একুশ মানে ছাত্র, একুশ মানে যৌবন...’, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে অন্তত এ ভাবেই শ্লোগান তুলে এসেছেন এ যাবৎ। একুশের এই সমাবেশ কি সত্যিই সেই স্বপ্নের বাস্তবায়নের কোনও অভাস দিতে পারবে আজ? কর্মসংকোচনের এই বাংলায় কোনও ছাত্রকে কি একুশের সমাবেশ থেকে সত্যিই নতুন কোনও স্বপ্ন দেখাতে পারবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? শিল্পের খরায় ক্লিষ্ট বাংলার যৌবন কি রাজনৈতিক মঞ্চে সমাগত প্রশাসকের কাছ থেকে নতুন কোনও স্বপ্নের দিশা পাবে? উত্তরের প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছে গোটা বাংলা।